গাছের পাতা ও ফল খাওয়া রক্ষা করতে ফল আর্মিওয়ার্ম পোকা দমন করবেন যেভাবে

1634

ফল আর্মিওয়ার্ম (Fall Armyworm ) এর জীবনচক্র, ক্ষতির লক্ষণ ও প্রতিকারঃ

ফল আর্মিওয়ার্ম ( Fall Armyworm ) হলো Lepidoptera order এর কাটুই পোকা যার বৈজ্ঞানিক নাম Spodoptera frugiperda । এটি মূলত আমেরিকা মহাদেশের অত্যন্ত ক্ষতিকর একটি পোকা। আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ২০১৬ সালে প্রথম এই পোকাটি আক্রমণ শুরু করে। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে এই পোকাটির আক্রমণ বেশ কয়েকটি দেশে দেখা যায়। সম্প্রতি ভারতের কর্নাটক এবং তামিলনাড়ু রাজ্যে এই পোকার আক্রমণ দেখা গিয়েছে যা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ছড়িয়ে পরছে। সর্ব শেষ তথ্য মতে, এ ক্ষতিকর পোকাটির আক্রমণ বাংলাদেশের বগুরা জেলার শেরপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের গোপাল্পুর গ্রামে প্রথম এই ক্ষতিকর পোকাটি পরিলক্ষিত হয়েছে। ভুট্টা, আলু, ধান, গম, তুলা, বাদাম, তামাক, বিভিন্ন ধরনের ফলসহ প্রায় ৮০ টি ফসলে এই পোকার আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়। তবে ভুট্টা ফসলে এর আক্রমণ সর্বাধিক।

পোকা চেনার উপায়ঃ
দেহের উপরিভাগে দুই পাশে লম্বালম্বিভাবে গাঢ় রঙের দাগ রয়েছে।
মাথায় উল্টা Y অক্ষরের মধ্যে জালের মতো দাগ রয়েছে।
পোকাটির পৃষ্ঠ দেশের ৮ম খণ্ডে ৪ টি কালো দাগ রয়েছে।

ফল আর্মিওয়ার্মের জীবনচক্রঃ
পোকাটি ৪ টি ধাপে জীবনচক্র সম্পন্ন করে থাকে। যথাঃ ডিম, কীড়া, পুত্তলি ( পিউপা ) এবং পূর্নাঙ্গ পোকা।
এই পোকাটি শীতকালে ৭০-৮০ দিনে এবং গ্রীষ্মকালে ৩০-৩৫ দিনে জীবনচক্র সম্পন্ন করে থাকে।
জীবনচক্রের মধ্যে ডিম ( ৩-৫ ), কীড়া (১৪-২৮ ), পিউপা ( ৭-১৪ ) এবং পূর্নাঙ্গ অবস্থায় (১১-১৪ ) দিন অতিবাহিত করে থাকে।
স্ত্রী পোকা সাধারণত পাতার নিচে ডিম পাড়ে। পরবর্তীতে ডিম ফুটে কীড়া বের হয়ে পাতা বা ফল খাওয়া শুরু করে।

ক্ষতির লক্ষণঃ
পোকাটি কীড়া অবস্থায় গাছের পাতা ও ফল খেয়ে থাকে।
কীড়া অবস্থায় পোকাটির খাদ্য চাহিদা কম থাকে। তবে পোকাটির জীবনচক্রের শেষ ধাপসমূহে খাদ্য চাহিদা ৫০ গুণ বৃদ্ধি পায়।
পূর্নাঙ্গ পোকা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। ভুট্টা, আলু বা অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে এ পোকাটি প্রায় ২০-১০০% ক্ষতি সাধন করে থাকে।

প্রতিকারঃ
সার্বক্ষণিক ফসলের মাঠ পরিদর্শন করে লক্ষণ অনুসারে পোকাটি সনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
হ্যাণ্ড পিকিং বা ফেরোমন ফাঁদ ( ৫ টি/ বিঘা ) ব্যবহার করতে হবে।
ইস্পাহানী কোম্পানির জৈব বালাইনাশক এসএনপিডি ( SNPV ) প্রতি লিটার পানিতে ০.২ গ্রাম হারে পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর জমিতে ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
সম্ভব হলে আক্রান্ত এলাকায় ব্রাকন হেবিটার অবমুক্ত করতে হবে।
স্পিনোসাড জাতীয় সাকসেস ১.৩ মিলি/লিটার বা ট্রেসার ০.৪ মিলি/লিটার বা ক্লোরপাইরিফস দলীয় ডারসবান ০.৫ মিলি/লিটার বা ক্লোরপাইরিফস + সাইপারমেথ্রিন ( নাইট্রো ) ১ মিলি/লিটার বা এবামেকটিন বেনজোয়েট ( প্রোক্লেম ) ১ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে ভালোভাবে আক্রান্ত গাছে বিকালে স্প্রে করতে হবে।
১০০ মিলি ক্লোরপাইরিফস ৪৮ ইসি + ১ কেজি চিটাগুড় + ৩ কেজি চালের কুড়া ভালোভাবে একসাথে মিশিয়ে বিকালে আক্রান্ত জমিতে ছিটাতে হবে।
প্রয়োজনে কার্বোফুরান ( ব্রিফার/ফুরাডার/ কার্বোটাফ ৫ জি ) ৫.৩ কেজি/ বিঘা জমিতে ছিটিয়ে প্লাবন সেচ দিয়ে হবে।
এছাড়াও ফসলের জমিতে পোকাটি সনাক্ত করা মাত্র নিকটস্থ উপজেলা কৃষি অফিস, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২০এপ্রিল২০