প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আখতারুজ্জামান মহোদয় বলেছেন, “মেলার যে ধারণা, তার সঙ্গে মানুষ অন্যভাবে পরিচিত। কিন্তু গবেষণা নিয়ে মেলা, এটা একটা নতুন ধারণা। গবেষণা মেলায় নতুন-নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও জনসম্মুখে সেই জ্ঞানের বিতরণ দুটো কাজই একসাথে হয়ে থাকে। গবেষণার মাধ্যমে সমাজে একটা রূপান্তর ঘটে। আগস্ট মাসের শোককে শক্তিতে পরিণত করতে গবেষণা মেলা আয়োজনের এটাই উপযুক্ত সময়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বিজ্ঞান, কৃষি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উদ্ভাবনের মাধ্যমে জাতির রূপান্তর ঘটানো। বর্তমান বাস্তবতায় প্রকৌশল ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞানের মাধ্যমেই সেটা সম্ভব। তাছাড়া বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ের প্রধান প্যারামিটার হচ্ছে গবেষণা ও উদ্ভাবন। এখন ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবোরেশানের যুগ। একইসাথে কমিউনিটি এনগেজমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক দায়িত্ব হচ্ছে সমাজের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের কাজে লাগিয়ে তাদের কল্যাণেই কাজ করা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর কেন্দ্রীয়ভাবে চুয়েটের গবেষণা মেলার এই আয়োজন দেখে ভালো লাগছে। চুয়েটের দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সুন্দর পরিছন্ন পরিবেশ, আধুনিক ল্যাবরেটরি সুবিধামণ্ডিত ক্যাম্পাস দেখে ভালো লাগলো।”
তিনি আজ ২৮শে আগস্ট (সোমবার) ২০২৩ খ্রি. সকাল ১০:৩০ ঘটিকায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এর কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামে প্রথমবারের মতো আয়োজিত “গবেষণা মেলা-২০২৩” (Research Fair-2023) এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। “স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে জ্ঞান অন্বেষণ” (Knowledge Exploration for Smart Bangladesh) স্লোগানে চুয়েটের গবেষণা ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে এই গবেষণা মেলা আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে ছিলেন চুয়েটের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়েটের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সুনীল ধর, পুরকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সুদীপ কুমার পাল, যন্ত্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, তড়িৎ ও কম্পিউটার কৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামসুল আরেফিন, স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল হাছান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রিসার্র্চ ফেয়ার-২০২৩ এর আহ্বায়ক এবং গবেষণা ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. সজল চন্দ্র বনিক। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রিসার্র্চ ফেয়ার-২০২৩ এর সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. জি.এম. সাদিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইইই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সম্পদ ঘোষ ও সিএসই বিভাগের প্রভাষক তাসমিয়া বিনতে হাই। মেলায় দেশের ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষক, গবেষক, প্রকৌশলী, উদ্যোক্তা, প্রফেশনাল ও শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা বসে। যেখানে চূড়ান্তভাবে বাছাইকৃত মোট ১৩১টি গবেষণা প্রবন্ধ (৯৪টি পোস্টার ও ৩৭টি প্রজেক্ট) দুইভাগে বিভক্ত হয়ে উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনারের বক্তব্যে চুয়েটের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, “চুয়েটের ভৌগলিক অবস্থান মফস্বলে হলেও ছাত্র-শিক্ষকদের মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে পেরেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কিউএস র্যাংকিংয়ে সেটার প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণা ও উদ্ভাবন, দেশে-বিদেশে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবোরেশনে সর্বদাই সচেষ্ট। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে গবেষণা সংস্কৃতি তৈরির লক্ষ্যে ‘বেস্ট রিসার্চ পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড’ এবং ‘স্টুডেন্ট রিসার্চ ফান্ড’ চালু করেছি। এবার গবেষণা ও উদ্ভাবন কার্যক্রমকে আরও জোরদার করার প্রয়াস হিসেবে প্রথমবারের মত গবেষণা মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আশা করি এখন থেকে এই মেলা প্রতিবছর আয়োজন করা হবে।”
এর আগে সোমবার সকাল ১০:১৫ ঘটিকায় চুয়েট ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে আনন্দ র্যালির মাধ্যমে গবেষণার মেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে বেলা ১২:০০ ঘটিকায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই-এর তত্ত্বাবধানে “স্মার্ট এমপ্লয়মেন্ট” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। পরে গবেষণা মেলায় উপস্থাপিত প্রবন্ধের সংকলন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এরপর বেলা ১২:১০ ঘটিকা থেকে প্রজেক্ট শো-কেস এবং পোস্টার প্রেজেন্টেশন প্রদর্শিত হয়। উৎসবের দ্বিতীয় পর্বে বেলা ২:৩০ ঘটিকায় শুরু হয় “ইন্ডাস্ট্রিয়াল টক” এবং বিকাল ৩:০০ ঘটিকায় অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ববিখ্যাত মেটাল উৎপানকারী প্রতিষ্ঠান ইতালির ডেনিয়েলি গ্রুপের “কর্মসংস্থান” বিষয়ক প্রেজেন্টেশন। পরবর্তীতে বিকাল ৩:৩০ ঘটিকা থেকে চুয়েট শিক্ষকদের মাঝে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের “DRE Research Project Award” এবং ২০২২ সালের “Best Research Publication Award” প্রদান করা হয়। সবশেষে বিকাল ৪:৩০ ঘটিকায় প্রথম জাতীয় গবেষণা মেলার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। উক্ত সমাপনী অনুষ্ঠানমালায় প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়েটের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। এতে সভাপতিত্ব করেন গবেষণা ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. সজল চন্দ্র বনিক। উক্ত গবেষণা মেলায় স্পনসর হিসেবে ছিল- জিপিএইচ ইস্পাত, Revup, DCDL ও কনফিডেন্স সিমেন্ট। বেভারেজ পার্টনার থাকবে নেসক্যাফে। পাশাপাশি মিডিয়া পার্টনার ছিল চ্যানেল আই, চ্যানেল-২৪, এখন টিভি, Daily Observer, দৈনিক আজাদী ও চুয়েট নিউজ ২৪।