চুয়েটে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৩ উদযাপিত

“প্রকৌশল ও প্রযুক্তি খাতেও নারীদের অংশগ্রহণ আশানুরূপভাবে বাড়ছে”- চুয়েট ভিসি

83
চুয়েটে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে অতিথিদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দিচ্ছেন মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এর মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, “সভ্যতার শুরু থেকেই আমাদের নারীদের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। দেশের বর্তমান উন্নয়নও অগ্রগতির পেছনেও রয়েছে নারীদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা। আমাদের দেশের জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেকই নারী। তাদের পিছিয়ে রেখে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই নারী শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও নারীদের এগিয়ে যেতে হবে। চুয়েটে বর্তমানে ১২ শতাধিক নারী শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। এছাড়াও বিগত এক দশকে নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যাও আশাব্যাঞ্জক হারে বেড়েছে। যেটা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি খাতে নারীদের অংশগ্রহণের দিকটাতে আমাদের আরও আশাবাদী করে তোলে।”

তিনি আজ ১৪ই মার্চ (মঙ্গলবার) ২০২৩ খ্রি. বেলা ১২.০০ ঘটিকায় বিশ^বিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল কক্ষে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নমূলক কার্যকলাপ কঠোরভাবে দমনের লক্ষ্যে গঠিত অভিযোগ কমিটির আয়োজনে “ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন” স্লোগানে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৩ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক জনাব ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়েট অ্যালামনাই ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) জনাব নীরা মজুমদার, চুয়েটের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চুয়েটের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নমূলক কার্যকলাপ কঠোরভাবে দমনের লক্ষ্যে গঠিত অভিযোগ কমিটির আহ্বায়ক ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোসাঃ রোকসানা খাতুন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আয়শা আখতার, সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোছাঃ ফারজানা রহমান জুথী, গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোছাম্মৎ তাহমিনা আক্তার, ইইই বিভাগের সেকশন অফিসার জনাব আফরোজা সুলতানা রিমা, স্টাফ এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জনাব কুলসুমা বেগম, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী জনাব ইশরাত জাহান বুশরা। মানবিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব নাহিদা সুলতানা ও উপ-পরিচালক (তথ্য ও প্রকাশনা) জনাব মোহাম্মদ ফজলুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মানবিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জনাব ফরহাদ জামিলা।

প্রধান বক্তা বান্দরবানের জেলা প্রশাসক জনাব ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, “সংবিধানের একাধিক অনুচ্ছেদে নারীর অধিকার স্বীকৃত, বঙ্গবন্ধুও স্বাধীন বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। একজন জেলা প্রশাসকের একইসাথে জেলা কালেক্টর, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক হিসেবে নির্বাহী দায়িত্ব পালন করতে হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম নারী জেলা প্রশাসক আমিই। নারী হয়েও সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজেকে কখনো নারী ভাবিনি। একজন মানুষ হিসেবেই আমি দায়িত্ব পালন করে চলেছি। নারী বা পুরুষ আলাদা কোনো সত্ত্বা নয়। নারী-পুরুষ মিলেই আমাদের দেশের উন্নয়নের অংশীদার হতে হবে। আমরা মেয়েরাও পারি এবং পারবো এই বিশ্বাসটা সকল পুরুষের মাঝে জাগ্রত হতে হবে। অনেকেই মনে করেন নারীরা শিক্ষিত ও কর্মজীবী হলেই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। আমরা যতবেশি শিক্ষিত হবো, ততবেশিই বিনয়ী হওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে বিয়েটা নারী-পুুরুষ কেউ একা করে না, দুজনেই করে। তাই সংসারের দায়িত্বও দুজনের সমান। প্যারেন্টিং দুজনকে মিলেই করতে হয়। আমার কাজ/দায়িত্ব না বলে, আমাদের বলার চর্চা করতে হবে। বেগম রোকেয়ারাও তাঁদের স্বামী, ভাই ও বাবারা সহযোগিতা করেছেন বলেই আমাদের নারীদের আজকের এই অগ্রগতি। বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইটা আমি মেয়েদের পড়তে বলবো। নয়াচীনের নারীরা কীভাবে পুরুষের সাথে একত্রে কাজ করেছে, নয়াচীনের বিশ্বজোড়া উন্নয়ন ঘটিয়েছে সেই ইতিহাস আমাদের নারীদের জানতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের নারীদের অগ্রগতির পেছনেও বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারিশম্যাটিক নেতৃত্বের ফসল।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) জনাব নীরা মজুমদার বলেন, “চুয়েটের প্রথম নারী গ্র্যাজুয়েট হিসেবে পরিচয় দিতে আমি গর্ববোধ করি। তখন চুয়েটে ৭৫০ জন শিক্ষার্থী ছিল। আর আমি একা একজন মেয়ে ছিলাম। সেই সময়ে কোনো ধরনের বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। শিক্ষক, সহপাঠী ও কর্মচারী সবার কাছ থেকেই অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছি। তবে কর্মজীবনের পথচলা এতোটা সহজ ছিল না। কিছুসংখ্যক নারী ক্ষমতায় আসা মানেই কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন না। এটাতে দেশের সামগ্রিক নারীর অগ্রগতির চিত্রও প্রতিফলন হয় না। তবে আমাদের সহকর্মী ও পার্টনার যদি সহযোগী মানসিকতার হয়, তাহলে কিন্তু নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা অনেকখানি সহজ হয়ে যায়।”

এর আগে নারী দিবস উপলক্ষ্যে সকাল ১১.৫০ ঘটিকায় উপাচার্য মহোদয়ের ভবনের সামনে থেকে এক র‌্যালি বের করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন চুয়েটের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। র‌্যালিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্রী, নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা অনুষ্ঠানে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক একটি ভিডিওচিত্র উপস্থাপনের মাধ্যমে দেশের নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতি তুলে ধরেন। পরে উপস্থিত নারীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের কেক কাটা হয়।