গোপালগঞ্জে মধুমতি এমবিআর চ্যানেলে স্থাপন করা হয়েছে মাছ চাষের খাঁচা। এ খাঁচায় চাষ করা হয়েছে মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছ। মাত্র ৩ মাসে প্রতিটি খাঁচায় ২শ’ কেজি করে মাছ উৎপাদিত হয়েছে। খরচ বাদে প্রতিটি খাঁচায় উৎপাদিত মাছ বিক্রি করে অন্তত ৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। খাঁচায় মাছ চাষ গোপালগঞ্জ জেলার হাজারো মানুষের ভাগ্য বদলের হাতছানি দিচ্ছে।
সরেজমিনে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চরমানিকদাহ গ্রামের মধুমতি এমবিআর চ্যানেলে খাঁচায় মাছ চাষ প্রদর্শনীতে গিয়ে দেখা গেছে, নদীর পানিতে ড্রাম ভাসিয়ে লোহার পাইপে বিভিন্ন স্তরে নেট ব্যাহার করে মাছ চাষের উপযোগী খাঁচা স্থাপন করে দেয়া হয়েছে। খাঁচাগুলো পানির ওপর ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। একই স্থানে অবস্থান করে জেয়ারভাটার পানির সঙ্গে এটি ওঠানামা করে। কখানও এটি স্রোতে ভেসে যায় না। এক স্থানে স্থির হয়ে থাকে। মধুমতি এমবিআর চ্যানেলে খাঁচায় মাছ চাষ আলাদা শোভাবর্ধন করেছে।
গোপালগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজন কুমার নন্দী বলেন, দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জ জেলার ৩ উপজেলায় খাঁচায় মাছ চাষ প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে। মাছ চাষ শেষে দেখা গেছে প্রতিটি খাঁচায় গড়ে ২শ’ কেজি করে মাছ উৎপাদিত হয়েছে। বছরে ৩ বার এ খাঁচায় মাছ চাষ করা হয়। একবার খাঁচা স্থাপন করা হলে পর পর ৩ বছর মাছ চাষ করা যায়। বছরে ১২টি খাঁচার ১টি ইউনিট থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করা সম্ভব। আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুক‚লে থাকলে ১টি ইউনিট থেকে আরও বেশি টাকা আয় করা যায়। খাঁচায় মাছ চাষ ছড়িয়ে দিতে প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে। এটি দেখে অনেকেই লাভজনক খাঁচায় মাছ চাষ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন ।
দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের পিডি এস এম আশিকুর রহমান বলেন, প্রবহমান নদী, খাল ও জলাশয়ে খাঁচা স্থাপন করে বছরে ৩ বার মাছ উৎপাদন করা যায়। এ প্রকল্প থেকে গরিব মৎস্যজীবী, বেকার যুবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সংগঠিত করে গ্রæপ তৈরি করা হয়। তারপর তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে খাঁচা স্থাপন, মাছের পোনা ও খাদ্য প্রকল্পের অর্থায়নে সরবরাহ করা হয়। এভাবে গোপালগঞ্জ জেলার ৩টি উপজেলায় ২টি করে মোট ৬টি ইউনিটে ৪৮টি খাঁচা প্রদর্শনী স্থাপন করে দেয়া হয়েছে। এখানে প্রতিটি খাঁচা থেকে ২শ’ কেজি মাছ উৎপাদিত হয়েছে। খাঁচায় মাছ চাষ লাভজনক হয়েছে। তাই নদী, খাল ও জলাভ‚মি বেষ্টিত গোপালগঞ্জ জেলায় খাঁচায় মাছ চাষের ভাগ্য বদলের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এতে একদিকে যেমন মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মো. জিল্লুর রহমান রিগান বলেন, খাঁচায় মাছ চাষ স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছ। কারণ এ মাছের স্বাদ খুব ভালো। তাই বাজারে এ মাছ একটু বেশি দামে বিক্রি হয়। আগামীতে খাঁচায় মাছ চাষ সম্প্রসারিত হবে। এতে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আমরা আশাবাদ প্রকাশ করছি।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চরমানিকদাহ গ্রামের মধুমতি এমবিআর চ্যানেলে খাঁচায় মাছ চাষ প্রদর্শনীর সুফল ভোগী নূর আলম বলেন, প্রতি খাঁচায় ১ কেজি মাছ উৎপাদনে ১শ’ থেকে ১১০ টাকা খরচ হয়। প্রতি কেজি মাছ ১শ’ ৩০ টাকা থেকে ১ শ’ ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়। সে হিসেবে একটি খাঁচা থেকে বছরে কমপক্ষে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। ব্যাপক আকারে খাঁচায় বাণিজ্যিকভাবে মাছের চাষ করলে আরও বেশি টাকা আয় করা যায়।
ওই গ্রæপের মৎস্যচাষি আফজাল হোসেন বলেন, খাঁচায় প্রহমান জলাশয়ে মাছ চাষ করা হয়। তাই এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে কোনো ধরনের রোগ হয় না। মাছ অক্সিজেন ফেল করে না। মাছের সার্বোচ্চ উৎপাদন পাওয়া যায়। মাছ খুবই সুস্বাদু হয়। তাই আমাদের জেলায় খাঁচায় মাছ চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। যে কেউ এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে ভাগ্য বদল করতে পারবেন।