শীতের আগমনে কৃষিনির্ভর মেহেরপুরের গাংনীতে স্বস্তি ফিরেছে সবজির বাজারে। ১০ দিনের ব্যবধানে শিম, বেগুন, করলা, মুলা ও পালংশাকের মতো অনেক সবজির দাম নেমে এসেছে অর্ধেকে। শুধু এগুলো নয়, অধিকাংশ সবজির দামই কেজিতে কমেছে ১০ থেকে ১৫ টাকা করে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, হঠাৎ করে বাজারে সবজি আমদানি বেশি হওয়ায় কমেছে সবজির দাম।
এদিকে চাষিরা বলছেন, শীতের প্রভাবে সবজির উৎপাদন বেড়ে গেছে, তাছাড়া হরতাল-অবরোধের কারণে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সবজি পাঠাতে না পারায় কম দামে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে।
গাংনী উপজেলায় এক হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২০ হেক্টর ফুলকপি ও ৭৫ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি, ৭৫ হেক্টর জমিতে বেগুন, ৪৫ হেক্টর জমিতে করলাসহ অন্যান্য সবজির চাষ করা হয়েছে। মাটি ও আবহাওয়া সবজি চাষের উপযুক্ত হওয়ায় এখানকার চাষিরা অন্যান্য ফসলের পরিবর্তে সবজি চাষ করেন। প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক সবজি এখান থেকে বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করেন চাষিরা। ক্ষেত থেকে সরাসরি ট্রাকে করে পাঠান চাষিরা। আর স্থানীয়ভাবেও ফড়িয়াদের মাধ্যমে আড়তে বিক্রি হয় সবজি।
এলাকার ঐতিহ্যবাহী বামন্দী বাজার ও গাংনী বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী, চাষি ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১০ দিনের সবজির দাম কমে অর্ধেকে এসেছে। ১০ দিন আগে যেখানে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৬০ টাকায়, শুক্রবার তা ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় নেমেছে। বেগুন ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, আজ তা ১৫ থেকে ২০ টাকা; পটোল ছিল ৫০ টাকা, আজ তা চলছে ১৫ থেকে ২০ টাকা; মুলা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, আজ তা ১৫ থেকে ২০ টাকা; পালংশাক ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, আজ তা ২০ টাকা এবং প্রতি কেজি লালশাক বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা করে, আজ তা চলছে ১৮ টাকা করে।
সবজি বিক্রেতা তাইজুল ইসলাম জানান, গত সপ্তাহে চাষিদের কাছ থেকে ৪০ টাকায় বেগুন কিনে ৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। শুক্রবার সেই বেগুন ১৫ টাকায় কিনে ২০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। ক্রেতাদের চাহিদাও অনেক বেশি।’
সবজি বিক্রতা আরিফুল জানান, ‘বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে ২০ থেকে ১৫ টাকা কম। বাজারে আজ প্রচুর সবজির আমদানি হয়েছে। ফলে দাম কমে গেছে। বাজারে মূলত সবজির দাম ওঠা-নামা করে উৎপাদন ও সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে।
সবজি ক্রেতা হাড়াভাঙ্গার জুরাইস ইসলাম জানান, ১০ দিন আগে এক কেজি শিমের দাম ছিল ২০০ টাকা। গত সপ্তাহে তার দাম ৫০ টাকা আর এখন ৫০ টাকা কেজি। শুধু শিম নয়, সব ধরনের সবজির দামই কমেছে। একই কথা জানালেন মালসাদহের সবজি ক্রেতা বকুল ও আলিম। তারা জানান, বেগুন, শিম, মুলা, পটোল, বাঁধাকপিসহ আরও কয়েকটি সবজি এখন ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে। বেশ স্বস্তিতে এখন ক্রেতারা।
বেগুনচাষি সাহারবাটির মধু জানান, শুক্রবার বেগুন পাইকারি বিক্রি করা হয়েছে ১২ থেকে ১৫ টাকা করে। আজ শনিবার সেই বেগুন ১০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। বতর্মানে সার, কীটনাশক, শ্রমিকসহ সব জিনিসের দাম বেশি। এখন সবজি চাষে আগের থেকে খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। এভাবে চলতে থাকলে লোকসান গুনতে হবে।
আরেক সবজিচাষি একরামুল জানান, ১০ দিন আগেও সবজির দাম বেশ ভালো ছিল। অথচ এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। বাজারে আড়তদাররা সবজির দাম কম বলছে। অথচ ঢাকার পার্টি বাজারে এলে এর দাম বেশি হবে। হরতাল ও অবরোধের কারণে বাইরের ব্যবসায়ীরা না আসায় এমনটি ঘটেছে। এতে যারা বর্গা, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি তারা মোটা টাকা লোকসান গুনবেন।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে বেশি সবজি চাষ হয়েছে। উৎপাদনও ভালো। তাই সবজির বাজারে ক্রেতাদের স্বস্তি ফিরেছে। একই সময়ে একই সবজি বেশি চাষ হওয়ায় দাম কিছুটা কমে। তবে জেলার বাইরে থেকে ব্যবসায়ী সবজি কিনতে এলে স্থানীয় বাজারে কিছুটা সবজির দাম বাড়লেও চাষিরা লোকসানের হাত থেকে বাঁচত।