ঘরোয়া উদ্ভিদের রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রণ – প্রথম পর্ব

668

আমরা কে না ঘরোয়া উদ্ভিদ ভালবাসি? ছোট ও মাঝারি আকৃতির এই গাছগুলো ঘরের কোণে, দরজার পাশে, দেওয়ালে, বারান্দায় ইত্যাদি স্থানকে অলংকৃত করে রাখে। এরা দেখতেও যেমন সুন্দর, এদের যত্ন করতেও তেমন একটা ঝক্কি পোহাতে হয় না। তবে অযত্ন ও অবহেলার কারণে আপনার ঘরোয়া উদ্ভিদটি অল্প দিনেই মরে যেতে পারে। বেশি কিংবা খুব কম পরিমাণ পানি দেওয়া, আলো, তাপ বা সারের মতো উপাদানগুলি অপর্যাপ্ত ব্যবহার ঘরোয়া উদ্ভিদে অনেক ধরণের সমস্যার সূত্রপাত ঘটাতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে নানানরকম পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে দেখা দেয়। বেশ কিছু পোকামাকড় এবং কীটপতঙ্গ ঘরোয়া উদ্ভিদের ক্ষয়ক্ষতি করে। এই কীটগুলি প্রায়শই নার্সারি থেকে সদ্য কেনা ঘরোয়া উদ্ভিদে বা গ্রীষ্মকালে বাইরে রাখা হয় এমন উদ্ভিদে অবস্থিত থেকে গাছের ক্ষয়ক্ষতি করে থাকে।

প্রতিরোধ

হাউজপ্ল্যান্টে পোকামাকড় এবং সম্পর্কিত কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের সর্বোত্তম উপায় হল প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ। কেননা কোনো পোকামাকড় আক্রমণের পর প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণের চেয়ে পূর্বেই প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া সবচেয়ে সহজ। বেশ কয়েকটি সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারে যা আপনার ঘরোয়া উদ্ভিদে কীটপতঙ্গ আক্রমণের সম্ভাবনা কমিয়ে দিবে।

ক) ধীরে ধীরে ঘরোয়া উদ্ভিদ বৃদ্ধি পেতে পারে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করুন চাপযুক্ত উদ্ভিদগুলি কীটপতঙ্গগুলিতে বেশি সংবেদনশীল হতে থাকে।

খ) নতুন উদ্ভিদ কেনার পর ঘরে আনার আগে খুব ভাল করে এটিকে পর্যবেক্ষণ করে নিন, কোনোরকম কীটপতঙ্গ আছে কিনা।

খ) গ্রীষ্মকালে অনেকসময়ই দিনের একটা সময়ে আমরা ঘরোয়া উদ্ভিদকে ছাদে রেখে আসি। এটিকে বাসায় নিয়ে আসার পূর্বে ভাল করে উল্টেপাল্টে দেখে নিন। টবের নিচের ছিদ্রসহ।

গ) আপনি যদি নিয়মিত নতুন নতুন ঘরোয়া উদ্ভিদ নার্সারি থেকে কিনে থাকেন, তবে আপনার বাসায় থাকা আগের উদ্ভিদগুলোকে নতুন উদ্ভিদ থেকে ৫-৬ সপ্তাহ আলাদা করে রাখুন। আগে নিশ্চিত হয়ে নিন নতুন উদ্ভিদগুলোয় কোনোরকম পোকামাকড়ের আলামত আছে কিনা।

ঘ) আলাদা রাখা গাছগুলোকে সপ্তাহে একবার নিয়মিতভাবে কীটপতঙ্গ বা ক্ষতির কোনো লক্ষণ রয়েছে কিনা তা জানতে খুবই মনোযোগ সহকারে পরীক্ষা করুন। পাতার নিচে যেখানে স্বভাবত কীটপতঙ্গ লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করে, সেসব স্থানে বিশেষভাবে মনোযোগ দিন। একটি 10x ম্যাগনিফাইং লেন্স ব্যবহার করতে পারেন। এটি ছোট এবং কীটপতঙ্গের লার্ভাকে সহজে দেখতে সাহায্য করবে। অপরিণত অবস্থায় ধরা পড়লে এদের ইনফেসটেশন নিয়ন্ত্রণ করা বেশ সহজ হবে।

ঙ) গাছকে নতুন টবে স্থানান্তরের পূর্বে বাইরে থেকে আনা মাটির পরিবর্তে ঘরে তৈরি পটিং মিক্স ব্যবহার করুন, বাইরের মাটি এটি কীটপতঙ্গগুলির উত্স হতে পারে।

চ) প্রতি দুই থেকে তিন সপ্তাহ অন্তর অন্তর গাছগুলোকে পানির ঝাপটা দিন। কিংবা সবচেয়ে ভাল হয় গাছকে ধুয়ে দিলে। এটি নতুন আক্রমণ করা পোকামাকড়ের উপদ্রবকে হ্রাস করে। গাছকে পানি দিয়ে সিক্ত করার পূর্বে মাটির ক্ষতি রোধ করতে একে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল বা প্লাস্টিকের মোড়ক দিয়ে ঢেকে দিন। বড় উদ্ভিদগুলোর পাতার ওপরের এবং নিচের পৃষ্ঠতলগুলি নরম ও ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন। পারলে জীবাণুনাশক দিয়ে গাছগুলোকে স্প্রে করে ফেলুন।

ছ) বাইরে থেকে আনা ফল ও ফুল পোকামাকড়ের উত্স হতে পারে, তাই ইন্ডোর প্ল্যান্ট থেকে এদের আলাদা রাখুন।

জ) কীটপতঙ্গ বাইরে থেকে বাড়িতে প্রবেশ করতে পারে, তাই ইন্ডোর প্ল্যান্ট রাখার স্থানের আশেপাশের জানালা এবং দরজা ভাল ফিট কিনা, তা নিশ্চিত হয়ে নিন।

জৈব নিয়ন্ত্রণ:

জৈব নিয়ন্ত্রণের প্রথম পদক্ষেপ হল, কীটপতঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় থাকা যেকোনও উদ্ভিদকে বিচ্ছিন্ন করা। কীটপতঙ্গ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ না হওয়া অবধি উদ্ভিদটিকে বাড়ির অন্যান্য গাছপালা থেকে আলাদা রাখুন। এই প্রক্রিয়াটি কয়েক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় চলমান রাখা যেতে পারে।

ঘরোয়া উদ্ভিদে কীটপতঙ্গ সমস্যার রাসায়নিক সমাধান অনুসন্ধান করার আগে, বেশ কয়েকটি কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে, যা বিবেচনা করা উচিত। তবে, কোনো একটি পদ্ধতিতে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করবেন না।

ক) পাতার সাথে যদি উদ্ভিদের কোনো বিচ্ছিন্ন অংশও আক্রান্ত হয় তবে আক্রান্ত অংশগুলো ধ্বংস করে ফেলুন। যদি শিকড় আক্রান্ত হয় তবে উদ্ভিদটির একটি কাটিং নিয়ে কলম করে ফেলুন করুন। একটি পরিষ্কার টব এবং জীবাণুমুক্ত পটিং মিক্স দিয়ে শুরু করতে ভুলবেন না।

খ) আক্রান্ত হওয়ার প্রারম্ভিক ধাপে হ্যান্ড মেথডে অপসারণ করা যেতে পারে।

গ) এফিডস এবং মিলিবাগের মতো পোকামাকড় দূর করতে অ্যালকোহল ডুবানো একটি সুতির কাপড় ব্যবহার করুন।

গ) হোস পাইপ দিয়ে তুমুল বেগে স্প্রে করলে অনেক কীটপতঙ্গ দূর হতে পারে। গাছের পৃষ্ঠতলগুলোয় ভালভাবে স্প্রে করুন। এভাবে নিয়মিত পানি স্প্রে করে মাকড়সা মাইট নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

ঘ) কোনওপ্রকার কীটনাশক ব্যবহার করলে প্রায়শই লার্ভাকে মেরে ফেলা যেতে পারে। কীটনাশকের গুড়োকে পানির সাথে দ্রবীভূত করে স্প্রে করতে হয়। তবে দ্রবণটি শুকিয়ে গেলে, এটি পোকামাকড়ের বিরুদ্ধে কোনও প্রভাব ফেলবে না। কীটনাশকগুলি নরম দেহযুক্ত এবং এই সম্পর্কিত কীটপতঙ্গগুলির বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর, যেমন এফিডস, মিলিবাগ, থ্রিপস, হোয়াইটফ্লাই বা সাদামাছি এবং মাকড়সা মাইট। যেহেতু কীটপতঙ্গগুলি লার্ভা অবস্থায় অনেক ক্ষুদ্র হওয়ায় নিজেদের লুকিয়ে রাখতে পারে, তাই প্রায়শই কয়েকটি ধাপে এদের নির্মূল করতে হয়।।

ঙ) যদি ঘরোয়া উদ্ভিদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং খুব একটা মূল্যবান না হয়, তবে সর্বোত্তম এবং সহজ সমাধান হল উদ্ভিদ এবং এর মাটিকে ফেলে দেওয়া।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১১জুলাই২০