চিনাবাম চাষ:
মাটিঃ
চীনাবাদাম চাষের জন্য হালকা বেলে-দোআঁশ, দোআঁশ এবং চরাঞ্চলের বেলে মাটি বেশি উপযোগী। চীনাবাদামের গর্ভদন্ড বা পেগ যাতে সহজে মাটি ভেদ করে নিচে যেতে পারে এবং বাদাম সহজে পুষ্ট হতে পারে, সেজন্য সুনিকাশিত হালকা বেলে-দোআঁশ মাটির প্রয়োজন হয়।
জমি তৈরিঃ
চীনাবাদাম চাষের জন্য জমিতে তিন থেকে চারটি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হবে। ক্ষেতের চারপাশে নালার ব্যবস্থা করলে পরে সেচ ও পানি নিকাশের সুবিধা হয়।
জাতঃ
বাসন্তী বাদাম (ডিজি-২): প্রতি বাদামে ১-২ টি বীজ থাকে। বীজের আকার মধ্য লম্বাকৃতি এবং রং লালচে বাদামী। বীজে তেলের পরিমাণ ৪৮%। রবি ও খরিফ উভয় মৌসুমে এ জাতটি চাষ করা যায়। ফলনঃ রবি মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ২.০-২.২ টন এবং খরিফ মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ১.৮-২.০ টন।
ঝিংগা বাদাম (এসিসি-১২): প্রতি বাদামে ৩-৪ টি বীজ থাকে। বীজের উপরের খোসা বাদামী রঙের হয়। বীজের তেলের পরিমাণ ৪৯-৫০%। জাতটি বেশ খরা সহনশীল।
ফলনঃ হেক্টর প্রতি প্রায় ২.৪-২.৬ টন।
ত্রিদানা বাদাম (ডিএম-১): বীজের উপরের খোসা গাঢ় লাল এবং প্রতি বাদামে ৩-৪ টি বীজ থাকে। বীজে তেলের পরিমাণ ৪৯-৫০%। জাতটি খরিপ মৌসুমে চাষ করা উত্তম। এ জাতটির বীজের সুপ্তি
কাল নেই।
ফলনঃ
হেক্টর প্রতি প্রায় ২.২-২.৪ টন।
বারি চীনাবাদাম-৫: প্রতি বাদামে বীজের সংখ্যা ১-২ টি। বাদামের শিরা উপশিরা খুব স্পষ্ট, বীজের আকার বড়। বীজের সুপ্তিকাল ১০-১৫ দিন। বীজে তেলের পরিমাণ ২৫-২৭%। রবি ও খরিফ উভয় মৌসুমে চাষ যোগ্য। ফলনঃ হেক্টরপ্রতি রবি মৌসুমে ২.৭০-৩.১০ টন এবং খরিফ মৌসুমে ২.০-২.৫ টন।
বারি চীনাবাদাম-৬: বীজের রং হালকা বাদামি। বীজে তেলের পরিমাণ ৫০-৫২%। ফলনঃ হেক্টর প্রতি রবি মৌসুমে ২.৫-২.৮ টন এবং খরিফ মৌসুমে ২.০-২.৪ টন।
বারি চীনাবাদাম-৭:
বাদামের খোসা মসৃণ ও কিছুটা সাদাটে ও নরম। বীজের সুপ্ততা নেই। পাতায় দাগ পড়া ও মরিচা রোগ তুলনামুলক কম হয়। ফলনঃ হেক্টর প্রতি রবি মৌসুমে ২.৮-৩.০ টন এবং খরিফ মৌসুমে ১.৮-২.০ টন।
বারি চীনাবাদাম-৮:
বীজের আকার মাঝারি, বীজের রং লালচে। ফলনঃ হেক্টর প্রতি ২.৫ টন।
বারি চীনাবাদাম-৯:
বাংলাদেশের সবখানে রবি ও খরিফ মৌসুমে চাষাবাদের উপযুক্ত। এই জাতটি বারি চীনা বাদাম-৬ ও ৭ থেকে ৫-৭ দিন আগে পরিপক্ক হয়। ফলনঃ হেক্টর প্রতি ২.৫-২.৮ টন।
বর্তমানে প্রাণ উদ্ভাবিত প্রাণ চীনাবাদাম-১ উত্তরাঞ্চলে চাষ করে আশাতীত ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এ জাতের বাদামের দানা বড় এবং ফলনও প্রচলিত জাতের চেয়ে শতকরা ৩০ ভাগ বেশি।
বীজ বপনের সময়ঃ
খরিপ মৌসুমে এপ্রিল মাস থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চীনাবাদাম বপনের উপযুক্ত সময়। রবি মৌসুমে আশ্বিনের মাঝামাঝি থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত চীনাবাদাম বপন করা যায়।
বীজের পরিমাণঃ
বাদাম চাষের জন্য হেক্টরপ্রতি খোসাসহ মাইজচর বাদাম ৯৫ থেকে ১০০ কেজি, ঝিঙ্গা বাদাম ১০৫ থেকে ১১০ কেজি, বাসন্তী বাদাম ১০৫ থেকে ১১০ কেজি এবং ত্রিদানা বাদাম ১১০ থেকে ১১৫ কেজি এবং অন্যান্য জাতের বাদামের ৯৫ থেকে ১০৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
সারের পরিমাণঃ
ভালো ফলন পেতে হলে চীনাবাদাম চাষের জন্য হেক্টরপ্রতি ৫ থেকে ৭ টন পচা গোবর, ২০ থেকে ৩০ কেজি ইউরিয়া, ১৫০ থেকে ১৭০ কেজি টিএসপি, ৮০ থেকে ৯০ কেজি এমওপি, ১৬০ থেকে ১৮০ কেজি জিপসাম, ৪ থেকে ৫ কেজি জিঙ্ক সালফেট এবং ৯ থেকে ১১ কেজি বোরাক্স বা বরিক এসিডের প্রয়োজন হয়। অর্ধেক ইউরিয়া এবং অন্যান্য সার বীজ বপনের আগে শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বপনের ৪০ থেকে ৫০ দিন পর গাছে ফুল আসার সময় প্রয়োগ করতে হবে। তবে প্রতি কেজি বীজে ৭০ গ্রাম অণুবীজ সার ব্যবহার করলে সাধারণত ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয় না।
বপন পদ্ধতিঃ
চীনাবাদাম বপনের আগে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। খোসা ছাড়ানোর সময় লক্ষ রাখতে হবে, যেন বীজের উপরের পাতলা পর্দা পড়ে না যায়। টাটকা খোসা ছাড়ানো বীজ লাগানো ভালো। খোসা ছাড়ানোর পর দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে বাদামের বীজ বপন করা উচিত। বীজ সারিতে বপন করতে হবে। খরিপ মৌসুমে সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৪৫ সেন্টিমিটার এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব হবে ১৫ সেন্টিমিটার। বীজ বপনের সময় জমিতে প্রয়োজনীয় রস থাকতে হবে। রস কম থাকলে সেচ দিয়ে জমি তৈরি করে দিয়ে বীজ বপন করতে হবে। বীজ ৫ সেন্টিমিটার মাটির গভীরে বপন করতে হবে।
পানি সেচঃ খরিপ-১ মৌসুমে অবস্থা বুঝে প্রয়োজনবোধে একটি সেচ দেয়া যেতে পারে। চর এলাকায় সেচ দেয়ার তেমন প্রয়োজন হয় না। রবি মৌসুমে উঁচু জমিতে মাটির রস তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় বলে ১ থেকে ২টি সেচ দেয়া দরকার।
অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যাঃ
বীজ বপনের ১৫ থেকে ২০ দিন পর একবার নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। মাটি শক্ত হয়ে গেলে এবং ফুল আসার সময় গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে।
রোগবালাই ব্যবস্থাপনাঃ
বিছাপোকাঃ
বিছাপোকা গাছের পাতা ও কচি অংশ খেয়ে ফেলে। এ পোকার আক্রমণ দেখা দিলে ডায়াজিনন ৬০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার হারে মিশিয়ে সাত দিন পর পর সমস্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।
উইপোকাঃ
চীনাবাদাম গাছের এবং বাদামের যথেষ্ট ক্ষতি করে এ পোকা। এরা দলবদ্ধ বা কলোনি তৈরি করে বাদাম গাছের প্রধান শিকড় কেটে দেয় এবং শিকড় ভেদ করে গর্ত সৃষ্টি করে। এতে গাছ মারা যায়। এছাড়া উইপোকা মাটির নিচে বাদামের খোসা ছিদ্র করে বীজ খায়।
দমনঃ
পানির সঙ্গে কেরোসিন মিশিয়ে সেচ দিলে উইপোকা জমি ত্যাগ করে। আক্রান্ত জমিতে ডায়াজিনন-১০জি বা বাসুডিন-১০জি বা ডরসবান-১০জি যথাক্রমে প্রতি হেক্টরে ১৫, ১৪ ও ৭.৫ কেজি হারে প্রয়োগ করতে হবে।
পাতার দাগ রোগঃ
এ রোগের আক্রমণে পাতার ওপর হলদে রেখাবেষ্টিত বাদামি রঙের দাগ সৃষ্টি হয়। দাগ পাতার ওপর ছড়িয়ে পড়ে এবং পাতা ঝরে পড়ে।
প্রতিকারঃ
বাসন্তী বাদাম পাতার দাগ সহনশীল একটি জাত। এ জাতের বাদাম চাষের মাধ্যমে এ রোগের আক্রমণ এড়ানো যায়। রোগ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছে ব্যাভিস্টিন ৫০ ডবিউপি ১ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রতি ১২ দিন পর পর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
পাতার মরিচা রোগঃ
প্রাথমিক অবস্থায় পাতার নিচের পিঠে মরিচা পড়ার মতো সামান্য উঁচু বিন্দুর মতো দাগ দেখা যায়। দাগ ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। আক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাতার উপরের পিঠেও এ দাগ দেখা যায়।
প্রতিকারঃ
ঝিঙ্গা বাদামের জাত এ রোগ প্রতিরোধী। এ জাতের চাষের মাধ্যমে এ রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ রোগ দেখা দিলে টিল্ট-২৫০ ইসি প্রতি লিটার পানির সঙ্গে আধা মিলিলিটার হারে মিশিয়ে ১২ দিন পর পর দুই থেকে তিনবার স্প্রে করতে হবে। পূর্ববর্তী ফসল থেকে গজানো গাছ, আগাছা এবং খড় পুড়ে ফেলে এ রোগের আক্রমণ অনেকটা কমানো যায়।
ফসল তোলাঃ বাদাম যখন পরিপক্ব হয়, তখন গাছের পাতাগুলো হলদে হতে থাকে এবং নিচের পাতা ঝরতে শুরু করে। এ সময় দু-একটি গাছের গোড়া খুঁড়ে পাকা বাদামের গাঢ় রং ও শিরা পরীক্ষা করে সময়মতো বাদাম তুলতে হবে। তারপর তিন থেকে চার দিন ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে বাদাম সংরক্ষণ করতে হবে। শুকনা বাদামে ১০ শতাংশ অথবা তার কম রস থাকতে হবে।
ফলনঃ
ভালোভাবে যত্ন নিলে খরিপ মৌসুমে হেক্টরপ্রতি ২.০ থেকে ২.৫ টন চীনাবাদামের ফলন পাওয়া যায়।
চিনাবাম চাষ:
মাটিঃ
চীনাবাদাম চাষের জন্য হালকা বেলে-দোআঁশ, দোআঁশ এবং চরাঞ্চলের বেলে মাটি বেশি উপযোগী। চীনাবাদামের গর্ভদন্ড বা পেগ যাতে সহজে মাটি ভেদ করে নিচে যেতে পারে এবং বাদাম সহজে পুষ্ট হতে পারে, সেজন্য সুনিকাশিত হালকা বেলে-দোআঁশ মাটির প্রয়োজন হয়।
জমি তৈরিঃ
চীনাবাদাম চাষের জন্য জমিতে তিন থেকে চারটি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হবে। ক্ষেতের চারপাশে নালার ব্যবস্থা করলে পরে সেচ ও পানি নিকাশের সুবিধা হয়।
জাতঃ
বাসন্তী বাদাম (ডিজি-২): প্রতি বাদামে ১-২ টি বীজ থাকে। বীজের আকার মধ্য লম্বাকৃতি এবং রং লালচে বাদামী। বীজে তেলের পরিমাণ ৪৮%। রবি ও খরিফ উভয় মৌসুমে এ জাতটি চাষ করা যায়। ফলনঃ রবি মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ২.০-২.২ টন এবং খরিফ মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ১.৮-২.০ টন।
ঝিংগা বাদাম (এসিসি-১২): প্রতি বাদামে ৩-৪ টি বীজ থাকে। বীজের উপরের খোসা বাদামী রঙের হয়। বীজের তেলের পরিমাণ ৪৯-৫০%। জাতটি বেশ খরা সহনশীল। ফলনঃ হেক্টর প্রতি প্রায় ২.৪-২.৬ টন।
ত্রিদানা বাদাম (ডিএম-১): বীজের উপরের খোসা গাঢ় লাল এবং প্রতি বাদামে ৩-৪ টি বীজ থাকে। বীজে তেলের পরিমাণ ৪৯-৫০%। জাতটি খরিপ মৌসুমে চাষ করা উত্তম। এ জাতটির বীজের সুপ্তি
কাল নেই।
ফলনঃ
হেক্টর প্রতি প্রায় ২.২-২.৪ টন।
বারি চীনাবাদাম-৫: প্রতি বাদামে বীজের সংখ্যা ১-২ টি। বাদামের শিরা উপশিরা খুব স্পষ্ট, বীজের আকার বড়। বীজের সুপ্তিকাল ১০-১৫ দিন। বীজে তেলের পরিমাণ ২৫-২৭%। রবি ও খরিফ উভয় মৌসুমে চাষ যোগ্য। ফলনঃ হেক্টরপ্রতি রবি মৌসুমে ২.৭০-৩.১০ টন এবং খরিফ মৌসুমে ২.০-২.৫ টন।
বারি চীনাবাদাম-৬: বীজের রং হালকা বাদামি। বীজে তেলের পরিমাণ ৫০-৫২%। ফলনঃ হেক্টর প্রতি রবি মৌসুমে ২.৫-২.৮ টন এবং খরিফ মৌসুমে ২.০-২.৪ টন।
বারি চীনাবাদাম-৭:
বাদামের খোসা মসৃণ ও কিছুটা সাদাটে ও নরম। বীজের সুপ্ততা নেই। পাতায় দাগ পড়া ও মরিচা রোগ তুলনামুলক কম হয়। ফলনঃ হেক্টর প্রতি রবি মৌসুমে ২.৮-৩.০ টন এবং খরিফ মৌসুমে ১.৮-২.০ টন।
বারি চীনাবাদাম-৮:
বীজের আকার মাঝারি, বীজের রং লালচে। ফলনঃ হেক্টর প্রতি ২.৫ টন।
বারি চীনাবাদাম-৯:
বাংলাদেশের সবখানে রবি ও খরিফ মৌসুমে চাষাবাদের উপযুক্ত। এই জাতটি বারি চীনা বাদাম-৬ ও ৭ থেকে ৫-৭ দিন আগে পরিপক্ক হয়। ফলনঃ হেক্টর প্রতি ২.৫-২.৮ টন।
বর্তমানে প্রাণ উদ্ভাবিত প্রাণ চীনাবাদাম-১ উত্তরাঞ্চলে চাষ করে আশাতীত ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এ জাতের বাদামের দানা বড় এবং ফলনও প্রচলিত জাতের চেয়ে শতকরা ৩০ ভাগ বেশি।
বীজ বপনের সময়ঃ
খরিপ মৌসুমে এপ্রিল মাস থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চীনাবাদাম বপনের উপযুক্ত সময়। রবি মৌসুমে আশ্বিনের মাঝামাঝি থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত চীনাবাদাম বপন করা যায়।
বীজের পরিমাণঃ
বাদাম চাষের জন্য হেক্টরপ্রতি খোসাসহ মাইজচর বাদাম ৯৫ থেকে ১০০ কেজি, ঝিঙ্গা বাদাম ১০৫ থেকে ১১০ কেজি, বাসন্তী বাদাম ১০৫ থেকে ১১০ কেজি এবং ত্রিদানা বাদাম ১১০ থেকে ১১৫ কেজি এবং অন্যান্য জাতের বাদামের ৯৫ থেকে ১০৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
সারের পরিমাণঃ
ভালো ফলন পেতে হলে চীনাবাদাম চাষের জন্য হেক্টরপ্রতি ৫ থেকে ৭ টন পচা গোবর, ২০ থেকে ৩০ কেজি ইউরিয়া, ১৫০ থেকে ১৭০ কেজি টিএসপি, ৮০ থেকে ৯০ কেজি এমওপি, ১৬০ থেকে ১৮০ কেজি জিপসাম, ৪ থেকে ৫ কেজি জিঙ্ক সালফেট এবং ৯ থেকে ১১ কেজি বোরাক্স বা বরিক এসিডের প্রয়োজন হয়। অর্ধেক ইউরিয়া এবং অন্যান্য সার বীজ বপনের আগে শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বপনের ৪০ থেকে ৫০ দিন পর গাছে ফুল আসার সময় প্রয়োগ করতে হবে। তবে প্রতি কেজি বীজে ৭০ গ্রাম অণুবীজ সার ব্যবহার করলে সাধারণত ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয় না।
বপন পদ্ধতিঃ
চীনাবাদাম বপনের আগে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। খোসা ছাড়ানোর সময় লক্ষ রাখতে হবে, যেন বীজের উপরের পাতলা পর্দা পড়ে না যায়। টাটকা খোসা ছাড়ানো বীজ লাগানো ভালো। খোসা ছাড়ানোর পর দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে বাদামের বীজ বপন করা উচিত। বীজ সারিতে বপন করতে হবে। খরিপ মৌসুমে সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৪৫ সেন্টিমিটার এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব হবে ১৫ সেন্টিমিটার। বীজ বপনের সময় জমিতে প্রয়োজনীয় রস থাকতে হবে। রস কম থাকলে সেচ দিয়ে জমি তৈরি করে দিয়ে বীজ বপন করতে হবে। বীজ ৫ সেন্টিমিটার মাটির গভীরে বপন করতে হবে।
পানি সেচঃ খরিপ-১ মৌসুমে অবস্থা বুঝে প্রয়োজনবোধে একটি সেচ দেয়া যেতে পারে। চর এলাকায় সেচ দেয়ার তেমন প্রয়োজন হয় না। রবি মৌসুমে উঁচু জমিতে মাটির রস তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় বলে ১ থেকে ২টি সেচ দেয়া দরকার।
অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যাঃ
বীজ বপনের ১৫ থেকে ২০ দিন পর একবার নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। মাটি শক্ত হয়ে গেলে এবং ফুল আসার সময় গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে।
রোগবালাই ব্যবস্থাপনাঃ
বিছাপোকাঃ
বিছাপোকা গাছের পাতা ও কচি অংশ খেয়ে ফেলে। এ পোকার আক্রমণ দেখা দিলে ডায়াজিনন ৬০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার হারে মিশিয়ে সাত দিন পর পর সমস্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।
উইপোকাঃ
চীনাবাদাম গাছের এবং বাদামের যথেষ্ট ক্ষতি করে এ পোকা। এরা দলবদ্ধ বা কলোনি তৈরি করে বাদাম গাছের প্রধান শিকড় কেটে দেয় এবং শিকড় ভেদ করে গর্ত সৃষ্টি করে। এতে গাছ মারা যায়। এছাড়া উইপোকা মাটির নিচে বাদামের খোসা ছিদ্র করে বীজ খায়।
দমনঃ
পানির সঙ্গে কেরোসিন মিশিয়ে সেচ দিলে উইপোকা জমি ত্যাগ করে। আক্রান্ত জমিতে ডায়াজিনন-১০জি বা বাসুডিন-১০জি বা ডরসবান-১০জি যথাক্রমে প্রতি হেক্টরে ১৫, ১৪ ও ৭.৫ কেজি হারে প্রয়োগ করতে হবে।
পাতার দাগ রোগঃ
এ রোগের আক্রমণে পাতার ওপর হলদে রেখাবেষ্টিত বাদামি রঙের দাগ সৃষ্টি হয়। দাগ পাতার ওপর ছড়িয়ে পড়ে এবং পাতা ঝরে পড়ে।
প্রতিকারঃ
বাসন্তী বাদাম পাতার দাগ সহনশীল একটি জাত। এ জাতের বাদাম চাষের মাধ্যমে এ রোগের আক্রমণ এড়ানো যায়। রোগ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছে ব্যাভিস্টিন ৫০ ডবিউপি ১ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রতি ১২ দিন পর পর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
পাতার মরিচা রোগঃ
প্রাথমিক অবস্থায় পাতার নিচের পিঠে মরিচা পড়ার মতো সামান্য উঁচু বিন্দুর মতো দাগ দেখা যায়। দাগ ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। আক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাতার উপরের পিঠেও এ দাগ দেখা যায়।
প্রতিকারঃ
ঝিঙ্গা বাদামের জাত এ রোগ প্রতিরোধী। এ জাতের চাষের মাধ্যমে এ রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ রোগ দেখা দিলে টিল্ট-২৫০ ইসি প্রতি লিটার পানির সঙ্গে আধা মিলিলিটার হারে মিশিয়ে ১২ দিন পর পর দুই থেকে তিনবার স্প্রে করতে হবে। পূর্ববর্তী ফসল থেকে গজানো গাছ, আগাছা এবং খড় পুড়ে ফেলে এ রোগের আক্রমণ অনেকটা কমানো যায়।
ফসল তোলাঃ বাদাম যখন পরিপক্ব হয়, তখন গাছের পাতাগুলো হলদে হতে থাকে এবং নিচের পাতা ঝরতে শুরু করে। এ সময় দু-একটি গাছের গোড়া খুঁড়ে পাকা বাদামের গাঢ় রং ও শিরা পরীক্ষা করে সময়মতো বাদাম তুলতে হবে। তারপর তিন থেকে চার দিন ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে বাদাম সংরক্ষণ করতে হবে। শুকনা বাদামে ১০ শতাংশ অথবা তার কম রস থাকতে হবে।
ফলনঃ
ভালোভাবে যত্ন নিলে খরিপ মৌসুমে হেক্টরপ্রতি ২.০ থেকে ২.৫ টন চীনাবাদামের ফলন পাওয়া যায়।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৬জুন২০