বান্দরবান: বান্দরবান পার্বত্য জেলার পাহাড়ের উঁচু নিচু বাগানগুলোর বাতাসে এখন পাকা আনারসের ঘ্রাণ। সুউচ্চ চিম্বুক পাহাড়ের সড়কে গেলেই দেখা মিলবে রাস্তার দুই পাশে শতাধিক আনারসের বাগান।
আর সেই বাগান থেকে আনারস তুলতে সকাল থেকে ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর বম জনগোষ্ঠী। ছোট বড় সকলেই রোদ আর বৃষ্টি উপেক্ষা করে রসে ভরা টসটসে আনারস, বাগান থেকে কেটে বাঁশের খাঁচা ভর্তি করছেন।
বড়-ছোট কিংবা মাঝারি আকারের আনারস কিনতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পাইকাররা ভিড় করছেন পাহাড়িদের বাগানগুলোতে। এবার উর্বর মাটিতে বিষমুক্ত আনারস চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা। তাই প্রতি বছরই বাড়ছে আনারস চাষের জমির পরিমাণ। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে বান্দরবানের আনারস ।
জানা যায়, সকাল সাড়ে ৬টার দিকে গ্যাসমনি পাড়ার চাষি জেসি চাকমা এসেছেন তার নিজ বাগান থেকে ধারালো পাতলা দা দিয়ে আনারস কাটার জন্য। হাতে মোজা আর পায়ে জুতা পরে ধারালো দা দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে একে একে রসালো জাইনকুইন আনারস কাটছেন তিনি । কাটা শেষে পাহাড়ের ধাপে ধাপে আলতো পা ফেলে সেই আনারস বাঁশে তৈরি খাঁচা ভর্তি করে পাহাড়ের উপরের সমতল জায়গায় নিয়ে আসছেন।
একটু ক্লান্তি শেষে বিশ্রাম নেওয়ার সময় আনারস নিয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি জানান, এ বছর আবহাওয়া অনেক ভালো। গত বছর আনারস বিক্রি করে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পেয়েছি তবে এবার ২ লাখ টাকা পাবো।
তিনি আরো জানান, চাষাবাদের ব্যাপারে কৃষি বিভাগ থেকে আমাদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়। শুধু জেসি চাকমাই নয় পাশের পাহাড়ের আনারসের কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন লাইমি পাড়ার চাষি পাকসিয়াম বম।
তিনি বলেন, পাঁচ একর জমিতে আনারসের চারা গাছ আছে ১৫ হাজার । ফলে পোকামাকড় নেই, ফলন ভালো । বাগানের ফল বাজারে বিক্রি করে পরিবারের বাড়তি আয় হয়। এ টাকা সংসারে খরচ করি।
বেতনী পাড়ার চাষি বানসিয়াম বম জানান, এক হাজার আনারস বিক্রি করলে ৩০ হাজার টাকার মত পায়। আর বাগানে এসে পাইকাররা আনারস কিনে ট্রাক অথবা সিএনজি গাড়ি ভর্তি করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রির জন্য নিয়ে যায়।
বান্দরবান সদরের গ্যাসমনি পাড়া ও ফারুক পাড়ার কয়েকজন আনারস চাষি জানিয়েছেন, আনারস চারা রোপণের জন্য প্রথমে জঙ্গল কেটে শুকিয়ে আগুন লাগাতে হয়। তারপর আবর্জনা পরিষ্কার করে পাহাড়ের ঢালে আড়াআড়ি করে লাগানো হয়। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে চার রোপণ করলে ফেব্রুয়ারি মার্চ মাসে ফুল আসে এবং মে,জুন ও জুলাই এ তিন মাস ফলন পাওয়া যায়।
আরো জানা যায়, বড় আকারের এক একটি জায়ান্ট কিউ আনারসে ওজন হয়ে থাকে ৫০০ গ্রাম থেকে ৩ কেজি। চাষিদের কাছ থেকে এ ওজনের একটি আনারস নিলে দাম হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। আর ছোট আকারের দাম পড়ে ১০ টাকা এবং মাঝারি আকারের আনারসের দাম পড়ে ২০ টাকা। বান্দরবান পার্বত্য জেলার ফারুক পাড়া, গ্যাসমনি পাড়া, লাইমি পাড়া, বেতনি পাড়ার পাশের পাহাড় গুলোতে গেলেই দেখা মিলবে আনারস বাগান।
বান্দরবান কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, তিন পার্বত্য জেলায় জায়ান্ট কিউ এবং হানিকুইন নামে দুই প্রজাতির আনারসের ভালো চাষাবাদ হয়। তবে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় বান্দরবান পার্বত্য জেলায় জায়ান্ট কিউ আনারসের উৎপাদন হয় বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৪ হাজার ৮৩২ হেক্টর জমিতে ৮৬ হাজার ৭৯৪ মে. টন এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৪ হাজার ৮৭২ হেক্টর জমিতে ৯৭ হাজার ৪৪০ মে. টন আনারসের উৎপাদন হয়।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. একে এম নাজমুল হক জানান, এশিয়ার মধ্যে জায়ান্টকিউ আনারসের জাতটা খুবই বিখ্যাত। এ আনারস ৩-৫ কেজি পর্যন্ত হয়, ওজন বেশি, মিষ্টি এবং বড় । যার কারণে এর চাহিদা বেশি । প্রতি বছর প্রায় ৮৭ হাজার মে. টন আনারস বান্দরবানে উৎপাদন হয়।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন