গোপালগঞ্জে প্রায় ৫৬ ভাগ রোপা আমন ধান কর্তণ সম্পন্ন হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলার ৭ হাজার ১৩৮ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে। গড়ে প্রতি হেক্টরে ২.৬৭ মেট্রিক টন রোপা আমন ধান উৎপাদিত হয়েছে। সে হিসেবে এখন পর্যন্ত এখান থেকে কৃষক ১৯ হাজার ৭৮ মেট্রিক টন রোপা আমন ধানের ফলন পেয়েছেন। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে জেলার ৫ উপজেলায় মোট রোপনকৃত ১২ হাজার ৭৭৩ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান কর্তণ সম্পন্ন হবে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপ-পরিচালক আঃ কাদের সরদার জানিয়েছেন ।
ওই কর্মকর্তা বাসসকে বলেন, রোপা আমন মৌসুমে জেলার ৫ উপজেলায় ১২ হাজার ৭৭৩ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করেন কৃষক। এমধ্যে ২ হাজার ৫৩৩ হেক্টরে হাইব্রিড,৮ হাজার ২১৩ হেক্টরে উফশী ও ২ হাজার ২৭ হেক্টরে স্থানীয় জাতের রোপা আমন ধান রয়েছে। ধান কাটার পর হাইব্রিড জাতে হেক্টর প্রতি ৩.২ মেট্রিক টন, উফশী জাতে ২.৬ মেট্রিক টন ও স্থানীয় জাতে কৃষক ১.২ মেট্রিক টন ফলন পেয়েছেন কৃষক। সেই হিসেবে হেক্টর প্রতি গড়ে ২.৬৭ মেট্রিক টন রোপা আমন ধান ফলেছে। ইতিমধ্যে জেলার ৭ হাজার ১৩৮ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে জেলার সব ধান কাটা শেষ হবে। এ মৌসুমে কৃষক মোট ৩৪ হাজার ১০৪ মেট্রিক টন রোপা আমন ধানের ফলন পাবেন। ইতিমধ্যেই কৃষক রবি ফসলের প্রণোদনা পেয়ে রবি ফসল আবাদ শুরু করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, রোপা আমন ধান মৌসুমে কৃষক আমন ধানের ভাল ফলন পেয়েছেন। বোরো ধানের জেলা গোপালগঞ্জে নি¤œজলাভ’মি বেষ্টিত বা বিলের জমি বেশি। তাই এখানে উচু, মাঝারি উচু ও কিছু জলমগ্ন জমিতে আমন ধান জন্মে। এ মৌসুমে অধিকাংশ জমি ধান চাষের বাইরে থাকে। সেখানে ভাসমান বেডে সবজি উৎপাদিত হয়। আগামীতে আমরা জলমগ্ন জমিগুলো ধান চাষের আওতায় নিয়ে আসব। ফলে এ জেলায় আগামী আমন মৌসুমে ধানের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের কৃষক সজল মোল্লা বলেন, গত সৌসুমে বোরো ধানে বাম্পার ফলন পেয়েছিলাম। তারপ ধানগবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় আমন ধান আবাদ করি। এ ধানে হেক্টরে ৩ মেট্রিক টনের বেশি ফলন পেয়েছি। বাজারে ধানের দামও ভাল রয়েছে। তাই এ ধান বিক্রি করে লাভ করতে পারব।
গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার বেথুড়ি ইউনিয়নের রামদিয়া গ্রামের কৃষক হারাধন মিন্ত্রী বলেন, আমাদের এলাকা জলমগ্ন। তাই এখানে স্থানীয় জাতের ধান রোপণ করি। এ জাতের ধানের ফল খুব কম। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আমাদের জলমগ্ন উচ্চ ফলশীল ধানের জাত দিলে আমরা চাষাবাদ করে বেশি ধান ফলাতে পারব। এতে দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। আমরাও লাভবান হব।
ধান গবেষাণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা জোয়ার-ভাটা, লবন ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছি। এসব জাত কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণ করছি। আমন মৌসুমে গোপালগঞ্জ জেলায় ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আমরা এসব জাত ছড়িয়ে দেব।