চট্টগ্রামের বাতাসে ৭ গুণ বেশি বস্তুকণা মিলেছে

432

download (1)

বাতাসে সর্বোচ্চ যে পরিমাণ ধুলা বা ক্ষতিকর উপাদান থাকলে তাকে সহনীয় পর্যায় বলা যায়, শীত মৌসুমের শুরুতেই তার চেয়ে ৭ গুণ বেশি ‘অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা’ ভাসছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাতাসে!

সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী পাহাড় মোড়ে বাতাসে বস্তুকণার উপস্থিতি পাওয়া গেছে ১৩৪০ পিএম। অথচ বাতাসে থাকা বস্তুকণার সহনশীল উপস্থিতির মাত্রা সর্বোচ্চ ২০০ পিএম। এ তথ্য পেয়েই পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসাকে সতর্ক করা হয়েছে। ওয়াসার উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যাতে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে না ওঠে তাও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে এক চিঠিতে।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ড ও ওয়াসার চলমান প্রকল্পের কারণে বায়ুদূষণের অভিযোগ অনেক দিনের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এবারই নগরের শীত মৌসুম শুরুর আগেই বায়ুর মান সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে দেখতে পাচ্ছেন তারা।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে উন্নয়ন প্রকল্প চলছে এমন এলাকাগুলোতে বাতাসে বস্তুকণার উপস্থিতি পরিমাপ করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণাগারের পক্ষ থেকে নগরের জামালখান মোড় এবং চেরাগী পাহাড় এলাকায় বাতাসে বস্তুকণার উপস্থিতি পরিমাপ করা হয়। এতে চেরাগী পাহাড়ের কাছে বস্তুকণার উপস্থিতি পাওয়া যায় ৬৪৯ পিএম এবং চারশ ফুট দূরে জামাল খান সড়কে পাওয়া যায় ১৩৪০ পিএম। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক রকমের ক্ষতিকর বলে উলেস্নখ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে জরুরি চিঠি দেওয়া হয়।

এর আগে গত মে মাসে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর আয়োজিত ‘বায়ুদূষণ’ বিষয়ক এক সেমিনারে উন্নয়ন কাজে সৃষ্ট ধুলাবালির কারণে বায়ুদূষণ ঘটছে বলে মত দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন। একই সেমিনারে অধ্যাপক মোশাররফ বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশের জিডিপির চার দশমিক তিন শতাংশ ক্ষতি হয় বলে দাবি করেন।

এদিকে শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই বাতাসে বেড়ে যাওয়া বস্তুকণার এ উপস্থিতি উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুস রোগসহ নানা জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন নগরবাসী। হাসপাতালে বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বায়ুদূষণের জন্য চলমান উন্নয়ন কাজকে দায়ী করা হলেও তা নিরসনে কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। রিপোর্টে জামালখান ও চেরাগী মোড়ের কথা বলা হলেও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের গুরুত্বপূর্ণ এক্সেস রোডসহ আশপাশের অবস্থা আরও খারাপ।

পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়াও কষ্টকর এই এলাকায়। বিবর্ণ রাস্তার পাশের সব গাছপালা, আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এর মধ্যেই রাস্তায় বেরুতে হচ্ছে লোকজনকে। ফলে নানা রকম রোগ-জীবাণুতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এই আধা কিলোমিটারের মধ্যে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল। যেখানে প্রতিদিনই বাড়ছে শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা। চিকিৎসকদের মতে, এদের বেশিরভাগই ধুলাবালিজনিত কারণে আক্রান্ত।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, নগরীতে বায়ুদূষণের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। তবে নগরীতে বায়ুদূষণের জন্য চলমান উন্নয়নমূলক কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করেছেন সিটি মেয়র। নগরীর বিভিন্ন সড়কে সিডিএ, ওয়াসাসহ নানা সেবাপ্রতিষ্ঠানের চলছে এই উন্নয়ন কাজ।

বৈশ্বিক বায়ুদূষণের ঝুঁকিবিষয়ক প্রতিবেদন ‘দ্য স্টেট অব গেস্নাবাল এয়ার-২০১৯’ এর তথ্য অনুযায়ী, বায়ুদূষণজনিত রোগে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে এক লাখ ২৩ হাজার মানুষ মারা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিকস অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন এবং হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে করা প্রতিবেদনটি চলতি বছরের ৩ এপ্রিল প্রকাশিত হয়।

এই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বায়ুদূষণে মৃতু্যর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ পঞ্চম। আর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৈশ্বিক বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজু্যয়ালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশ এখন বাংলাদেশ।

বায়ুদূষণের দিক দিয়ে বাংলাদেশের ধারে কাছেও নেই কোনো দেশ। প্রায় ২১ পিএম কম বায়ুদূষণ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান। এরপর ভারত, আফগানিস্তান ও বাহরাইন।

সোমবার সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের মধ্যে ৫ নম্বরে ছিল ঢাকা।

প্রতিষ্ঠানটির তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে গড় বায়ুদূষণের পরিমাণ ৯৭ দশমিক ১০, যেখানে পাকিস্তানের ৭৪ দশমিক ২৭, ভারতের ৭২ দশমিক ৫৪, আফগানিস্তানের ৬১ দশমিক ৮০ এবং বাহরাইনের ৫৯ দশমিক ৮০ পিএম২.৫।

সোমবার (সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত) এই সময় ঢাকা শহরে বায়ুদূষণের পরিমাণ ছিল ১৭১ পিএম। তখন ২০৯ পিএম নিয়ে প্রথমে ভারতের দিলিস্ন, তারপর ১৯২ পিএম নিয়ে পাকিস্তানের লাহোর, ১৮৭ পিএম নিয়ে কলকাতা ও ১৮২ পিএম নিয়ে মঙ্গোলিয়ার উলানবাটর চতুর্থ স্থানে ছিল।

তীব্র বায়ুদূষণের ফলে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ সতর্কতা জারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হলেও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ