চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) “স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে জ্ঞান অন্বেষণ” (Knowledge Exploration for Smart Bangladesh) স্লোগানে প্রথমবারের মতো “গবেষণা মেলা-২০২৩” (Research Fair-2023) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। চুয়েটের গবেষণা ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে আগামী ৯ই আগস্ট (বুধবার) ২০২৩ খ্রি. সকাল ১০:৩০ ঘটিকা থেকে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে এই গবেষণা মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় দেশের ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীর মিলনমেলা বসবে। যেখানে চূড়ান্তভাবে বাছাইকৃত মোট ১২৪টি গবেষণা প্রবন্ধ (৯১টি পোস্টার ও ৩৩টি প্রজেক্ট) উপস্থাপিত হবে। উক্ত গবেষণা মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান মহোদয়। এতে গেস্ট অব অনার হিসেবে থাকবেন চুয়েটের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন চুয়েটের পাঁচটি অনুষদের ডিনবৃন্দ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন গবেষণা ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. সজল চন্দ্র বনিক।
এ উপলক্ষ্যে আজ ৭ই আগস্ট (সোমবার) ২০২৩ খ্রি. বেলা ১২:৩০ ঘটিকায় চুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের একাডেমিক কাউন্সিল কক্ষে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে অনুষ্ঠানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গবেষণা মেলা-২০২৩ এর আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জি.এম. সাদিকুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন গবেষণা মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি এবং গবেষণা ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. সজল চন্দ্র বনিক। এ সময় আয়োজক কমিটির সদস্যবৃন্দের মধ্যে মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোসাঃ রোকসানা খাতুন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার রায়, যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মামুনুর রশীদ, ইটিই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম, ইইই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সম্পদ ঘোষ, পিএমই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসলাম মিয়া, ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ আহম্মদ, উপ-পরিচালক (তথ্য ও প্রকাশনা) মোহাম্মদ ফজলুর রহমান, সহকারী রেজিস্ট্রার (সমন্বয়) মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম, জিপিএইচ ইস্পাতের সহকারী ব্যবস্থাপক (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) মো. সোহানুর রহমান প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মানুষের জীবনযাত্রা, কাজ করার পদ্ধতি এবং একের সঙ্গে অপরের সম্পর্কিত হওয়ার মৌলিক পদ্ধতিগুলো আমূল পরিবর্তন করে দেবে। বৈশ্বিক এই প্রতিযোগিতার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। এই গবেষণা মেলায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে গবেষণা মনষ্কতা বাড়বে এবং দেশি-বিদেশি গবেষকদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে যেন আরও বেশি গবেষণায় উদ্বুদ্ধ হতে পারেন; পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রি (শিল্প)-একাডেমিয়া সম্পর্ক স্থাপন এবং মানসম্পন্ন প্রকাশনা, গবেষণা ও উদ্ভাবন কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মত আয়োজন করতে যাচ্ছে “গবেষণা মেলা-২০২৩”।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই জাতীয় গবেষণা মেলায় চুয়েট-সহ বাংলাদেশের ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গবেষকরা অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। উক্ত মেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের বিভিন্ন লেভেলের (আন্ডারগ্র্যাজুয়েট, পোস্টগ্র্যাজুয়েট, পোস্টডক.) শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকদের গবেষণা প্রকল্প ও উদ্ভাবন তুলে ধরা হবে। প্রাথমিকভাবে মেলায় অংশগ্রহণের জন্য ১৯৫টি পোস্টার ও প্রজেক্ট জমা পড়ে। অভিজ্ঞ রিভিউ প্যানেলের অ্যাবস্ট্র্যাক্টগুলো রিভিউ এর মাধ্যমে ১৯১টি (১৫৮টি পোস্টার ও ৩৩টি প্রজেক্ট) প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়। পরবর্তীতে বিশেষজ্ঞ গবেষক প্যানেলের রিভিউ এর মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে মোট ১২৪টি (৯১টি পোস্টার ও ৩৩টি প্রজেক্ট) চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়। যা আগামী ৯ই আগস্ট ২০২৩ খি. উক্ত গবেষণা মেলায় বিভিন্ন লেভেলের গবেষকরা উপস্থাপন করার সুযোগ পাবেন। উক্ত গবেষণা মেলায় পোস্টার প্রদর্শনীতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের মধ্যে যথাক্রমে দশ হাজার, সাত হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা এবং প্রজেক্ট প্রদর্শনীতে যথাক্রমে পনেরো হাজার, দশ হাজার ও সাত হাজার টাকা পুরষ্কার প্রদান করা হবে। এছাড়া প্রথমবারের মত চট্টগ্রামের ১৫টি কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। যাতে করে কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের গবেষণা সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা অর্জন করতে পারবেন। মেলায় অংশগ্রহণের জন্য কোনো ধরনের রেজিস্ট্রেশন ফি লাগবে না। এছাড়া সকল টিমকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সকল অংশগ্রহণকারীকে সনদপত্র প্রদান করা হবে।
আগামী ০৯ই আগস্ট সকাল ১১:৩০ ঘটিকা থেকে দুপুর ১:৩০ মিনিট পর্যন্ত নতুন লাইব্রেরি ভবনের নিচতলায় প্রজেক্ট শো ও গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরের সামনে পোস্টার প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি দুপুর ২.৩০ মিনিট থেকে কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে “ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল টক” এর মাধ্যমে গবেষণা মেলার ২য় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৩:৫০ মিনিটে চুয়েট শিক্ষকদের মধ্যে ২০২৩-২৪ সেশনে “DRE Research Project Award” অনুষ্ঠান একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি বিকেল ৪:৩০ মিনিটে চুয়েট শিক্ষকদের মধ্যে “বেস্ট রিসার্চ পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড” তুলে দেওয়া হবে। পরিশেষে বিকেল ৫:০০ ঘটিকায় কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উক্ত গবেষণা মেলার পুরস্কার বিতরণীর মাধ্যমে গবেষণা মেলার সমাপ্তি ঘটবে।
চুয়েট ক্যাম্পাসে আয়োজিত প্রথম জাতীয় গবেষণা মেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক শিক্ষার্থীদের সংগঠন সার্বিক সহযোগিতায় থাকবে। উক্ত গবেষণা মেলার স্পনসর হিসেবে থাকবে জিপিএইচ ইস্পাত, Revup, DCDL ও কনফিডেন্স সিমেন্ট। বেভারেজ পার্টনার থাকবে নেসক্যাফে। পাশাপাশি মিডিয়া পার্টনার হিসেবে থাকবে চ্যানেল আই, চ্যানেল ২৪, এখন টিভি, Daily Observer, দৈনিক আজাদী ও চুয়েট নিউজ ২৪।