চার বছরে খামারে এখন গরুর সংখ্যা ১৭০০

432

গরু

মাত্র চার বছরের গল্প। তাতেই ইতিহাস। ১০টি গাভী দিয়ে যে খামারের যাত্রা, সেখানে আজ ১৭শ’র অধিক গরু। যেন রূপকথার গল্প। নিষ্ঠা, একাগ্রতা আর শ্রম দিয়ে শখের স্বপ্নকে সফলতার মাপকাঠিতে রূপ দেয়া যায়, তারই নাম ‘মেঘডুবি অ্যাগ্রো ডেইরি ফার্ম’। ঢাকার অদূরে বছিলায় বসেছে গরুর মেলা। মেলাই বটে।

গাবতলী গরুর হাটে গিয়ে যে চিত্র মেলে ‘মেঘডুবি অ্যাগ্রো ডেইরি ফার্ম’-এ গেলে সে চিত্রই দেখতে পাওয়া যায়। সারি সারি গরু। যত্নের কমতি নেই। সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছেন শতাধিক শ্রমিক। বিদ্যুৎ, পানি, বাতাসের জন্য ব্যবহার হচ্ছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। কংক্রিটের ড্রেনে পয়ঃনিষ্কাশন হচ্ছে মুহূর্তেই। খাবার, চিকিৎসায় জোর ব্যবস্থা।

২০১৪ সালে যাত্রা। শখের বসে পুরান ঢাকার মোহাম্মদ আলী শাহিন বাড্ডার সাতারকুলে ১০টি গাভী কিনে ডেইরি ফার্ম দেন। ১৯৯৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করে সিঙ্গাপুর থেকে ডিগ্রি নেন শাহিন। বাইরে থেকে ডিগ্রি নিলেও চাকরির পেছনে ছোটেননি কখনও। পুরান ঢাকায় স্টিলের ব্যবসা শুরু করেন আর শখের বশে চার বছর আগে ডেইরি ফার্মে মন দেন।

ওই বছর কোরবানির জন্য পাঁচটি ষাঁড় পালনও করেন, যেগুলো নিজে এবং আত্মীয়-স্বজনরা মিলে কোরবানি দেন। এর মধ্য দিয়েই বাজারের ইনজেকশন পুশ করা গরুর মাংসের পার্থক্য বুঝতে পারেন। পরের বছর কোরবানির জন্য আরও গরুর চাহিদা আসতে থাকে শাহিনের কাছে।

মাত্র চার বছরের গল্প: চাহিদা পূরণে খামারের পরিধি বাড়াতে থাকেন। কুষ্টিয়ার হালসায় ‘মেঘডুবি অ্যাগ্রো ডেইরি ফার্ম’-এর দ্বিতীয় শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। হাট থেকে বিভিন্ন দামে গরু কিনে কুষ্টিয়ার ওই খামারে প্রতিপালন শুরু করেন। পরবর্তীতে কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য সেগুলো ঢাকায় নিয়ে আসেন। এরই মধ্যে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলায় ‘মেঘডুবি’র তৃতীয় শাখা খোলা হয়।

মূলত গার্ডেন সিটির এ শাখাই এখন মূল খামার হিসেবে বিবেচিত। এখানে প্রায় তিনশ’র অধিক গরু রয়েছে। ৬০ হাজার থেকে শুরু করে ১৫ লাখ টাকার গরুও আছে। মাত্র ৫২ কাঠা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এ খামারে আধুনিকমানের সব প্রযুক্তিই ব্যবহার করা হয়েছে।

কৃত্রিমভাবে গরু মোটাতাজাকরণের কোনো ব্যবস্থা নেই এখানে। খামারের সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক মোহাম্মদ জাগো নিউজকে এমন তথ্য জানান। তেজগাঁও কলেজ থেকে পাশ করা তারেক মেঘডুবি অ্যাগ্রোর মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী শাহিনের মামাতো ভাই।

খামারের বিষয়ে তথ্য দিতে গিয়ে তারেক বলেন, ‘মেঘডুবি’র বিভিন্ন শাখা মিলে প্রায় ১৭শ’র অধিক গরু রয়েছে। এর মধ্যে সাতারকুল শাখায় ১৮০টি গাভী রয়েছে যেখান থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ লিটার দুধ মিলছে।’ সরেজমিন দেখা যায়, সিটি গার্ডেনের নতুন খামারে চক্রকার বেশ কয়েকটি গরু বাঁধার জায়গা তৈরি করা হয়েছে।

সেখানেই বিশাল বিশাল গরু বাঁধা। শান করা ঘের। নিচেও পাকা করা। একটি গরু থেকে আরেকটি গরুর নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে লোহার ফ্রেম দেয়া আছে। আরামদায়ক বিছানার জন্য ম্যাট পাতা। মাথার ওপরে ফ্যান। পানির লাইন দেয়া প্রতিটি গরুর ওপরে। অতিরিক্ত গরম হলেই পানির সুইচ চালু করে দেয়া হয়। বৃষ্টির মতো ঝিরিঝিরি পানির ফোয়ারা তাপ নিয়ন্ত্রণ করে মুহূর্তেই। গোবর আর চোনাও (প্রস্রাব) ধুয়ে ফেলা হয় সঙ্গে সঙ্গে।

খামারটিতে জার্সি, হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান, উলবারি, কাংরেজ, হালিকার, গির, দেশালসহ নিজস্ব উপায়ে ব্রিড করা বিভিন্ন জাতের গরু রয়েছে। গরুর খাদ্য তালিকায় খড়, চিটাগুড়, গম, চালের খুদ, ভুসি, ডাবলি, ছোলা, কুড়া, খৈল, ধান ভাঙা, খড়, কাঁচা ঘাস ছাড়াও শাক-পাতা জাতীয় খাবার রয়েছে।

মেঘডুবি অ্যাগ্রোর মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী শাহিনের সঙ্গে কথা হয় খামার প্রসঙ্গে। বলেন, আর দশটি খামারের সঙ্গে আপনি আমার খামারের তুলনা করতে পারবেন না। আমি এটিকে ‘প্রাকৃতিক খামার’ বলি। কারণ প্রাকৃতিকভাবেই এখানে গরুর পরিচর্যা করা হয়।

‘স্বপ্ন থাকলে আর কৌশল প্রয়োগ করলে যেকোনো অসাধ্যকে সাধন করা যায়। যারা আমার খামার থেকে গরু নিচ্ছেন, তারাই ফের অর্ডার করছেন।’ বাজার পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার গরুর মাকের্ট মূলত সীমান্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এটি সরকারের দেখার কথা। কিন্তু আমরা দেশীয় খামারের জন্য সরকারের আন্তরিকতার ঘাটতি দেখি। এ কারণে ছোট খামারিরা সব সময় আতঙ্কে থাকেন।’

‘তবে আমি আশাবাদী’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই শিক্ষিত, তরুণ, উদ্যমীরাও এ সেক্টরে আসুক এবং রাষ্ট্র সে সুযোগ তৈরি করে দিক। মানুষ অর্থ দিয়ে ভালো এবং পছন্দসই গরু কেনার সুযোগ পাক।’

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ