বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে একে নলতা, লেবইর, ফরফরি, নইল, নোয়েল, রয়েল, আলবরই, অরবরি ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। তবে অড়বড়ইয়ের পাশাপাশি রয়েল নামটাই বেশি প্রচলিত। অড়বড়ইয়ের আদি নিবাস কোথায় তা সঠিক জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় মাদাগাস্কারে এর উত্পত্তি। অনেক উদ্ভিদবিজ্ঞানী এটাও বলেন যে এর আদি নিবাস দক্ষিণ এশিয়া! পরে এ ফল বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে।
অড়বড়ইয়ের রস ভিনেগার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। গাছের কচিপাতা ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে শাক হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। অকাল বার্ধক্য রোধে ও ত্বকের রোগ প্রতিরোধে অড়বড়ইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অড়বড়ইয়ের রস চুলের গোড়ায় লাগালে চুল মজবুত হয় ও খুশকি দূর হয়। মৌসুমি জ্বর প্রতিরোধে ও মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতে ফলটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
অড়বড়ইয়ের ইংরেজি নাম অনেকগুলো! যেমন Otaheite gooseberry, Malay gooseberry, Tahitian gooseberry, Star gooseberry, West Indian gooseberry ইত্যাদি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Phyllanthus acidus। অড়বড়ই আমলকীর নিকট আত্মীয়। গাছ গুল্ম ও বৃক্ষের মাঝামাঝি পর্যায়ের। মূলত অড়বড়ই চাষ করা হয় না, তবে বিশ্বের অনেক দেশেই এটা শোভাবর্ধক গাছ হিসেবে লাগানো হয়। গাছের উচ্চতা খুব বেশি হয় না, মাত্র ৪-৫ মিটার উঁচু হয়।
অড়বড়ই গাছ দেখতে অনেকটা কামরাঙ্গা গাছের মতো। গাছে গোলাপি রঙের থোকা থোকা ফুল ধরে মার্চ-এপ্রিল মাসে। আগস্টের শেষ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায়। ফলের গায়ে খাঁজকাটা থাকে, তাই দেখতে অনেকটা ছোট তারার মতোই লাগে! পাকা ফল হলুদ ও হলুদাভ সবুজ হয়। ফলের ভেতরে গাঢ় সবুজ রঙের আঁটি থাকে। এই আঁটির ভেতর ৬-৮টি মসৃণ, ছোট্ট বীজ থাকে। টক স্বাদের পাকা অড়বড়ই ঝাল-লবণ দিয়ে মাখিয়ে খেতে ভীষণ মজা লাগে!
এছাড়া এটা দিয়ে আচার, জুস, জেলি, চাটনি ইত্যাদিও তৈরি করা হয়। অনেকে এটা দিয়ে চমত্কার টক রান্না করেন বা ভর্তা তৈরি করেন। অড়বড়ইয়ের রস ভিনেগার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। গাছের কচিপাতা ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে শাক হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। অড়বড়ইয়ের রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণও! প্রতি ১০০ গ্রাম অড়বড়ইয়ে রয়েছে –
জলীয় অংশ ৯১.৯ গ্রাম আমিষ ০.১৫৫ গ্রাম চর্বি ০.৫২ গ্রাম খাদ্যআঁশ ০.৮ গ্রাম ক্যালসিয়াম ৫.৪ মিলিগ্রাম ফসফরাস ১৭.৯ মিলিগ্রাম আয়রন ৩.২৫ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন ০.০১৯ মিলিগ্রাম থায়ামিন ০.০২৫ মিলিগ্রাম রিবোফ্লেভিন ০.০১৩ মিলিগ্রাম নিয়াসিন ০.২৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ৪.৬ মিলিগ্রাম অড়বড়ইতে কোনো ক্যালরি নেই। তাই বিনা দ্বিধায় খেতে পারেন এই চমত্কার ফলটি। অড়বড়ইয়ের রয়েছে অনেক ঔষধি গুণও! যেমন –
লিভারের অসুখের টনিক বানানো হয় এর বীজ দিয়ে।
পেটের অসুখ ও কৃমিনাশক হিসেবে এর বীজ ব্যবহার করা হয়।
অকাল বার্ধক্য রোধে ও ত্বকের রোগ প্রতিরোধে অড়বড়ইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
অড়বড়ইয়ের রস চুলের গোড়ায় লাগালে চুল মজবুত হয় ও খুশকি দূর হয়।
মৌসুমি জ্বর প্রতিরোধে ও মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতে ফলটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৬জুন২০