যখন কোনো গাভী কোনো প্রকার অসুস্থতার লক্ষণ না থাকা সত্ত্বেও সঠিক সময়ে (১৮-২১দিনে) গরম হয় না এবং কমপক্ষে ২ বার প্রজনন করানোর পরেও গর্ভধারণে ব্যর্থ হয় তখন তাকে বার বার গরম হওয়া গাভী বা রিপিট ব্রিডার বলে এবং এই সমস্যাকে রিপিট ব্রিডিং বলে। তিনবার প্রজনন করানোর পরেও যখন গাভীতে গর্ভধারণে ব্যর্থ হওয়ার হার প্রায় ১০.০১% হয়। এ সমস্ত ক্ষেত্রে গাভীর বাছুর প্রদানের সংখ্যা কমে যায় এবং বারবার প্রজনন করানো ও চিকিৎসা করানোর খরচও বেড়ে যায়।
অনেক সময় উন্নত মানের গাভী অকালে বাতিল করতে হয়, ফলে খামারী মানসিক চাপে পড়েন ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। বাণিজ্যিক ডেইরী ফার্মে ৪টি প্রধান সমস্যার মধ্যে রিপিট ব্রিডিং একটি অন্যতম সমস্যা। রিপিট ব্রিডিং-এর কারণসমূহ বাস্তব পক্ষে কিছু ক্ষেত্রে ভুল সময়ে প্রজনন করানোর ফলে রিপিট ব্রিডিং হয়ে থাকে। কিছু গাভীতে প্রজননতন্ত্রের বার্সা ও ডিম্বনালীর জটিলতা ও জরায়ু সংক্রমণের কারণে এই সমস্যা হয়ে থাকে।
কাছাকাছি সময়ে গরম হওয়া (A nearly repeaters): এক্ষেত্রে গাভী প্রজনন করানোর ১৭-২৪ দিনের মধ্যেই আবার গরম হয়। কারণ, (১) লুটিয়াল গ্রন্থির কার্যকারিতা তাড়াতড়ি বন্ধ হলে বা স্বাভাবিক বা নিয়মিত ঋতুচক্রের মত করপাস লুটিয়াম (ঈখ) স্বল্পস্থায়ী হলে এমন হতে
পারে। (২) যদি ডিম্ব দেরীতে নি:সারিত হয় এবং প্রজননে বীজের মান ভালো না হয়। (৩) পূর্বেই ভ্রƒণ মারা গেলে বা দুর্বল/নিম্নমানের ভ্রƒণ সৃষ্টি হলে। (৪) জরায়ুর পরিবেশ ভালো না থাকলে। (৫) প্রিকোসিয়াস এবং (৬) Luteolyze হলে। জরায়ু সংক্রমণ (Endometritis, Metritis, Perimetritis, Parametritis): সাধারণত ষাঁড় দ্বারা মিলনের সময়, অস্বাস্থ্যকর কৃত্রিম প্রজনন, বাছুর প্রসবের সময় ও পরে জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত হওয়া, ইত্যাদি কারণে জরায়ু সংক্রমণ হতে পারে। এ ছাড়াও কিছু বিষয় বার বার গরম হওয়াকে প্রভাবিত করে যেমন, ওলান প্রদাহ রোগ বার বার গরম হওয়ার হার বৃদ্ধি করে ও উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং বাচ্চা প্রদানের সংখ্যার ওপর প্রভাব সৃষ্টি করে। এছাড়া, জটিল বাছুর প্রসবের ঘটনা ও প্রথম প্রজনন করানোর আগে চিকিৎসা দেয়া ইত্যাদি বিবিধ কারণে জরায়ু সংক্রমণ হতে পারে।
চিকিৎসা
১। প্রাথমিকভাবে গাভীর গরম হওয়ার সময় লিপি বদ্ধ করে বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে গাভীটি কাছাকাছি সময়ে গরম হচ্ছে না দেরিতে গরম হচ্ছে।
২। তিন বার প্রজনন করানোর পরও গর্ভধারণ না করলে পুণরায় প্রজনন করানোর আগে ভালোভাবে প্রাণিচিকিৎসক দ্বারা পরীক্ষা করাতে হবে।
৩। প্রজনন করানোর সময় গাভীকে ১০০-৫০০ µGM GnRh এহজয মাংসের মধ্যে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
৪। গরম হওয়ার সময় ৮ম ঘন্টা ও ২৩ তম ঘন্টায় পেনিসিলিন ৪০ লাখ জরায়ুতে (Iµ) প্রয়োগ করা যেতে পারে।
প্রতিরোধ
১। সঠিক সময়ে অর্থাৎ গরম হওয়ার ১২ ঘন্টা পরে ও ১৮ ঘন্টার মধ্যে প্রজনন করত হবে।
২। গাভী গরম হলে দুধের প্রজেস্টেরনের মাত্রা খুব কমে যায়। প্রজেস্টেরনের মাত্রা নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা দেয়া যায়।
৩। প্রজননকারীকে সতর্কতার সঙ্গে গর্ভে বাচ্চা আছে কিনা তা নির্ণয় করে তারপর প্রজনন করাতে হবে।
৪। প্রজনন করানোর সময় গাভীকে কোনো প্রকার ধকলে রাখা যাবে না। যেমন অনেক দূর পায়ে হেঁটে নিয়ে যাওয়া, খাদ্য পরিবর্তন করা, ইত্যাদি।
৫। পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য দিতে হবে।
৬। ভালো বীজ ও দক্ষ প্রজননকারী দ্বারা প্রজনন করাতে হবে।
৭। প্রয়োজনে ২ বার প্রজনন করানো যেতে পারে।
৮। প্রজনন করানোর পর ৩ সেকেন্ড গাভীর ক্লাইটোরিসে মালিশ (Massage) দিতে হবে।
৯। প্রজনন করানোর পর গাভীকে ঠান্ডা জায়গায় রাখতে
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৮এপ্রিল২০