চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে জাহিদ হাসান মাহমুদ মিম্পা: চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রাচীন গৌড়ের নগরী হিসেবে বহুকাল ধরেই বিখ্যাত। শুধু কী গৌড় নগরী? না এ নগরীর আরেকটি বড় পরিচয় দেশ বিদেশে রয়েছে। আর সেটি হচ্ছে আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ। কত কিছু রয়েছে এ জেলার প্রসিদ্ধতার খাতায়। তার মধ্যে অনন্য হচ্ছে কলাই এর রুটি। আর এ কলাই এর রুটি খেতে পিঁয়াজ, মরিচ, ধনে পাতার মিশ্রণে তৈরির চাট না হলে তো ষোলকলা যেন পূর্ণই হয় না।
ধনে পাতা শুধু কলাই রুটির চাট না, গৃহিনীদের রান্না-বান্নায় এক অনন্য উপাদান হিসেবে ধনেপাতার ব্যবহার চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। বর্তমানে ধনে পাতার চাহিদা দিনদিন বেড়ে চলেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে ধনে পাতা।
শীতকালীন সময়ে বহু কৃষক এখন ধনে পাতার চাষাবাস করছেন। এর কারণ এ মৌসুমে জেলার বাইরে ধনে পাতা বিক্রি করে বহু কৃষক লাভবান হচ্ছেন। আর তাই ধনে পাতার চাষ দিনদিন বেড়ে চলেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরাঞ্চলের কৃষক এখন ঝুঁকছে ধনেপাতার চাষের দিকে। পদ্মা নদীর পলি পড়া উর্বর জমিতে কোন চাষবাস ছাড়াই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আবাদ হচ্ছে এখন ধনেপাতা। খাবারের অনন্য উপাদান এই ধনেপাতার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এর চাষও সম্প্রসারিত হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার জেলার সদর উপজেলায় ৬শ বিঘা ও শিবগঞ্জ উপজেলায় সাড়ে ৭শ বিঘা জমিতে ধনেপাতা আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে পদ্মানদীবেষ্টিত চরাঞ্চলেই আবাদ হয়েছে বেশি। চরাঞ্চলে উৎপাদিত ধনেপাতা এ মাসের শুরু থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রির উদ্দেশে পাঠানো শুরু হয়েছে।
কৃষক ও জেলার সাধারণ ব্যবসায়ীরা জমি থেকে তুলে নিয়ে জেলা শহরের নির্বাচন অফিস সংলগ্ন আমবাগান, ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকা ও রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে নিয়ে এসে বরফ দিয়ে বস্তায় ভরে ঢাকাগামী কোচের ছাদে করে ধনে পাতা পাঠানো শুরু করেছেন। ঢাকার কারওয়ান বাজারসহ অন্যান্য বাজার এবং কুমিল্লার নিমসা বাজারে তারা পাঠাচ্ছেন ধনেপাতা।
বাজারে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা মণ দরে ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে। ঢাকা স্ট্যান্ড এলাকায় একজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, জমিতে চাষ করা ধনে পাতা আমরা আগাম ক্রয় করে রাখি। মৌসুম শুরু হলে তারা ঢাকাগামী নৈশ ও দিবা কোচের ছাদে তুলে মাল পাঠাই।
চরবাগডাঙ্গা গ্রামের কৃষক বরজাহান জানান, এবার তিনি ও তার ভাই ৬ বিঘা জমিতে ধনে আবাদ করেছেন। আবাদকৃত ধনে, পাতা হিসাবেই তিনি ঢাকার বাজারে ৯ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা মণদরে বিক্রি করছেন।
একই গ্রামের শাকিল নামে এক কৃষক জানান, চলতি মৌসুমে তিনি কৃষকের আবাদ করা ২২ বিঘা জমির ধনে পাতা ৩৫ হাজার টাকা বিঘা দরে আগাম কিনে রেখেছেন। প্রতিবিঘায় উৎপাদন হচ্ছে ৬ থেকে ৮ মণ।
রোববার সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শহরের নির্বাচন অফিস সংলগ্ন আমবাগান ও রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন বিভিন্ন খোলা স্থানে ধনে পাতা নিয়ে এসে বরফ দিয়ে বস্তায় ভরে রাজধানী ঢাকা পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করছেন। শীত যত বাড়বে ধনে পাতা নিয়ে ব্যস্ততা ততই বাড়বে ব্যবসায়ীদের। পুরো শীত জুড়ে তাই শহরের নির্বাচন অফিস সংলগ্ন আমবাগানে ধনে পাতার গন্ধে ভরে উঠবে শহরের বাতাস।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম