চাঁদপুর হাইমচরে উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ও পরিবর্তনশীল আবহাওয়া উপযোগী আলুর জাতের উৎপাদন কলাকৌশল শীর্ষক মাঠ প্রদর্শনীর উপর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, জয়দেবপুর, গাজীপুর এর আয়োজনে ও সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, বি এ আর আই, কুমিল্লা এর সহযোগীতায়, কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন, ফার্মগেট, ঢাকা এর অর্থায়নে মাঠ দিবসের আয়োজন করা হয়।
মাঠ দিবসে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন- চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আব্দুর রশিদ। কুমিল্লা বিএআরআই’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. হায়দার হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- কৃষিবিদ আয়শা আক্তার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন- কুমিল্লা বারির বৈজ্ঞানিক সহকারী মো. মাহাবুবুর রহমান।
উল্লেখ্য, আলু বাংলাদেশের একটি অন্যতম ফসল। আন্তর্জাতিক মূল্য ও উৎপাদন বিবেচনায় বাংলাদেশের ২০টি প্রধান ফসলের মধ্যে ধানের পরেই আলুর স্থান। আলু উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ এশিয়ার মধ্যে ৩য় ও পৃথিবীর মধ্যে ৭ম স্থানে রয়েছে। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে যেখানে আলু উৎপাদিত হতো ০৯ (নয়) লক্ষ মেট্রিক টন সেখানে ২০১৬-১৭ মৌসুমে আলু উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ২ লক্ষ মেট্রিক টন। দিনািদন আলু চাষের জমির পরিমাণ, মোট উৎপাদন ও গড় ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে যা গবেষণা ও সম্প্রসারণ কাজের ফলাফল।
অধিকন্ত একক সময়ে একক পরিমাণ জমিতে এত বেশী ফলন অন্য কোন চাষ যোগ্য ফসলে পাওয়া যায় না এবং আলু উৎপাদন মৌসুমে তেমন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকে না বলে কৃষকরা আরো বেশী উৎসাহিত হচ্ছে। আলু গাছে বাংলাদেশে সাধারণত ফুল হয় না, তাই প্রথম দিকে বিদেশী জাত অবমুক্তির মাধ্যমে আলু চাষ শুরু হয়। বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আলু গাছে ফুল, ফল হওয়াতে সক্ষম হয়। নিজস্ব সংকরায়নের মাধ্যমে প্রথমে ২০০০ খ্রি. এ সংকরায়িত বীজ/ হাইব্রিড বীজ পেতে সক্ষম হয়। সংকরায়িত বীজ থেকে ক্লোনাল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১২ সালে প্রথম তিনটি জাত বারি আলু ৩৫, বারি আলু-৩৬, বারি আলু ৩৭ অবমুক্তির, মাধ্যমে বাংলাদেশে আলুর জাত উদ্ভাবনে নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হয়।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক আলু গবেষণা কেন্দ্র (CIP) এর জার্মপ্লাজম থেকে মড়ক রোগ (লেইটব্লাইট রোগ) প্রতিরোধী জাতসহ তাপ ও লবনাক্ত সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন করা হয়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ‘‘কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্র’’ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ৯১ টি জাত উদ্ভাবন করেছে। কিন্তু জাতগুলো কৃষক বা আলু উৎপাদনকারীদের কাছে পৌছে দেয়া সম্ভব হয় নাই।
কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগীতায় এ মৌসুমে সারা দেশে প্রায় ৩৫০টি উপযোগীতা যাচাই পরীক্ষা স্থাপন করা হয়। এ কার্যক্রমের ধারা অনুযায়ী চাঁদপুর হাইমচর দ. গোবিন্দিয়া হানার চর ব্লকে নতুন জাতের বারি আলু ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৪০ ও ৪১ (নিজস্ব সংকরায়নের মাধ্যমে উদ্ভাবিত), ২টি নতুন বারি আলু ৪৬, ৫৩ (মড়ক রোগ প্রতিরোধী), ২টি নতুন বারি আলু-৭২ (লবনাক্ততা ও তাপ সহহিষ্ণু) ও বারি আলু ৭৩ (তাপ সহিষ্ণু) জাত রয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে আলুর গড় ফলন চাহিদা হলো হেক্টরে ২০-২২ টন আর বারি উদ্ভাবিত প্রদর্শণীতে হেক্টরে ফলন হয়েছে- বারি আলু ৩৫ (৪১.৫৫ টন), বারি আলু ৩৬ (৪৩.১৫ টন), বারি আলু ৩৭ ( ৪১.২ টন), বারি আলু ৪০ (৪২.১ টন), বালি আলু ৪১ (৪৩.০৫টন)।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১১মার্চ২০