গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের রামজীবন ইউনিয়নের সুবর্নদহ গ্রামের কৃষাণী দুলালী বেগম। তার হাত ধরে বাংলাদেশ পেল বেগুনি জাতের নতুন ধান। যে ধানের উৎপাদন খরচ কম, তবে ফলন বেশি।
ধানের শীষের রং হলদে-সবুজ কিন্তু পাতার রং বেগুনি। প্রতিদিনই এই ধান ক্ষেত দেখতে ভিড় করছেন কৃষক ও উৎসুক মানুষরা। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এই ধান সম্প্রসারণ ও চালের পুষ্টিগুণ জানতে গবেষণা প্রয়োজন।
বেগুনি পাতার ধান ক্ষেত দেখে প্রথমে অবাক হবেন যে কেউ। দুলালী বেগম ২০ শতক জমিতে এই ধান চাষ করেছেন।
দুলালী বেগম বলেন, ‘‘স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি নিজের সামান্য জমি চাষাবাদ করেন। গত বছর নিজের চাষ করা ব্রি-২৮ ধানের জমিতে কয়েকটি বেগুনি পাতার ধান দেখতে পান। ধানের শীর্ষ থেকে তিনি বীজ সংগ্রহ করে কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবার এই ধান চাষ করেন। নতুন জাতের এই ধান নিজের নাম ‘দুলালী সুন্দরী ধান’ হিসেবে ছড়িয়ে দিতে চান দুলালী বেগম।
দুলালী বেগমের এমন ব্যতিক্রম ধান চাষ এলাকায় চমক সৃষ্টি করেছে। সাধারণ জাতের ধানের চেয়ে বেগুনি পাতার ধানের একটি ছড়ায় কুশির সংখ্যাও বেশি। এই ধান দেখে খুশি হয়েছেন কৃষক ও এলাকাবাসী।
এলাকার কৃষকরা জানান, এর আগে কোথাও এমন ধান ক্ষেত দেখেনি কেউ। দুলালী বেগমের এই ধান দেখে রীতিমতো এলাকার কৃষক-কৃষাণীরা বেগুনি ধান চাষে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করছেন। অনেকেই বীজ চেয়েছেন দুলালীর কাছে।
এদিকে, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, এই বেগুনি ধান চীনে নিষিদ্ধ ধান বলা হয়ে থাকে। প্রাচীন চীনের রাজপরিবারের মধ্যেই কেবল এ ধানের ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল। এই ধানের ভাত খেলে দীর্ঘজীবী ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সুবিধা পাওয়া যায় বলে চীনারা বিশ্বাস করত। রাজপরিবারের বাইরে এই ধানের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্যের সাজা ছিল মৃত্যুদণ্ড। বিভিন্ন উৎসবে সম্রাট যোদ্ধাদের সম্মানে একত্রে এ ধানের ভাত খেয়ে থাকতেন।
তার ভাষ্যমতে, আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত মাত্রার এন্থোসায়ানিন ও এন্টিঅক্সিডেন্টের কারণে এ ধানের রঙ বেগুনি হয়। ব্লু-বেরির চেয়েও এই ধানে এন্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি।
এ ধান বার্ধক্য প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। এ ধানে প্রচুর ফাইবার ও ভিটামিন ই রয়েছে। নিয়মিত এ ধানের ভাত খেলে ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। তাছাড়া ডায়াবেটিস ও আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি কমাতেও কার্যকর। এটি বাংলাদেশে চাষাবাদের তেমন নজির না থাকায় এ বিষয়ে তেমন গবেষণা হয়নি।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জামিউল ইসলাম বলেন, অল্প সময়ে কম খরচে উচ্চ ফলনশীল বেগুনি পাতার ধানে ব্লাস্ট বা কোন পোকামাকড়ের আক্রমণও নেই। জমিতে ধানের ফলনও হয়েছে বেশ ভালোই। উৎপাদিত এই ধানের বিজ সংরক্ষণের জন্য দুলালী বেগমকে সব উপকরণ দেয়া হয়েছে। এ বিজ সংরক্ষণের মাধ্যমে আগামীতে কৃষকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে আগ্রহী কৃষি বিভাগ’। বিএন বি আর।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন