গো-খাদ্য হিসাবে এ্যালজি উৎপাদন ও ব্যবহার

1664

এ্যালজি উৎপাদন

এ্যালজি কি:
এ্যালজি এক ধরনের উদ্ভিদ যা আকারে এক কোষী থেকে বহুকোষী বিশাল বৃক্ষের মত হতে পারে। তবে, আমরা এখানে দুটি বিশেষ প্রজাতির এক কোষী এ্যালজির কথা উল্লেখ করবো, যা হলো কোরেলা এবং সিনেডসমাস, এ দুটি গো-খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায়। এরা সূর্যলোক, পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও জৈব নাইট্রোজেন আহরণ করে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বেঁচে থাকে। এরা অত্যন্ত দ্রুত বর্ধনশীল বিশেষ করে বাংলাদেশের মত উঞ্চ জলবায়ুতে।

এ্যালজির পুষ্টিমাণ:
এ্যালজি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় পুষ্টিকর খাদ্য যা বিভিন্ন আমিষ জাতীয় খাদ্য যেমন, খৈল, শুটকি মাছের গুরা ইত্যাদির বিকল্প হিসাবে ব্যবহার হতে পারে। শুষ্ক এ্যালজিতে শতকরা ৫০-৭০ ভাগ আমিষ বা প্রোটিন, ২০-২২ ভাগ চর্বি এবং ৮-২৬ ভাগ শর্করা থাকে। এছাড়াও এ্যালজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং বিভিন্ন ধরনের বি ভিটামিন থাকে।

এ্যালজি চাষের প্রয়োজনীয় উপকরন:
এ্যালজির বীজ, কৃত্রিম অগভীর পুকুর, পরিস্কার স্বচ্ছ কলের পানি, মাসকালাই বা অন্যান্য ডালের ভূষি এবং ইউরিয়া।

এ্যালজির উৎপাদন পদ্ধতি:

  • প্রথমে সমতল, ছায়াযুক্ত জায়গায় একটি কৃত্রিম পুকুর তৈরী করতে হবে। পুকুরটি লম্বায় ১০ ফুট, চওড়ায় ৪ ফুট এবং গভীরতা ১/২ ফুট হতে পারে। পুকুরের পাড় ইট বা মাটির তৈরী হতে পারে। এবার ১১ ফুট লম্বা, ৫ ফুট চওড়া একটি স্বচ্ছ পলিথিন বিছিয়ে কৃত্রিম পুকুরের তলা ও পাড় ঢেকে দিতে হবে। তাছাড়া, মাটির বা সিমেন্টের চাড়িতেও এ্যালজি চাষ করা যায়।
  • ১০০ গ্রাম মাসকলাই বা অন্যান্য ডালের ভূষিকে ১ লিটার পানিতে সারারাত ভিজিয়ে কাপড় দিয়ে ছেঁকে পানিটুকু সংগ্রহ করতে হবে। একই ভূষিকে অন্তত তিনবার ব্যবহার করা যায়, যা পরবর্তীতে গরুকে খাওয়ানো যায়।
  • এবার কৃত্রিম পুকুরে ২০০ লিটার পরিমাণ পরিস্কার পানি, ১৫-২০ লিটার পরিমাণ এ্যালজির বীজ, যা এ্যালজির ঘনত্বের উপর নির্ভর করে এবং মাসকলাই ভূষি ভেজানো পানি নিয়ে ভালোকরে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর ২-৩ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া নিয়ে উক্ত পুকুরের পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
  • এরপর প্রতিদিন সকাল, দুপুর, বিকাল কমপক্ষে তিনবার উক্ত এ্যালজির কালচারকে নেড়ে দিতে হয়। পানির পরিমাণ কমে গেলে নতুন করে পরিমাণ মত পরিস্কার পানি যোগ করতে হয়। প্রতি ৩/৪ দিন পর পর পুকুর প্রতি ১-২ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া ছিটালে ফলন ভাল হয়।
  • এভাবে উৎপাদনের ১২-১৫ দিনের মধ্যে এ্যালজির পানি গরুকে খাওয়ানোর উপযুক্ত হয়। এসময় এ্যালজির পানির রং গাঢ় সবুজ বর্ণের হয়। এ্যালজির পানিকে পুকুর থেকে সংগ্রহ করে সরাসরি গরুকে খাওয়ানো যায়।
  • একটি পুকুরের এ্যালজির পানি খাওয়ানোর পর উক্ত পুকুরে আগের নিয়ম অনুযায়ী পরিমাণ মত পানি, সার এবং মাসকলাই ভূষি ভেজানো পানি দিয়ে নতুন করে এ্যালজি কালচার শুরু করা যায়, এ সময় নতুন করে এ্যালজি বীজ দিতে হয় না।
  • যখন এ্যালজি পুকুরে পানির রং স্বাভাবিক গাঢ় সবুজ রং থেকে বাদামী রং হয়ে যায় তখন বুঝতে হবে যে উক্ত কালচারটি কোন কারনে নষ্ট হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে, নতুন করে কালচার শুরু করতে হবে। এ কারনে এ্যালজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। চলবে…..

সূত্র: বিএলআরআই