গাভী বা বকনার দেরীতে ডাকে আসার কারণঃ
পুষ্টির অভাব ও হরমোনের ভারসাম্যহীনতা।
বিভিন্ন ধরনের জীবানু দ্বারা জরায়ুতে প্রদাহ হলে।
বিপাকীয় রোগ জরায়ুর বিভিন্ন রোগ হলে।
দুগ্ধবতী গাভীর প্রসব পরবতী জননাঙ্গের ব্যাধি, কৃমি, দৈনিক দুধ উত্পাদনের হার ইত্যাদি
গাভীর ওলানের বাটে মুখ দিয়ে বাছুরের দীর্ঘক্ষণ ধরে চুষে ঘন ঘন দুধ খাওয়া।
বাছুরের দুধ ছাড়ানোর সময় দীর্ঘ হলেও গাভী প্রসবের পর পুনর্বার বাচ্চা ধারন ক্ষমতা ফিরে পেতে দেরি হয় (৯০-১২০ দিন বা এর চেয়ে বেশি দেরি হয়)
গাভী বা বকনার সঠিক সময়ে গরম বা ডাকে আনার পদ্ধতিঃ
গাভী বা বকনার সঠিক সময়ে ডাকে আসানোর জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতি গ্রহন করা জরুরী-
বাছুর জন্মের পর পরিমিত শালদুধ খাওয়ানো এবং পরিমিত মাত্রায় সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে।
গাভী বাচ্চা দেয়ার পর ৪০-৬০ দিনের মধ্যে ভাল বীজ (সিমেন বা বীর্য) দিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কৃত্রিম প্রজনন করাতে হবে অথবা ভাল জাতের ষাঁড় দিয়ে প্রজনন করাতে হবে।
প্রতিটি গাভীর ডাকে আসার সঠিক সময় নির্ণয়ের জন্য প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় আধা ঘন্টা করে গাভীকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে ।
কোন গাভীর যোনিদ্বার দিয়ে অস্বাভাবিক ধরনের বিজল অর্থাত্ ঘোলাটে বা পুঁজ জাতীয় বিজল নি:সৃত হলে সেগুলিকে প্রজনন করানো যাবে না।
বাচ্চা দেয়ার পর যদি গাভীর গর্ভফুল ৬-১২ ঘন্টার মধ্যে না পড়ে সে গাভী গুলোকে ৮০-০ দিনের আগে প্রজনন করানো যাবে না।
গাভী গরম হওয়ার লক্ষণ প্রকাশের ১০-১২ ঘন্টা পর ভাল বীজ দিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে দক্ষ লোক দ্বারা কৃত্রিম প্রজনন করাতে হবে অথবা ভাল জাতের ষাড় দ্বারা প্রজনন করাতে হবে।
কোন গাভী স্বাভাবিক তিনটি ঋতুচক্রে পর পর তিনবার ভালবীজ দ্বারা কৃত্রিম প্রজনন করানোর পরও যদি গর্ভসঞ্চার না হয়, তবে পরবতীতে সেটিকে ১-২ টি ঋতুচক্রে প্রজনন না করিয়ে বিশ্রাম দিতে হবে।
তবে যদি প্রজনন করাতে চান তাহলে ১০০-৫০০ মাইক্রোগ্রাম গোনাডোট্রফিন -রিলিজিং হরমোন যেমন ফার্টিলন অথবা ফার্টাজিল অথবা রিসিপ্টালের যেকোন একটি প্রজনন করানোর পরপরই এক মাত্রা, প্রয়োজনে ৮-১০ দিন পর আরেক মাত্রা ইনজেকশন মাংসে দিলে গর্ভসঞ্চার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এছাড়াও একজন দক্ষ প্রাণি চিকিৎসক (ভেটেরিনারিয়ান) দিয়ে নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে গাভীকে সঠিক সময়ে ডাকে এনে প্রজনন করানো যায়-
গাভীর মলদ্বারে হাত দিয়ে জননাঙ্গ ভাল ভাবে পরীক্ষা করতে হবে।
যদি ডিম্বকোষে করপাস লুটিয়াম (ডিম্ব ক্ষরণ হওয়ার পর ডিম্বকোষের লম্বাটে ধরনের অবস্থা) থাকে তবে বুঝতে হবে গাভী ঋতুুচক্রে আছে।
এক্ষেত্রে কর্পাস লুটিয়াম পেলে পরবতী ১০-১২ দিন পর গাভীকে গরম বা ডাকে আসার লক্ষণ সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এ লক্ষে অন্তত সকালে একবার এবং সন্ধ্যার পর আরেকবার ডাকে আসার লক্ষণ ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
জরায়ু সংক্রমিত হয়ে তাতে পুঁজ জমে প্রদাহসহ কর্পাস লুটিয়াম থাকলে সে ক্ষেত্রে যোনিদ্বার দিয়ে পুঁজ বা ঘোলাটে বিজল পড়তে দেখা যায়।
তখন একমাত্রা প্রোস্টাগ্লানডিন এফ২ আলফা জাতীয় ইনজেকশন যেমন- ২ মিলি প্রোসলভিন অথবা এস্ট্রোমেট অথবা সিনক্রোমেট্ কিংবা ৩৫ মিলি গ্যাব্রস্টিম, ৫ মিলি লুটালাইজ অথবা গান্ডিন-এন এর যেকোন একটি ইনজেকশন মাংসে দিতে হবে।
ইনজেকশন দেয়ার ২৪-৪৮ ঘন্টা পর ৫০০-১০০০ মিগ্রা পলিভিনাইল পাইরোলিডিন এ দ্রবীভূত অক্সিটেট্রাসাইক্লিন জাতীয় ইনজেকশন যেমন- রেনামাইসিন ১০০ অথবা ৪০-৮০ লাখ পেনিসিলিন জাতীয় ইনজেকশন যেমন- প্রোনাপেন অথবা প্রোনাসিলিন যেকোন একটি ১৫-২০ মিলি স্যালাইনের সাথে ভালভাবে মিশিয়ে প্লাস্টিক এ আই ক্যাথেটারের সঙ্গে এডপ্টারের (যা দ্বারা কোন কিছু পাম্প করে ভিতরে ঢুকানো হয়) সাহায্যে ২০ সিসি প্লাস্টিক সিরিঞ্জ দ্বারা যোনিদ্বার দিয়ে সাবধানে ঢুকিয়ে দিতে হবে।
২-৩ দিন পর আরেকবার এ ধরনের চিকিৎসা প্রদান করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
যদি ডিম্বকোষ খুব ছোট থাকে এবং এতে কেশগর্ভ (ডিম্বকোষের একপাশ ফোলা অবস্থা) ও কর্পাস লুটিয়াম (ডিম্বক্ষরন হওয়ার পর ডিম্বকোষের লম্বাটে ধরনের অবস্থা) কিছুই না পাওয়া যায় তবে বূঝতে হবে গাভীর ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে আছে।
এজন্য বাছুরকে ৩ মাসের বেশী দুধ খাওয়ানো যাবে না এবং গাভীকে পরিমিত সুষম খাদ্য বিশেষ করে আমিষ ও দানাদার খাদ্য প্রদান করতে হবে।
কোন কোন গাভীর ঋতুচক্রের সময়কাল ১৭ দিনের কম ও ২৪ দিনের বেশি দেখা গেলে ডিম্বাশয়ের কেশগর্ভ ফোসকা (২০-২৫ সেমি পরিধির বেশি) হয়েছে বলে ধারণা করতে হবে সেক্ষেত্রে মলদ্বারে হাত দিয়ে ডিম্বকোষ পরীক্ষা করে বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে।
এ সকল গাভীকে স্বাভাবিক ঋতুচক্রে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে এজন্য ৫০০ মাইক্রোগ্রাম জি এন আর এইচ হরমোন অর্থাৎ ফার্টিলন অথবা ফার্টাজিল অথবা রিসেপ্টাল ইনজেকশন মাংসে দিয়ে পরবতী ১০-১২ দিন পর ১ মাত্রা প্রোস্টাগ্লানডিন এফ২ আলফা যেমন- ২ মিলি প্রোসলভিন অথবা এস্ট্রোমেট কিংবা ৩৫ মিলি গ্যাব্রস্টিম, ৫ মিলি লুটালাইজ অথবা গান্ডিন-এন অথবা ২ মিলি সিনক্রোমেটের যেকোন একটি মাংসে ইনজেকশন দিতে হবে।
এ ইনজেকশন দেয়ার ৭২-৬ ঘন্টায় গাভী গরম বা ডাকে এলে প্রজনন করাতে হবে।
কোন কোন গাভীর কেশগর্ভ আংশিক লিউটিনাইজেশন (ডিম্বক্ষরণ হওয়ার পর ডিম্বকোষের লম্বাটে ধরনের বিশেষ অবস্থা) হয়ে ঋতুচক্র বন্ধ থাকে সেক্ষেত্রে মলদ্বারে হাত দিয়ে ডিম্বকোষ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে গাভীকে প্রোস্টাগ্লানডিন এফ২ আলফা জাতীয় ইনজেকশন যেমন- ২ মিলি প্রোসলভিন অথবা এস্ট্রোমেট কিংবা ৩৫ মিলি গ্যাব্রস্টিম অথবা ৫ মিলি লুটালাইজ অথবা গান্ডিন এন অথবা ২ মিলি সিনক্রোমেট এর যেকোন একটি মাংসে ইনজেকশন দিতে হবে।
এ ইনজেকশন দেয়ার ৭২-৬ ঘন্টায় গাভী গরম বা ডাকে এলে প্রজনন করাতে হবে।
গর্ভকালের শেষের ২ মাস অবশ্যই দুধ দোহন বন্ধ রাখতে হবে
গর্ভকালের শেষের ৩ মাস ও প্রসব পরবতী ৩ মাস গাভীকে পরিমিত সুষম খাদ্য যেমন- সাধারন খাবারের পাশাপাশি আমিষ, দানাদার ও খনিজ জাতীয় খাদ্য প্রদান করতে হবে।
পরামর্শঃ
গাভী গরম হয়েছে বুঝতে পারলেই, উপযুক্ত সময়ে সিমেন প্রয়োগ করতে হবে।
গরুকে পুষ্টিকর খাবার পর্যাপ্ত পরিমানে সরবরাহ করতে হবে।
১ নিয়মিত সবুজ কাঁচা ঘাস ও কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।
২ প্রতিদিন গাভীকে ৫০-১০০ গ্রাম কাঁচা ছোলা ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে (অংকুরিত ও গাজানো ছোলা) ৭-১০ দিন খাওয়াতে হবে। এ ধরনের ছোলা খাওয়ানোর ১০-৪৫ দিনের মধ্যে গরম হবার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
উপরোক্ত বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখলে এই গরম না হওয়ায় সমস্যা হতে আমাদের প্রাণি বা বকনা গরু গুলোকে মুক্ত রাখতে পারবো। সঠিক সময়ে গরম হলে একদিকে যেমন সময় বাঁচবে তেমনি অন্যদিকে সেই গাভী থেকে বাচ্চা ও দুধ পাওয়া যাবে। যা আমাদের নিজেদের আমিষের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান করবে।
সুত্র- ইন্টারনেট
পশু চিকিৎসা বিদ্যা (৩য় সংস্করণ)- আব্দুস সামাদ
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৯অক্টোবর২০