চাঁদপুরে জমে উঠছে তরমুজের বাজার

84

পবিত্র রমজান উপলক্ষে ইফতারে ফল হিসেবে বিশেষ চাহিদা রয়েছে তরমুজের। সেই চাহিদা মেটাতে চলতি মৌসুমে চাঁদপুরে বেড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের তরমুজের সরবরাহ। প্রতিদিনই বিক্রি হচ্ছে কোটি টাকার তরমুজ। তবে এখন তরমুজের ভরা মৌসুম হলেও বাজারে দাম আকাশছোঁয়া। ব্যবসায়ী ও আড়তদার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে চাঁদপুরের হাটবাজারে তরমুজ বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় নিম্নআয়ের মানুষজন কিনতেও হিমশিম খাচ্ছে।

জানা গেছে, চাঁদপুর শহরের চৌধুরীঘাটে দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রতিদিন ১০-১৫টি বাল্কহেডে করে নিয়ে আসা হচ্ছে তরমুজ। আর সেই তরমুজ চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার মানুষের চাহিদা মেটাচ্ছে। তরমুজের সরবরাহ বাড়ায় কর্মব্যস্ততা বেড়েছে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের। প্রতিটি নৌযানে পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার তরমুজ আসে। পাইকাররা এখান থেকে তরমুজ কিনে চাঁদপুরের উপজেলাগুলোসহ বিভিন্ন জেলায় ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনে সরবরাহ করে। ভোলা, পটুয়াখালী ও বরিশাল থেকে চাঁদপুরে বেশি তরমুজ আসে বলে জানান তরমুজ ব্যবসায়ীরা।

করিম নামের পটুয়াখালীর এক তরমুজচাষি জানিয়েছেন, এবার তরমুজের ব্যাপক ফলন হয়েছে। তবে জমিতে বৃষ্টির পানি আটকে থাকায় তরমুজের গায়ে দাগ পড়ে গেছে, যে কারণে জমি থেকে তরমুজ আনতে আনতেই পচে যায়। এখন যদি তরমুজ সঠিক সময়ে বিক্রি না করতে পারি, তাহলে আমাদের অনেক ক্ষতি হবে। আমরা ন্যায্য মূল্যেই তরমুজ বিক্রি করি। আমাদের হাত বদল হওয়ার পর চাঁদপুরের হাটবাজারে অনেক বেশি দরে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে বলে শুনেছি। এতে আমাদের কিছুই করার নেই।

রুবেল নামের অপর এক তরমুজ ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে ভালো মান ও আকারের কোনো তরমুজের দাম ২০০ টাকার নিচে নেই। সব মিলিয়ে লাভ-লোকসানের মাঝেই তরমুজের বিক্রি ভালো হচ্ছে। তরমুজ যত আসবে তত দাম কমবে বলে জানান তিনি। বাজারের অবস্থা ভালো জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আড়তদার জানান, দুই সপ্তাহের মতো হলো বাজারে তরমুজ আসছে। বর্তমানে বাজারে ক্রেতা ভালোই রয়েছে, দামও ভালো।

চাঁদপুর ১০নং চৌধুরী ঘাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী সিকদার জানান, সরবরাহকৃত তিন শ্রেণির তরমুজের দাম পৃথকভাবে নির্ণয় করা হয়। বড় আকারের ১০০ তরমুজের দাম ২৬ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এছাড়া মাঝারি ধরনের তরমুজ ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। আর ছোট তরমুজ আট থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অপরদিকে জেলার হাজীগঞ্জ পূর্ব বাজারে এখন পাইকার আর আড়তদারের মিলনমেলা লক্ষ করা গেছে। কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে ছুটে আসা পাইকাররা ট্রাক বোঝাই করে আবার সেই তরমুজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে হাজীগঞ্জের পাইকাররা বেশি দামে তরমুজ ক্রয় করে তা উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে ফালি হিসাবে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ-ছয়শ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি করে আসছে।

এখানকার কয়েকজন আড়তদার ব্যাপারী ও পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রসালো এই মৌসুমি ফল তরমুজ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, খুলনা, বরগুনা ও পাথরঘাটা এলাকা থেকে স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে ট্রলারযোগে ব্যাপারীরা নিয়ে আসে হাজীগঞ্জে। এখান থেকে আবার দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চল, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, সিলেট, ফেনী, চিটাগংসহ প্রায় ৩০-৩৫ জেলার পাইকাররা ট্রাকে করে তরমুজ নিয়ে যায় বিক্রির উদ্দেশ্যে।

শ্রমিক সোহাগ, কবির, আল আমিন, রহমতউল্লাহ বলেন, ‘আমরা কমিশনে দৈনিক সাত-আটশ টাকা রুজি করতে পারি। গত মার্চ মাস থেকে শুরু হয়ে আগামী জুন-জুলাই পর্যন্ত তরমুজের সরবরাহ থাকবে।’

চাঁদপুরে তরমুজের পর্যাপ্ত পরিমাণ চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ থাকলেও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে দাম আকাশছোঁয়া রয়েছে। আড়তদার পাইকার ব্যাপারীদের মধ্যেও মধ্যস্বত্বভোগী একটি সিন্ডিকেট কাজ করায় তরমুজের বাজার এখন চওড়া।