গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে মালবেরি। এর কিছু সবুজ, কিছু লাল আর পেকে কালো হয়ে গেছে কিছু। পাতার চেয়ে ফলই যেন বেশি। উচ্চ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ বিদেশি এই ফল এখন চাষ হচ্ছে গাজীপুরের কালীগঞ্জে।
পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন দেশের তিনটি জাত সংগ্রহ করে প্রথম বারেই সাফল্য পেয়েছেন গাজীপুরের কালীগঞ্জের জামালপুর ইউনিয়নের চুপাইর গ্রামের বাসিন্দা মোস্তফা মোল্লা। প্রথম বারই তিনি বিরাট সফলতা পেয়েছেন। পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করলেও ভালো ফলন দেখে বাণিজ্যিকভাবে মালবেরি চাষের পরিকল্পনা করছেন এই কৃষক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মোস্তফার মালবেরি গাছগুলোর পাতা ডিম্বাকার, চমত্কার খাঁজযুক্ত আর সূচালো অগ্রভাগ। আকারে আঙুরের চেয়ে কিছুটা ছোট এই মালবেরি ফল। প্রথমে এই ফল থাকে সবুজ, পরে ধীরে ধীরে লাল হয়। আর সম্পূর্ণ পেকে গেলে তা কালো রং ধারণ করে। দেখতে সুন্দর আর আকর্ষণীয় এই ফল পাকলে রসালো ও টক-মিষ্টি স্বাদের হয়। প্রতিটি গাছ থেকে ৮ থেকে ১০ কেজি সংগ্রহ করা যায়। তৈরি করা যায় চারাও। খুব সহজেই এটি ছাদেও চাষ করা সম্ভব।
মালবেরি চাষের বিষয়ে কৃষক মোস্তফা বলেন, ফলটি বিদেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ এবং বাজারজাত করা হয়। বাজারে এর চাহিদাও ব্যাপক। তিনি পরীক্ষামূলকভাবে থাইল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তান থেকে তিনটি জাত সংগ্রহ করে চাষ করেছেন। পরীক্ষামূলক হলেও প্রতিটা গাছেই সাফল্য এসেছে। প্রচুর ফল ধরেছে।
কৃষক মোস্তফা বলেন, মালবেরি চাষে রোগবালাই খুবই কম। কীটনাশক তেমন লাগে না। উত্পাদন খরচও কম। শুধু জৈব সার দিলে প্রায় সারা বছরই এই ফল পাওয়া যায়। যেহেতু মালবেরি একটি আমদানিনির্ভর ফল, তাই বাজারেও এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরের সুপার শপগুলোতে বিক্রি হয় প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা কেজি দরে।
তিনি বলেন, মাত্র ২৫টি চারা দিয়ে তার মালবেরি চাষ শুরু। প্রতিটি চারা ৩০০ টাকা দরে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন। তবে তিনি বেশি দামে চারা কিনলেও এখন প্রতিটি মাত্র ৩০ টাকায় বিক্রি করছেন। চারার গোড়া পুরাতন মধুর মধ্যে কয়েক দিন চুবিয়ে রেখে পরে মাটিতে রোপণ করতে হয়। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে গাছ লাগানোর পরবর্তী মাসেই ফল পাওয়া যায়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সূত্র জানা গেছে, মালবেরি অর্থাৎ তুঁত ফল বা মালবেরি স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। মালবেরি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য পাকা তুঁত ফল উপকারী। এ ছাড়া পাকা ফলের টক-মিষ্টি রস পিত্তনাশক, দাহনাশক, কফনাশক ও জ্বরনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তুঁত গাছের ছাল ও শিকড়ের রস কৃমিনাশক। এটি ঠান্ডা লেগে জ্বর কিংবা কাশি হলে তুঁত গাছের ফল অত্যন্ত উপকারী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, মোস্তফা মোল্লা মূলত একজন সফল খামারি। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই গরু-ছাগল লালন-পালন করার পাশাপাশি গোখাদ্য হিসেবে সবুজ খাস চাষ করেন। সাতটি স্থানে প্রায় ৫ বিঘা জমিতে এই ঘাস চাষ করছেন। পাশাপাশি শখের বসে পরীক্ষামূলকভাবে তার খামারে মালবেরির চারা রোপণ করেন। বর্তমানে গাছ থেকে ফলগুলো সংগ্রহের উপযোগী হয়েছে। ২৫টি গাছের প্রতিটিতে ৮ থেকে ১০ কেজির মতো ফল পাওয়া যাবে।
তবে এ উপজেলায় মাটি মালবেরি চাষের কতটুকু উপযোগী এমন এক প্রশ্নের জবাবে এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গবেষণা করছেন বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।