চৌগাছায় এক দশকে কমেছে দুই হাজার বিঘা ফসলি জমি

452

যশোরের চৌগাছায় আশঙ্কাজনকভাবে কমতে শুরু করেছে ফসলি জমি। প্রতি বছরই কমছে জমি, যা ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করছেন অনেকে। গত এক দশকে প্রায় ২ হাজার বিঘা জমি কমেছে। বাড়ি-ঘর, মিলকারখানা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, সড়ক, স্কুল কলেজ নির্মাণের ফলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি বলে অনেকের অভিমত। এক দিকে চৌগাছাতে হু হু করে বাড়ছে জনসংখ্যা, অন্যদিকে কমছে ফসলি জমি। ফসলি জমি কমে যাওয়ার ঠেকাতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজš§কে এর খেশারত দিতে হবে এমনটিই মনে করছেন সচেতন মহল।

সূত্র জানায়, ১৯৭৯ সালে তৎকালীন সরকার ভারত সীমান্তের গাঁ ঘেষে গড়ে ওঠা ছোট্ট চৌগাছা বাজারকে থানায় রূপান্তরিত করেন। উপজেলার পূর্বে যশোর সদর ও ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলা, উত্তরে কোটাচঁদপুর, পশ্চিমে মহেশপুর ও ভারতের চব্বিশ পরগনা এবং দক্ষিণে ঝিকরগাছা উপজেলা অবস্থিত। ১১টি ইউনিয়ন ১টি পৌরসভার ১৬১টি গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত উপজেলাতে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষের বসবাস।

জনশ্রুতি আছে, চৌগাছা প্রথমে থানা পরে উপজেলা হওয়ার পর ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ২০০৪ সালে উপজেলা সদরকে নিয়ে পৌরসভা গঠন করার পর অভূতপূর্ব উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে সর্বত্র। যে কারণে অল্প সময়ের মধ্যে এখানে সব ধরনের ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটেতে শুরু করে। নির্মিত হয় গার্মেন্টস শিল্পের মতো বড়বড় শিল্প। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যাতায়াত সব কিছুতেই অভাবনীয় উন্নতি ঘটেছে। সব দিকেই যখন শুধুই উন্নয়ন ঠিক সেই সময়ে চৌগাছাবাসীর জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে ফসলি জমি। প্রতি বছরই কোনো না-কোনোভাবে নষ্ট হচ্ছে জমি।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১০ বছর আগে চৌগাছাতে মোট ফসলি জমির পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৭৭৫ হেক্টর। বর্তমানে সেই জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৫০০ হেক্টরে। অর্থাৎ ১০ বছরে ফসলি জমি কমেছে ২৭৫ হেক্টর। বিঘায় হিসাব করলে দাঁড়ায় প্রায় ২ হাজার ৬৩ বিঘা জমি।

অন্যদিকে গত ১০ বছরে জনসংখ্যা বেড়ে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ পার হয়েছে। বছর বছর মানুষ বাড়ছে কিন্তু বাড়ছে না ১ ইঞ্চি জমি। অথচ নানা কারণে শুধুই কমছে বিঘার পর বিঘা ফসলি জমি। জমি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে যত্রতত্র বসতবাড়ি ব্যবসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিল্প-কলকারখানা ও সড়ক নির্মাণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার প্রধান ৫টি সড়ক, চৌগাছা-যশোর, ঝিকরগাছা, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর ও পুড়াপাড়া সড়কের দুই পাশে প্রতি দিনই বাড়ছে বসতবাড়ি ব্যবসা কিংবা মিল-কলকারখানা। একই অবস্থা শহর ও শহরতলির প্রতিটি পাকা কিংবা কাঁচা সড়কের পাশে এমনকি ফাঁকা মাঠের মধ্যেও হচ্ছে বাড়িঘর। সরকার থেকে যখন ঘোষণা আসছে কোনো ক্রমেই ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না, জমি রক্ষা করে বসতবাড়ি, মিল-কলকারখা স্থাপন করতে হবে, সেই সময়ে চৌগাছাতে এর বিপরীত চিত্র লক্ষ করা যাচ্ছে। যেভাবে দিন দিন ফসলি জমি কমতে শুরু করেছে তাতে করে আগামী দিনে সব ধরনের ফসল উৎপাদনে চরম ধস নামতে পারে। শুধু তাই না, এর প্রভাব পড়বে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর। ফসলি জমি রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্টদের এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবেÑএমনটিই মনে করছেন উপজেলার সচেতন মহল।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সমরেন বিশ্বাস বলেন, বসতবাড়ি, শিল্প-কলকারখানা, সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মানসহ বেশ কিছু কারণে জমি কমে যাওয়ার মুল কারণ। ফসলি জমি কমে যাওয়া কারও জন্যই সুখকর না। প্রতিটি মানুষকে জমি রক্ষা করে বসতবাড়ি ও মিল-কলকারখানা নির্মাণসহ উন্নয়নকাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।