চুয়াডাঙ্গায় আউসের কাঙ্ক্ষিত ফলন পাচ্ছে চাষিরা

522

2017-09-14_2_672165

চুয়াডাঙ্গা থেকে: জেলায় চলতি মৌসুমে আউস ধান আবাদে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাচ্ছেন চাষিরা। অপরদিকে কাঁচা ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৮০০ টাকা দরে। ফলে কৃষকের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। পাট চাষে লোকসান হওয়ায় আউস ধান আবাদের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার চাঁরটি উপজেলায় ৩৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আউস ধান আবাদ হয়েছে। গত বছর আবাদের পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার ৪০০ হেক্টরে। বোরো ও আমন ধান চাষের চেয়ে আউসের খরচ তুলনামূলক কম। অন্যদিকে ভাদ্র মাসে গো-খাদ্যের সংকট পূরণ হচ্ছে আউস ধানের খড়-বিচুলিতে। বোরো ও আমন মৌসুমের মাঝামাঝি আউস ধান পেয়ে কৃষি পরিবারের ভাতের জোগানও হচ্ছে। এসব বিবেচনায় আউস আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। এ মৌসুমের আবাদকৃত ধানের মধ্যে প্রায় ৪০ ভাগ কাটা সম্পন্ন হয়েছে। যার গড় ফলন বিঘা প্রতি ১৯ থেকে ২৪ মণ পর্যন্ত। বিভিন্ন মাঠে হাইব্রিড, নেরিকা মিউটেন্ট ও ব্রি ধান ৪৮ আবাদ হয়েছে। তবে এর মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগই ব্রি ধান ৪৮।

দামুড়হুদা উপজেলা রামনগর-গোপালপুর মাঠে গোপালপুর গ্রামের কৃষক আশাদুল হক গত সপ্তায় ধান কাটেন। সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, স্যালো ইঞ্জিনের সঙ্গে থ্রেসার দিয়ে ধান মাড়াই কাজে ব্যস্ত কয়েকজন চাষি ও গরু পালনকারী কৃষক। কৃষক আশাদুল হক বলেন, বোরো ও আমন মৌসুমে উৎপাদিত ধানের চাল থেকে পরিবারের ভাতের জোগান হয়। চাষের খরচের প্রয়োজনে ধান বিক্রি করতে হয়। এতে প্রতি বছরের শ্রাবণ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত আমার ঘরে অভাব থাকে। তবে ভাদ্র মাসে আউস ধান উত্তোলনের ফলে অভাব দুর হচ্ছে। অপরদিকে ভরা বর্ষা মৌসুম তাই গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। মাঠেঘাটে ঘাসের আকাল। তাই কয়েকজন গরু পালনকারী আমার ক্ষেতের ধান কেটে মাড়াই করে দিয়েছেন। বিনিময়ে তারা ধানের বিচুলি নিয়েছে। এতে ধান কাটা ও মাড়াই খরচ বাবদ প্রায় চার হাজার টাকা সাশ্রয় হয়েছে। তবে অনেক কৃষক ধানের বিচুলী তৈরি করেও বিক্রি করছেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর গ্রামের কৃষক আনছার আলী ওই মাঠে দুই বিঘা জমিতে ব্রি ধান-৪৮ আবাদ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিঘা প্রতি প্রায় ২২ মণ ফলন হয়েছে। কাঁচা অবস্থায় প্রতি মণ ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। বোরো ও আমন ধানের চেয়ে আউস ধান আবাদের খরচ তুলনামূলক কম। বিঘা প্রতি সর্বোচ্চ খরচ সাড়ে সাত হাজার টাকা। বর্তমান বাজার দরে বিক্রি করে বিঘা প্রতি প্রায় আট হাজার টাকা লাভ পেলাম। ধান মাড়াই করার পর চাতাল মালিকরা কাঁচা অবস্থায় ওজন করে কিনে নিয়েছেন। ফলে ধান শুকানো ও পরিবহন খরচ সাশ্রয় হয়েছে।

চাষি ও কৃষি অফিস সূত্রে আরো জানা গেছে, বোরো, আমন ও রবি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ফসলে ফসলে মাঠ ভরে যায়। রবি মওসুমে গম, মসূর ও ডাল-তেল জাতীয় ফসলের বীজ বপণ শুরু হয় কার্তিক মাস থেকে। আউস ধান কাটার পর দেড় মাস জমি পড়ে থাকে। চাষ করে জমি ফেলে রাখার ফলে জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়। রবি ফসল তোলার পর মুগ ডাল আবাদ করে আবারো আউস ধান কেটে রবি মৌসুম ধরা যায়। অপরদিকে আউস ধান কাটার পর মাস কালাই আবাদ করেও রবি ফসলে যাওয়া যায়। এভাবে হিসেব করে অনেক চাষি একই জমিতে বছরে তিন থেকে চারটি ফসল উৎপাদন করছেন।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সিটিউট (ব্রি) উদ্ধাবিত ব্রি ধান ৪৮। জাতীয় বীজ বোর্ড ২০০৮ সালে রোপা আউস হিসেবে জাতটি অবমুক্ত করে। জাতের বৈশিষ্ট্য অধিক ফলন, চাল মাঝারি মোটা, ভাত ঝরঝরে ও সু-স্বাদু। ফলে আর্থিক ও খাদ্য জোগানের ক্ষেত্রে ব্রি-ধান ৪৮ সকলের নজর কেড়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের(ভারপ্রাপ্ত)উপ প্রবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, এ অঞ্চলের কৃষকের কাছে আস্থা অর্জন করেছে ব্রি ধান ৪৮। হাইব্রিড ও নেরিকা মিউটেন্ট জাতের ধান আবাদ হলেও তা পরিমাণে কম। আউস ধান আবাদে খাদ্য চাহিদা পুরণ ও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। এ আবাদে কৃষকরা খুব খুশি। ফলে গত বছরের চেয়ে এবার আউস ধান আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। সূত্র: বাসস

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম