চিকন চালের চাহিদা মেটাবে ব্রি-৯৮ ধান

117

ফলন বেশি হওয়ায় বাড়ছে নতুন জাতের ধান ব্রি-৯৮-এর চাষ। খরচ কম, ফলন ভালো এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। ধান সরু ও চিকন এবং চাল সাদা। বিঘাপ্রতি ফলন ২০ থেকে ২২ মণ। ব্রি-৯৮ ধান স্থানীয় খাটো বাবু ও ব্রি ধান ৪৮-এর বিকল্প হিসেবে আবাদ হবে, তবে সেচ সংকটের মাশুল দিতে হচ্ছে বলে দাবি করেন চাষিরা।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ মৌসুমে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে ৪৩ হাজার ১৭ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৬ হাজার ৫৫০ হেক্টর, আলমডাঙ্গায় আট হাজার ৭৬৭ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ১০ হাজার ৬০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় আট হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে। গত ৮ বছরের ব্যবধানে আউশের আবাদ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। ২০১৪-১৫ মৌসুমে আউশ ধানের আবাদ হয়েছিল ২১ হাজার ৩২৫ হেক্টর। চলতি মৌসুমে আবাদ হয়েছে ৪৩ হাজার ১৭ হেক্টর জমিতে। আউশ মৌসুমে নতুন ব্রি-৯৮ ধান সরু, চিকন ও চাল সাদা হওয়ায় ধীরে ধীরে কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। গত বছরই প্রথম ১০ হেক্টর জমিতে এই ধানের আবাদ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে তা বৃদ্ধি পেয়ে এক হাজার ৪৮৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। কেবল আবাদ নয়, ব্রি-৯৮ ধানের গড় ফলনেও চুয়াডাঙ্গা জেলা সারাদেশে সেরাদের তালিকায় রয়েছে। গত বছর চুয়াডাঙ্গা জেলায় ব্রি-৯৮ ধানের গড় ফলন ছিল হেক্টরপ্রতি ৬ দশমিক ৭ টন ও চাল ৩ দশমিক ২ টন। চলতি মৌসুমে হিসেব করে দেখা গেছে মাটিভেদে হেক্টরপ্রতি ৫ দশমিক ৫ টন থেকে ৬ দশমিক ৭ এবং চাল ৩ দশমিক ২ টন থেকে ৩ দশমিক ৯৬ টন।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার খেজুরতলা গ্রামের কৃষক আশাদুল হক জানান, আলমডাঙ্গা আইলহাঁস ব্লকের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আল হেলাল নান্নু এক প্যাকেট ব্রি-৯৮ ধানের বীজ এনে দিয়েছিলেন। আমি ১৬ দশমিক ৫ শতক জমিতে আবাদ করেছিলাম। ওই জমি থেকে ১১ মণ ধান পেয়েছি। এই ধান সরু, চিকন ও চাল সাদা হওয়ায় খওয়ার জন্য রেখে দিয়েছি।

একই উপজেলার দৌলাতদিয়াড় গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ জানান, আমি দুই বিঘা ব্রি-৯৮ ধানের আবাদ করেছিলাম। ৪০ মণ ধান পেয়েছি। তিনি জানান, অন্য জাতের ধানের চেয়ে প্রায় ১৮০ টাকা বেশি দরে এক হাজার ১৮০ মণ দরে বিক্রি করেছি।

দামুড়হুদা কার্পাসডাঙ্গা মিশনপাড়ার মতিয়ার ভাটার ম্যানেজার লিটন মণ্ডল জানান, প্রথমবারের মতো ভাটায় ১২ বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন ব্রি ধান-৯৮ জাতটি। প্রচলিত সব জাতের তুলনায় ফলন বেশি ও আকার-আকৃতিতে চিকন, বাজারে দাম ১৫০-১৮০ টাকা বেশি।

একই উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ব্লকের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ বলেন, রোপা আউশে ব্রি-৯৮ ধান আমরা আশা করছি স্থানীয় খাটো বাবু ও ব্রি ধান ৪৮-এর বিকল্প হিসেবে আবাদ হবে। এরই মধ্যে কৃষকদের মধ্যে ভালো আগ্রহ বেড়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, ব্রি-৯৮ জাতের ধান উদ্ভাবন করার পর স্থানীয় কৃষকদের উৎসাহ দেয়া হয়। চলতি মৌসুমেই উপজেলায় প্রথম আবাদ শুরু হয়েছে। কৃষকরা ৮৯১ হেক্টর জমিতে ব্রি-৯৮ জাতের ধান আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। এই ধানে সেচ ও সার কম লাগে। পোকামাকড়ের আক্রমণও কম। ধানের আকার চিকন ও লম্বা। হেক্টরপ্রতি গড়ে ৬ দশমিক ৭ টন উৎপাদন হচ্ছে, যা বিঘাতে ২৩ মণ। উৎপাদনে সময় কম লাগায় ও ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা এই জাতের ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় আউশ ধানের আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়। চলতি মৌসুমে জেলায় রেকর্ড আউশের আবাদ হয়েছে। এ মৌসুমে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে ৪৩ হাজার ১৭ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৬ হাজার ৫৫০ হেক্টর, আলমডাঙ্গায় আট হাজার ৭৬৭ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ১০ হাজার ৬০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় আট হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে। তিনি বলেন, গত মৌসুমের তুলনায় চার হাজার ৩১৮ হেক্টর বেশি জমিতে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কৃষিতে আউশ মৌসুমে ব্রি-৯৮ জাত উদ্ভাবন একটি মেগা ভ্যারাইটি। এ জাতের ফলন মোটামুটি ভালো। বিঘাতে ফলন ২২ থেকে ২৩ মণ পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই জাতের ধান চিকন ও চাল লম্বা। ভাতও ঝরঝরে হয়। জীবনকাল বেশি নয়। জীবনকাল ১১০ থেকে ১১২ দিনের মতো। গত বছর ১০ হেক্টর জমিতে এই ধানের আবাদ হয়েছিল। এ বছর এক হাজার ৪৮৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এ জেলায় স্থানীয় খাটোবাবু ও ব্রি-৪৮ জাতের ধানের আবাদ বেশি হয়। ব্রি-৪৮-এর চেয়ে ফলন ও দাম বেশি হওয়ায় জেলায় ব্র্রি-৯৮ জাতের ধানের আবাদ জনপ্রিয় হচ্ছে ও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেটি আমাদের জন্য খুবই আশাব্যঞ্জক। আমি চার উপজেলায় সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বলে দিয়েছি, বীজ সংগ্রহ করার জন্য। তিনি বলেন, ব্রি-৯৮ খাদ্য নিরাপত্তায় আরও ভূমিকা রাখবে বলে আশা রাখি।

চলতি মৌসুমে জেলায় ব্রি-৯৮ ধান এক হাজার ৪৮৮ হেক্টর জমিতে গড়ে যদি ৫ দশমিক ৫ মণ ধান উৎপন্ন হয় এবং ওই ধান যদি আমরা এক হাজার ১০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করি, তাহলে চুয়াডাঙ্গা জেলার কৃষকরা এই মৌসুমে শুধু ব্রি-৯৮ জাতের ধান ২০ কোটি ৮৬ লাখ ৯২ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবেন ।