জলবায়ুর পরিবর্তন বিশেষ করে উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বিশ্বের গ্রীষ্ম মণ্ডলীয় দেশগুলির ফসলহানির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াবে কীট পতঙ্গ। মার্কিন একটি গবেষণা এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
বৈশ্বিক তাপমাত্রার প্রতি ডিগ্রী বৃদ্ধির সাথে সাথে অন্তত ১০-২৫% বেশি গম, চাল এবং ভুট্টা ধ্বংস করবে কীট, গবেষকদের হিসেব তাই বলছে।
উষ্ণতা এসব ফসল নাশক কীটকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে এবং সেগুলোর খাবার গ্রহণের পরিমাণও যাবে বেড়ে। সেইসাথে হবে তাদের বংশবৃদ্ধি।
আর তার প্রভাব পরবে বিশ্বের প্রধান প্রধান খাদ্যশস্যে, গবেষণাপত্রটির সহ-লেখক কার্টিস ডয়েচ-এর এমনই মত।
‘বর্তমানে কীটপতঙ্গের খাবারের পরিমাণ ১২টি রুটির সমতুল্য। তবে এই শতাব্দীর শেষেও যদি এই হারে সামগ্রিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে তবে এসব কীটের খাবার গ্রহণের মাত্রা আরও দুটি রুটি বেশি হবে।’- ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের গবেষকরা এমনটি জানিয়েছে বিবিসিকে।
গবেষণায় কি দেখা যাচ্ছে?
প্রফেসর ডয়েচ, যশুয়া টিউকসবারি এবং তাদের সহকর্মীরা পুরো বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। তাতে পুরো বিশ্বের মানুষের প্রধান তিনটি খাদ্যশস্যকে তারা বেছে নেন।
কৃষিতে ড্রোনের ব্যবহার কি ফসল উৎপাদন বাড়াবে?
বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণায় তারা পুরো বিশ্ব থেকে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে একটি গাণিতিক গণনা করেন। যা ইঙ্গিত দেয় যে, তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে ফসলের ক্ষতি বেশি করে কীটপতঙ্গ।
গবেষকদের দলটি ৩৮ প্রজাতির ক্ষতিকর পোকার তথ্য তাদের গাণিতিক মডেলের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। তারা দেখতে চেয়েছেন যে কিভাবে তাপমাত্রা এসব কীটের বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে সেই সাথে খাদ্য শস্যের ওপর তাদের প্রভাব। ভবিষ্যৎ ফসলহানি বুঝতে ছিল এই পরীক্ষা চালানো হয়।
জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে দেখা গেছে তাপমাত্রা প্রতি ডিগ্রী বৃদ্ধিতে ফলসের ক্ষতি হয়ে থাকে শতকরা ৫ ভাগ।
আর সেখানে কীটপতঙ্গের প্রভাব যোগ হলে সে ক্ষতির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ৫০%, যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর টিউকসবারি অন্তত তাই বলছেন।
কোন কোন অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হবে বেশি?
প্রফেসর টিউকসবারির মতে যত তাপমাত্রা বাড়বে তত পোকামাকড়ের বংশবৃদ্ধি হবে এবং তত দ্রুত তারা ফসল খেতে শুরু করবে।
তার মতে, ‘‘এর প্রভাব বেশি দেখা যাবে ইউরোপের ‘ব্রেড বাস্কেট’ ও মার্কিন ‘কর্ণ জোন’-এ।” তিনি আরও বলেন যে, “বহু ইউরোপীয় দেশেই এধরনের প্রভাব ৫০-১০০% পর্যন্ত দেখা যেতে পারে।”
এর অর্থ ইউরোপে গম উৎপাদনে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে অন্তত ১৬ মিলিয়ন।
ইউরোপের ভুট্টা ক্ষেতের একটি পেটুক পোকাগুলো উষ্ণ দেশগুলোয় বংশবৃদ্ধি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কিন্তু ক্রান্তিয় অঞ্চলের তাপমাত্রা ইতোমধ্যেই এসব পোকামাকড়ের বৃদ্ধির জন্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এখন সেখানে তাদের বংশ বৃদ্ধির হার বরং কমেছে।
এই পরিস্থিতি থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা সম্ভব?
বিশ্বের অন্যতম বেশি ফসল উৎপাদনকারী অঞ্চল এই আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং চীন।
যখন ভূট্টা, ধান এবং গম ক্ষতিগ্রস্ত হবে তখন আসলেই সেট হবে একটি বিপর্যয়, কেননা শরীরের প্রয়োজনীয় ক্যালরির ৪২% আমরা পাই এসব শস্য থেকে।
জলবায়ু মডেল বলছে যে ২১০০ সাল নাগাদ বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ২-৫ ডিগ্রী বৃদ্ধি পাবে।
আর সেক্ষেত্রে এই শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদই অন্তত ২ ডিগ্রী তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পোকামাকড় দ্বারা ফসলের ক্ষতির যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা সে সময়ের মধ্যেই ঘটতে শুরু করবে বলে গবেষকরা মনে করছেন।
কি হতে পারে সমাধান?
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে, ফসলের অভিযোজনে জোর দিতে হবে। এমন অভিমত প্রফেসর টিউকসবারির।
ইউরোপে বিশেষ করে ব্রিটেনে ফসলের ক্ষেতে কীটনাশকের ব্যবহার খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে, উষ্ণ জলবায়ু কীটপতঙ্গকে আরও বেশি কীটনাশক প্রতিরোধী করে তুলতে পারে।
তাই কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে অনেক বেশী জৈবিক পদ্ধতি ব্যবহারে জোর দেন প্রফেসর পপি। তারমতে লেডিবার্ড জাতীয় পোকা ব্যবহার করে ক্ষতিকর পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
এছাড়া হতে পারে ফসল বপনের সময়ে পরিবর্তন এনে কিংবা কীট-প্রতিরোধী ফসলের জাত চাষ করে।
এ সংক্রান্ত গবেষকদের মতে সবগুলোর পদ্ধতির সমন্বিত ব্যবহার অনেক বেশি কার্যকর হতে পারে এ ব্যাপারে। বিবিসি বাংলা।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন