দেশের সাধারণ মানুষের প্রাণিজ আমিষের সিংহভাগ পোল্ট্রি শিল্প যোগান দিলেও নানা বিভ্রান্তির তথ্য থেকে এ শিল্প রেহাই যেমন পাচ্ছে না তেমনি পশু জবাই ও মাংশ নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণীত হলেও বিধিমালা তৈরিসহ নানা প্রাতিষ্ঠানিক জঠিলতায় জনগণের কাছে কাঙ্ক্ষিত সেবা পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছে না দেশের প্রাণিসম্পদ বিভাগ। যার কারণে কিছু মানহীন পোল্ট্রি ফিড বাজারজাত হচ্ছে, খুচরা পোল্ট্রি বিক্রেতারা যত্রতত্র অপরিষ্কারাছন্নভাবে পোল্ট্রি জবাই ও বিক্রি করছে।
নিরাপদ খাদ্য ও মানহীন পোল্ট্রি বিষয়ে জনমনে এখনও ভ্রান্ত থাকায় এখাতে উদ্যোক্তারা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে পোল্ট্রি শিল্পে জড়িত উদ্যোক্তা ও খামারীরা দিনের পর দিন লোকসান গুনতে বাধ্য হচ্ছে। আর এ শিল্পের উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশীয় প্রাণিজ আমিষের যোগান হুমকির মুখে পড়বে। তাই পোল্টি শিল্পের সাথে জড়িত পোল্ট্রি ফিড, খামারী ও ব্রয়লার উৎপাদকদের নিরাপদ ও মানসম্মত পোল্ট্রি খাবার, উৎপাদন, সরবরাহ এবং খুচরা পর্যায়ে লাইভ বার্ড বিক্রিতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত, যথাযথ মান নিশ্চিত করতে এখাতে মাঠ পর্যায়ে নজরদারি বাড়াতে হবে।
পাশাপাশি সাধারণ ভোক্তা-ক্রেতা পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও ক্যাব যৌথভাবে কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
১১ জানুয়ারি খুলসীস্থ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকতার সাথে দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের জাতীয় স্বার্থসংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম অনুষ্ঠিত অ্যাডভোকেসি সভায় উপরোক্ত সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রিয়াজুল হক জসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আলোচনায় অংশ নেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব কেন্দ্রিয় কার্যালয়ের আইবিপি প্রজেক্ট কো-অর্র্ডিনেটর মোস্তফা কামাল, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ আবদুল মান্নান, জেলা সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শাহিদা আকতার, পাঁচলাইশ থানা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সেতু ভূষণ দাস, ডবলমুরিং থানা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রফিবুল হাসান, সিটি কর্পোরেশনের ভেটেরেনারি সার্জন ডা. আবুল হাসেম, ভেটেরেনারি সার্জন ডা. সুমি চৌধুরী, ক্যাব চট্টগ্রামের ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর মশিউর রহমান, ফিল্ড অফিসার শাম্পাকে নাহার ও জিয়াউল হায়দার খান শিহাব প্রমুখ।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রিয়াজুল হক জসিম সভায় জানান, বলা হয় দেশে পোল্ট্রি শিল্পের ফিড এর মান নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রামে একটি আধুনিক পরীক্ষার দ্রুত চালুর অপেক্ষায় আছে। এটি পুরোপুরি শুরু হলে আমদানিকৃত ও দেশীয় উৎপাদিত ফিডের মান যাচাই সহজ হবে। তারপরেও চট্টগ্রামে ভেটেরেনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় একটি পরীক্ষাগার চালু আছে যেখানে বর্তমানে পরীক্ষা সম্পন্ন করা হচ্ছে। এছাড়াও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাদ্য আইন ২০১০ অনুযায়ী লাইসেন্সবিহীন কোন পোল্ট্রি ফিড বাজারে ছাড়তে পারে না এবং বিদেশ থেকে আমদানি করতে হলেও লাইসেন্স নিতে হয়। একই সাথে খুচরা বিক্রেতাদেরও লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় দেশীয় উৎপাদিত ও বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এবং খুচরা পোল্ট্রি ফিডের মান তদারকিতে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও ক্যাব যৌথভাবে মনিটরিং করবে, মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন এবং প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে লাইসেন্সবিহীন ও নিম্নমানের ফিডের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোক্তা পর্যায়ে পোল্ট্রি, ব্রয়লার, ডিম, মাছ ও মাংস বিষয়ে সঠিক তথ্য পৌঁছাতে সচেতনতা বিকাশে যৌথভাবে প্রচারণা কর্মসূচি পরিচালনা করবে। ভোক্তাদের কাছে পোল্ট্রি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পৌঁছাতে না পারলে প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি মিঠানো সম্ভব হবে না যা দেশের পুষ্টির চাহিদার যোগানে বড় প্রতিবন্ধক হবে। তাই দেশীয় প্রাণিজ আমিষের অভাব দূরীকরণ, পুষ্টির চাহিদা মিটানোর জন্য পোল্ট্রি শিল্পের মান উন্নয়নের পাশাপাশি এ খাতের বিষয়ে সাধারণ ভোক্তাদের মাঝে বৈজ্ঞানিক তথ্য পৌঁছানোর জন্য গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও ভোক্তাদের সহযোগিতা কামনা করা হয়।
প্রতিবেদক- শম্পা কে নাহার, ক্যাব বিভাগীয় কার্যালয়, চট্টগ্রাম।
নিউজবংলাদেশ.কম/এমএস