গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি চাষ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের চাষিরা। অসময়ের ফুলকপির ব্যাপক চাহিদা থাকার পাশাপাশি দামও ভালো পাচ্ছেন তারা। এছাড়া এই ফুলকপি চাষে জৈব বালাইনাশক ও কেঁচো সার ব্যবহার চাষিদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
সাধারণত আমাদের দেশে ফুলকপি চাষ করা হয় হেমন্ত ও শীতকালে। অগ্রহায়ণ, পৌষ ও মাঘ মাসে দেখা মিলে ফুলকপির। কিন্তু এখন চাষ হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি। ফুলকপি চাষে খরচ কম হওয়ায় বাড়ছে জনপ্রিয়তাও। রাজশাহী অঞ্চলের বরেন্দ্রভূমিসহ বিভিন্ন এলাকায় এই চাষ দেখা যাচ্ছে। এতে লাভবান বেশি হচ্ছেন কৃষকরা।
বর্তমানে শীত মৌসুমের তুলনায় অ–মৌসুমি সবজিচাষিদের ভালো মুনাফা হচ্ছে। কৃষি বিভাগও এসব ফসল চাষে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ করছে। ফুলকপি শীতকালীন সবজি হলেও গ্রীষ্মকালে ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদাও ভালো। কৃষকরা লাভবান হওয়ার জন্য কয়েক বছর ধরে এই অঞ্চলে গ্রীষ্মের মৌসুমে শীতকালীন সবজি চাষ করছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ হচ্ছে। গোদাগাড়ী, পবা, পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলায় ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করা হচ্ছে। চাষ ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় চাষিরা ফুলকপি চাষে ঝুঁকছেন বেশি। এদিকে রাজশাহীর বাজারে কয়েক সপ্তাহ ধরে পাইকারি ও খুচরা বাজারে সবজিচাষিদের অবস্থা সন্তোষজনক দেখা যাচ্ছে।
পবা উপজেলার ধমিলা গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম জানান, খুচরা বাজারে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে থেকে ৮০ টাকায়। কয়েক সপ্তাহ আগেও দাম ছিল অনেক বেশি। চলতি মৌসুমে পাঁচ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করা হয়েছে। সেগুলো তুলতে আরও সপ্তাহ খানেকের মতো লাগবে। তিনি বলেন, শীতকালের চেয়েও ভালো ফলন পেয়েছি। বর্তমানে বাজারে গ্রীষ্মকালীন ফুলকপির ব্যাপক চাহিদা থাকায় লাভবান হবেন বলে আশা করছি। আশানুরূপ ফলন পাওয়ায় তার আশপাশের চাষিরা গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
গোদাগাড়ী উপজেলার গোলাই গ্রামের আরেক কৃষক মিলন (৪৫) প্রায় ১২ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন। ছয়–সাত দিন ধরে তিনি ফুলকপি বিক্রি করছেন। তিনি গত সপ্তাহে জমিতেই এক লাখ ৬০ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করেছেন। মিলন বলেন, উৎপাদন খরচ প্রায় ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু বাজারে দাম বেশি থাকায় ভালো দামে বিক্রি করা হচ্ছে ফুলকপি। জুন মাসে প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ শুরু করেছিলাম। এই চাষ আগামী শীত পর্যন্ত চালিয়ে যাব। এছাড়া ফুলকপি ক্ষেতে চাষ করেছেন মরিচ ও ধনিয়াপাতা। এটাকে এলাকার লোকজন ‘ফাউ’ ফসল বলে আখ্যায়িত করেন।
গোদাগাড়ী উপজেলার উপ–সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আতনু সাকের বলেন, এ অঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষের প্রতি কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। বর্তমানে শুধু দেওপাড়া ইউনিয়নের ঈশ্বরীপুর গ্রামের ৪০ কৃষক ৩০০ বিঘা জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করছেন। সবজি চাষ লাভজনক করতে কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ধানসহ শস্যের তুলনায় সবজি চাষ বেশি লাভজনক। এই চাষে কৃষকরা বেশি ঝুঁকছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক মোজদার হোসেন জানান, শীতকালীন সবজি হলেও বর্তমানে জেলায় ব্যাপকভাবে গ্রীষ্মকালীন ফুলকপির চাষ হচ্ছে। এরই মধ্যে চাষিরা ফুলকপি চাষে সফল হয়েছেন। চাষাবাদে বৈচিত্র্য আনা এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে অমৌসুমে চাষ করা কিছু সবজি। এই অঞ্চল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার জন্য চাষিদের কাছেও আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। এসব সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।