টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইলের লাল পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে ভিনদেশি ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ের অনেক চাষি।
ঘাটাইল উপজেলার পাহাড়িয়া এলাকায় প্রায় একশ একর জমিতে ড্রাগন ফলের আবাদ হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে এ ফলের চাষ করে তারা বেশ লাভবানও হচ্ছেন।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার চাম্বলতলা গ্রামের উচ্চশিক্ষিত গৃহবধূ সুলতানা তাহমিনা সিদ্দিকা (তন্নী)। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন বিভাগে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে কিছুদিন একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তার স্বামী আবু হাসনাত তালুকদার পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। স্বামীর উৎসাহে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে কৃষি ফার্ম করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে স্বামীর সহায়তায় ঘাটাইল উপজেলার কাজলা গ্রামে ৮ একর জমির ওপর টিএম অ্যাগ্রো ফার্ম নামে একটি কৃষি ফার্ম গড়ে তুলে প্রথমেই ভিনদেশি ফল ড্রাগনের আবাদ শুরু করেন।
বাগান ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি শোভা পাচ্ছে ড্রাগন ফলের গাছ। কোনো কোনো গাছে ফুল ফুটেছে। ফুল সাদা লম্বাটে এবং অনেকটা নাইট কুইনের মতো দেখতে। কিছু গাছে ফল এসেছে। তাহমিনা জানান এবারই তার বাগানে প্রথম ফল এসেছে। বছরের মে থেকে নভেম্বর ছয় মাস পর্যন্ত ড্রাগন গাছ থেকে ফল পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রতিকেজি ড্রাগন ফল বাগান থেকে পাইকারি সাড়ে তিন শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তার বাগান থেকে এরই মধ্যে এক হাজার কেজি ফল বিক্রি করা হয়েছে। বাগান থেকে এ বছর প্রায় ১০/১২ লাখ টাকার ফল বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি জানান।
তাহমিনা জানান, ড্রাগন ফলের আদি নিবাস মেক্সিকো। বর্তমানে আমেরিকা, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় এ ফল বেশ জনপ্রিয় খাবার হিসাবে স্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশেও ব্যক্তি উদ্যোগে এ ফলের আবাদ শুরু হয়েছে। মিষ্টি ও হালকা টক জাতীয় স্বাদের নানা পুষ্টিগুণে ভরা এ ফল। গাছ লাগানোর এক বছরের মধ্যে ফল আসা শুরু করে এবং ৩০-৪০ দিনের মধ্যে তা খাওয়ার উপযোগী হয়। গাছের সঠিক পরিচর্যা করলে ২৫-৩০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায় বলে জানান তাহমিনা। ভেষজ ও ওষধিগুণ থাকায় ক্যান্সার থেকে শুরু করে ডায়োবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে ড্রাগন ফল।
আরেক ড্রাগন ফল চাষি উপজেলার করিমগজ্ঞ গ্রামের কামরুজ্জামান মিন্টু। তিনি জানান, ২০১৫ সালে তারা ১৬ জন মিলে করিমগজ্ঞ অ্যাগ্রো টেক লি. নামে একটি কৃষি ফার্ম গঠন করে সাড়ে তিন এক জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান করেছেন। ভেষজ জাতীয় এ ফল অত্যান্ত লাভজনক। এই ফল চাষ করার জন্য জৈব সারই যথেষ্ট। অতিরিক্ত অন্য কোনো সার বা কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। তাদের বাগানে গাছ রয়েছে ১৩৪০টি। ২০১৭ সাল থেকে বাগানে ফল আসতে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত তারা ১৪৫ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। ঢাকার স্বপ্ন ও আগোরাসহ শপিংমলগুলোতে ড্রাগন ফল বিক্রির সরবরাহ করে থাকেন বলে জানান মিন্টু।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা এস এম শামসুল আলম ঘাটাইল উপজেলার পাহাড়িয়া অঞ্চল মধুপুরচালা, মুরাইদ গ্রামে ৮ একর জমিতে ড্রাগন ফলের বাগন করেছেন। বাগানে ফল আসতেও শুরু করেছে। ফল বিক্রিও শুরু করেছেন তিনি। এ ছাড়া উপজেলার বাসাবাইদ গ্রামে ডা. রুস্তম আলী পাঁচ বন্ধুকে নিয়ে কেবিডি অ্যাগ্রো ৫ নামে কৃষি ফার্ম গঠন করে ২০ একর জমিতে ড্রাগন ফলের চারা লাগিয়েছেন। বাগানটিতে এবার ফল আসতে শুরু করেছে। পাহাড়িয়া এলাকার বিভিন্ন গ্রামে ড্রাগন ফলের ছোট ছোট বাগান রয়েছে বলে স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মতিন বিশ্বাস বলেন, পাহাড়িয়া এলাকা ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগী। ঘাটাইল উপজেলায় প্রায় এক শ একর জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান রয়েছে। প্রায় ৩০/৩৫ একর জমি থেকে ড্রাগন ফল সংগ্রহ করে বিক্রি শুরু করেছেন চাষিরা। ড্রাগন ফল চাষ লাভজনক হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ করার জন্য আমরা চাষিদের উৎসাহিত করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করছি। সূত্র: কেকে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন