১৫ অক্টোবর বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস (Global Hand Washing Day)’ সারা বিশ্বে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ফুড সেফটি নেটওয়ার্ক (বিএফএসএন) এর সদস্য সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উদ্যোগে দিবসটি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ১২টি স্থানে একযোগে আয়োজন করা হয়।
নিরাপদ খাদ্য ও হাত ধোয়া বিষয়ে দেশের চলমান প্রচার প্রচারণার গতি সঞ্চারে এ বছরের প্রতিপ্রাদ্যের (Our Hands, Our future!) আমাদের হাত আমাদের ভবিষ্যত। তারই অংশ হিসেবে জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা FAO এর Food Safety Project এর সহযোগিতায় চট্টগ্রামে ২ দিনব্যাপী দিবসটি আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ ফুড সেফটি নেটওয়ার্ক (বিএফএসএন) এর সদস্য সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও নগর কমিটি এর আয়োজন করে।
কর্মসূচির আওতায় ১৫ অক্টোবর বিকেলে ঝাউতলা ওয়ারলেস কলোনি বঙ্গবন্ধু বিদ্যাপীঠ মিলনায়তনে সুবিধা বঞ্চিত সরকারি/বেসরকারি চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে ‘আমাদের হাত, আমাদের ভবিষ্যত’ শীর্ষক ছবি আকাঁ প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। ১৭ অক্টোবর র্যালি, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
র্যালি শেষে পুরস্কার বিতরণ ও আলোচনা সভায় ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মহিলা কাউন্সিলর আবিদা আজাদ।
আলোচনায় অংশ নেন কাট্টলী ইসলামিক সমাজ কল্যাণ পরিষদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলতাফ মাসুদ, সমাজসেবা অধিদপ্তরের সরকারি শিশু নিবাসের সমাজসেবা কর্মকর্তা নবিউল হক, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক জানে আলম, ক্যাব পাহাড়তলী থানার হারুন গফুর ভুইয়া, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি চৌধুরী কে এন এম রিয়াদ, আইএসডিই বাংলাদেশের কর্মসূচি সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সংগঠক মো. জহুরুল ইসলাম, সিএসডিএফের মাহবুবুল আলম, আজগর হোসেন প্রমুখ।
হাত ধোয়ার নিয়ে কলাকৌশল ব্যাখ্যা করেন সমাজ সেবা কর্মকর্তা নবিউল হক। পরে অতিথিরা চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন।
শিশুদের ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় ৪র্থ শ্রেণিতে টিকেট প্রিন্টিং প্রেস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবরিনা বিনতে আলো ১ম, ইউসেপ স্কুলের সুহেদা আকতার ২য়, ওয়ালেস কলোনী ঝাউতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে আফরিন আকতার ৩য় এবং ৫ম শ্রেণিতে ঝাউতলা ওয়ালেস কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সুমি আকতার ১ম, ওব্যাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রিয়া আকতারর ২য়, ওব্যাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জেসমিন আকতার তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।
সঠিক সময়ে ও সঠিকভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস রপ্ত করতে পারলে বেশ কটি প্রাণঘাতি রোগ বিশেষ করে ডায়রিয়া, আমাশয়, নিউমোনিয়া, টাইয়য়েড জন্ডিস এর প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ। কোমলমতি ছাত্র/ছাত্রীদের মাঝে এই হাত ধোয়ার অভ্যাস অতি গুরুত্বপূর্ণ কারণ তারা এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হয় এবং শিশুকালেই সুঅভ্যাস গঠনের প্রকৃত সময়।
অন্যদিকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি ২০৩০ এ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অসমতা হ্রাস বিষয়ক প্রধান তিনটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে হাতধোয়া বিশেষ অবদান রাখতে পারে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাস, ছাত্রছাত্রীদের স্কুলগামীতার হার বৃদ্ধি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠিার কর্মঘণ্টা ও আয়বৃদ্ধিতে হাত ধোয়ার অবদান বেশি।
এছাড়াও গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে হাতধোয়া কর্মসূচিতে ব্যয় আনুসাঙ্গিক অন্যান্য কর্মসূচিতে ব্যয়ের তুলনায় অনেক বেশি ফলদায়ক।
২ দিনব্যাপী কর্মসূচির সমাপনী দিনে সমাবেশে বিভিন্ন বক্তারা উপরোক্ত মন্তব্যগুলো করেন।
বক্তারা আরো বলেন, সরকার সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে নানামুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। তাই প্রতিটি পরিবারে নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। এবং রান্না, পরিবেশন বা গ্রহণের সময় দূষণের কবলে যেন না পড়ে সে বিষয়ে অনেক বেশি যত্নবান হতে হবে। সে কারণে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি সঠিক পদ্ধতিতে হাতধোয়া সম্পর্কে সকলকে স্বচ্ছ ধারনা দিতে হবে এবং হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি ও সাবান হাতে নাগলে রাখতে হবে। সকল পরিবার, স্কুল ও প্রতিষ্ঠানে যাতে এ ব্যবস্থাগুলি চলমান তাকে তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি হাত ধোয়ার অভ্যাস দৃঢ় করতে পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তি ও শিক্ষক/শিক্ষিকাদের উদ্যোগ নিতে হবে।
বক্তারা নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনকে তৃণমুল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে এ বিষয়ে সচেতনতা বিকাশে আরো উদ্যোগ গ্রহণ বিশেষ করে শিশু কিশোরদের মাঝে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্ঠি করার জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ এবং খাদ্য উৎপাদন, বিপনন কাজে নিয়োজিত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো উদোগেী হবার আহ্বান জানান।
বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্যবসায়ীরা সামাজিক দায়বদ্ধতার নামে বিশাল বিশাল বিজ্ঞাপন প্রদান, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দান খয়রাত করলেও ভোক্তাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্ঠিতে কোন অর্থ ব্যয় করছে না। অথচ ভোক্তাদের টাকায় তারা দিনে দিনে কোটিপতি হচ্ছেন। আবার অনেকেই এই টাকা রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যয় করলেও ভোক্তাদের জন্য কানাকড়িও জুটছে না।
ক্যাব আয়োজিত বিশ্ব হাতধোয়া দিবসের অনুষ্ঠান মালায় যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র/ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেন তাদের মধ্যে রয়েছে টিকেট প্রিন্টিং প্রেস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝাউতলা ওয়ারলেস কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু বিদ্যাপীঠ, ইউসেপ আমবাগান টেকনিক্যাল স্কুল, ব্র্যাক স্কুল ওয়ারলেস কলোনী, আইএসডিই সক্রেটিস লানিং সেন্টার, আইএসডিই রউফ লানিং সেন্টার, আইএসডিই নুরজাহান লানিং সেন্টার।
ঝাউতলা ওয়ালেস মতো সুবিধা বঞ্চিত এলাকায় বিশ্ব হাতধোয়া দিবসের ২ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান মালা আয়োজনে এলাকায় বিশেষ সাড়া ও কৌতুহলের সৃষ্ঠি হয়। চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় সকল অংশগ্রহণকারীকে সাবান ও পুরস্কার প্রদান করায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা প্রশংসা করেন। তারা আশা করে এভাবে বিভিন্ন দিবসে তাদের এলাকায় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করলে তাদের উৎসাহ অনেক বেশি বেড়ে যাবে। এ জন্য তারা ক্যাবকে ধন্যবাদ জানান।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম