গোপালগঞ্জে ৬২ কোটি টাকার টমেটো বিক্রি

70

এলাকাটি জলাভূমিবেষ্টিত। তাই সব জমিই এক ফসলি। এসব জমিতে ঘের করে কৃষক বর্ষাকালে মাছ চাষ করেন। শুষ্ক মৌসুমে সেখানে চাষ করা হয় বোরো ধান। আর ঘেরের উচু আইলে সারা বছর বছর শাক, সবজি ও টমেটোর আবাদ করেন তারা। এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রেখে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে কৃষকরা বছরজুড়েই অর্থ উপার্জন করছেন। তারা ঘেরের আইলে উৎপাদিত টমেটো বিক্রি করে এবার আয় করেছেন ৬২ কোটি টাকা। এটি  হচ্ছে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ী ইউনিয়নের টমেটো বিক্রির খবর। নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে এখানে টমেটো বিক্রি শুরু হয়ে টানা ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলেছে টমেটো বিক্রি।

কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় বলেন, গত মৌসুমে কলাবাড়ী ইউনিয়নে ঘেরের আইলে ৩১০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে এক হাজার ২৫০ মণ টমেটো ফলন দিয়েছে। সে হিসাবে কলাবাড়ী ইউনিয়নে তিন লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ মন টমেটো উৎপাদিত হয়েছে। প্রতি কেজি টমেটো গড়ে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

এই ইউনিয়নে ৬২ কোটি টাকার টমেটো কেনাবেচা হয়েছে। প্রতিদিন এখানে গড়ে চার হাজার ২৫০ মণ টমেটো বিক্রি হয়েছে, যার গড় বাজারদর ৬৮ লাখ টাকা। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে টমেটো বিক্রি শুরু হয়। ডিসেম্বের ও জানুয়ারিতে সবেচেয়ে বেশি টমেটো বিক্রি হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে টমেটো বিক্রি শেষ হয়েছে।

কলাবাড়ী ইউনিয়নের নলুয়া গ্রামের কৃষক পরিতোষ হালদার বলেন, ঘেরের আইলে এক একরে টমেটোর আবাদ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি টমেটো ১০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। শেষের দিকে প্রতি কেজি টমেটো সাড়ে ১২ টাকা দরে বিক্রি করছি। গত তিন মাসে গড়ে প্রতি কেজি টমেটো ৪০ টাকা দরে বিক্রি করতে পেরেছি। এক একরের টমেটো থেকে অন্তত এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।

কলাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান বিজন বিশ্বাস বলেন, আমার ইউনিয়ন বিলবেষ্টিত। কৃষকরা খুবই পরিশ্রমী। তারা বিলের জমিতে ঘের করে সারা বছর মাছ, ধান, শাক, সবজি, টমোটোসহ বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে থাকেন। জমির সর্বোত্তম ব্যবহার করে তারা আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়া উপজেলার এ ইউনিয়নের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি খুবই চাঙা ও মজবুত। টমেটো বিক্রির লাভের টাকা তারা ঘরে তুলতে পেরে আনন্দিত।

আড়তদার নিখিল বসু, পরেশ পাণ্ডে, শংকর হাজরা, শফিক মোল্লা ও আল-আমিন মোল্লা বলেন, এ বছর কৃষক টমেটোর ভালো দাম পেয়েছে। প্রথম চার হাজার টাকা মণ দরে টমেটো কেনাবেচা হয়েছে। শেষের দিকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মণ দরে টমেটো বিক্রি হয়েছে। গড়ে এ বছর প্রতি মণ টমেটো এক হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আমাদের হিসাবে এই ইউনিয়নে প্রতিদিন গড়ে ৬৮ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি হয়েছে। এ টমেটো আকারে বড়। খেতে সুস্বাদু। তাই দেশের বিভিন্ন জেলায় এ টমেটোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

শ্রীনগরের মো. ইমন হোসেন রাজু নামের এক পাইকার বলেন, এই টমেটোর মান খুবই ভালো। পরিবহন করার সময় টমেটো তেমন নষ্ট হয় না। রং ও আকার আকর্ষণীয়। খেতে দারুণ। এসব কারণে কলাবাড়ী ইউনিয়নের টমেটো বাজারে তুলনামূলকভাবে একটু বেশি দামে বিক্রি হয়। এ টমেটো বিক্রি করে কিছু লাভ থাকে। তাই প্রতিবছর এখান থেকে টমেটো নিয়ে ঢাকা, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করে থাকি।