গুড়া হলুদের ক্ষতিকর সীসা!

1530

holud

এক বস্তা মরিচ ও ১০ বস্তা ধানের কুঁড়া, সঙ্গে পরিমাণ মত রাসায়নিক পদার্থ (অরেঞ্জ কালার) মেশিনে গুঁড়া করলেই হয়ে যায় দেড় মন গুঁড়া মরিচ। একইভাবে তৈরি করা হয় হলুদের গুঁড়াও। লাল রঙের সঙ্গে কিছু পচা মরিচ শুকিয়ে গুড়া করলেই হয়ে যায় ঝাঁজালো গুড়া মরিচ। আর হলুদ রঙের সঙ্গে কিছু আসল হলুদ ও কাঠের গুড়া মিশিয়ে দিলেই হয়ে যায় গুড়া হলুদ। দেখে বোঝার উপায় নেই- বাজারে বিক্রি হওয়া গুড়া হলুদ ও মরিচে কি আছে? কিছু অসাধু মানুষ এমন কাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন।

এবার তাই হলুদে (শুকনো বা গুড়া) ক্ষতিকর রং বা উজ্জ্বলকারক ব্যবহার বন্ধে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এক সতর্ককরণ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানায়, সম্প্রতি আইসিডিডিআর,বি ও যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এক যৌথ গবেষণায় বাংলাদেশের গর্ভবতী মহিলাদের রক্তে উচ্চমাত্রায় সীসার (লেড) উপস্থিতি পায়। এ সংক্রান্ত একটি গবেষনা প্রবন্ধ এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণার পরবর্তী ধাপে রক্তে সীসার উৎস অনুসন্ধানে খাবার হলুদে সীসার মিশ্রন (দূষন) প্রমানিত হয়। উক্ত শুকনো বা গুড়া হলুদে প্রাপ্ত সীসার উৎস হচ্ছে অবৈধভাবে ব্যবহৃত রং বা উজ্জ্বলকারক ‘লেড ক্রোমেট’ (PbCrO4) যা স্থানভেদে পিউরি, পিপড়ি, বাসন্তি রং, কাঠালি বা সরষে ফুল রং নামে পরিচিত। হলুদে বিদ্যামন সীসা মানবদেহের জন্য মরাত্মক ক্ষতিকর।

বিজ্ঞপ্তিতে, নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ মোতাবেক সকল মশলা উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীদের হলুদ (শুকনো বা গুড়া) প্রক্রিয়াজাতকরণে কোন ধরণের রং বা উজ্জ্বলকারক ব্যবহার বা সংযোজন বা মিশ্রনে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, যে কোন ধরণের খাদ্যের ভেজাল, দূষন ও খাদ্যসংযোজন দ্রব্যের নিরাপদ মাত্রাধিক্যের ক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

মানব শরীরে সীসার ক্ষতিকারক দিকসমূহ :
– লেড ক্রোমেট বা উজ্জ্বলকারকে বিদ্যমান সীসা একটি বিষ যা স্নায়ু ও মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতিসাধন করে ও অকাল মৃত্যু ঘটায়।
– সীসার দূষণ বুদ্ধি বিকাশে অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করে, এমনকি জন্মের পূর্বে সীসার সংস্পর্শ পরবর্তীতে শিশুর বুদ্ধিমত্তা হ্রাস করে।
– রক্তে সীসার কোন সহনীয় মাত্র নেই, যদিও রক্তে সীসার প্রচলিত (ইউএসএ) মাত্র হলো ৫ মাইক্রোগ্রাম/ডেসি.লি।

সীসা অন্যান্য যেসব রোগের কারণ :
– পরিপাকতন্ত্র (কোষ্ঠকাঠিন্য, বমিভাব, ক্ষুধামন্দা, অরুচি), হৃদ-রক্তনালীর রোগ (রক্তশূণ্যতা, উচ্চ রক্তচাপ) ইত্যাদি বৃদ্ধি করে।
– দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে।
– শিশুর শারিরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে ও প্রাপ্তবয়ষ্কদের স্মৃতিভ্রম, মাথাব্যথা, বিষন্নতা ও মনো-স্নায়ুবিক বৈকল্য সৃষ্টি করে।
– হরমোন জনিত রোগ বৃদ্ধি করে।

বিজ্ঞপ্তিতে, সংশ্লিষ্ট উৎপাদনকারী, সরবরাহকারী, পরিবেশনকারী, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতা এবং গ্রাহককে উক্ত দূষণযুক্ত পণ্য (হলুদ) উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয় এবং ব্যবহার না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।

একই সঙ্গে সকল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে তাদের উৎপাদিক পণ্যে (হলুদ) সীসার অনুপস্থিতি নিশ্চিত করে বাজারজাত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে।

গণবিজ্ঞপ্তি প্রচারের পরও কোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত হলুদে (শুকনো বা গুড়া) ক্ষতিকর রাসায়নিক লেডক্রেমেট (সীসা)-র উপস্থিতি প্রমানিত হলে দায়ী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ