ছাগল খামারের প্রাথমিক পরিকল্পনা কি হওয়া উচিৎ? আমাদের ছাগল খামার শুরু করার আগে কিছু প্রশ্ন সবসময় মাথায় আসে এটাই স্বাভাবিক। প্রথম ছাগল খামার শুরু করতে চাইলে এসকল প্রচুর প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে।
সঠিক সময়ে সঠিক উত্তর পাওয়া কিছুটা কিছুট কঠিন বৈকী। এই পোস্টে সে সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা থাকবে।
অনেকেই আমার উত্তরগুলির সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন, দয়া করে আপনার সঠিক মতামত / পরামর্শ কমেন্টে যানাবেন, এতে সবার উপকার হবে।
ছাগলের জাত
গোট ফার্মিং শুরু করার আগে খামারির জাত সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন থাকে। যেমন-
খামারের জন্য ছাগলের জাত ও সংখ্যা
আপনার ছাগল পালন এর অভিজ্ঞতা ও আপনার সক্ষমতার উপর নির্ভর করবে- কয়টি দিয়ে আপনি শুরু করবেন। তবে একবারে প্রথম অবস্থায় ১০ টি ছাগী ও একটি ভালো পাঁঠা দিয়ে শুরু করলে ভালো হয়। খামারের প্যারেন্টস সংগ্রহর সময় আপনাকে কয়েকটি গুণাগুণ বা বৈশিষ্ট এর ব্যাপারে নজর দিতে হবে, যেমন- যে জাতের দৈনিক ওজন দ্রুত বাড়তে পারে এমন জাত নির্বাচন করা। এছারাও দুধের উৎপাদন ভালো ও বাচ্চার সংখ্যা বেশি হয় এমন প্যারেন্টস সংগ্রহ করুন। দুই বা তার অধীক বাচ্চা দেয় এমন জাত কিনতে হবে। আমাদের দেশের ক্রসবেঙ্গল জাত টা দিয়ে খামার শুরু করা যেতে পারে।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল
ব্ল্যাক বেঙ্গল বাংলাদেশের একমাত্র ছাগলের জাত। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিম বঙ্গ ও আসামের বিভিন্ন গ্রামে এ জাতের ছাগল দেখা যায়। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের সাধারণত বৈশিষ্ট্য গুলো হলো- এদের গায়ের রং প্রধানত কালো, তবে সাদা, সাদা কালো, খয়েরি কালো, খয়েরি ইত্যাদি রং এরও হতে পারে। শরীরের আকার সাধারণত ছোট প্রকৃতির হয়। ছাগলের গায়ের লোম মসৃণ ও ছোট ছোট হয়। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের কান এবং শিং ছোট হয়।
যমুনা পাড়ী ছাগল
যমুনা পাড়ী ছাগল বাংলাদেশ ও ভারতে খুব জনপ্রীয়। যমুনা পাড়ী ছাগলের প্রজনন ক্ষমতা কম হলেও এর বৃদ্ধির হার বেশি ও শারিরিক কাঠাম বড় হয়। যমুনা পাড়ী ছাগলের শরীরের রং সাদা, কালো, হলুদ, বাদামী সহ বিভিন্ন রঙয়ের সংমিশ্রণে হতে পারে। এদের কান লম্বা ও বাঁকা প্রকৃতির হয়। এদের পা লম্বা এবং পিছনের পায়ের পিছন দিকে লম্বা লম্বা লোম থাকে। এই জাতটি খুবই কষ্ট সহিষ্ণু।
খামারের জন্য ছাগলের বয়স
খামার শুরু করতে হলে আপনাকে ৬ মাস বয়সী উপযুক্ত জাত সংগ্রহ করতে হবে। কেননা বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কম থাকে এবং তারা খুব সহজেই নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। আপনি বাংলাদেশের প্রয় সব অঞ্চলে ভালো জাত দেখতে পাবেন। তবে রাজশাহী, নাটোর, কুষ্টিয়া, বগুড়া, মেহেরপুরের কয়েকটি জায়গায় আপনি কিছু ভালো জাত দেখতে পাবেন।
শেড নির্মাণ
খামারের জায়গা
একটি পূর্ণ বয়স্ক ছাগির জন্য ১২-১৫ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন হয়, তবে আপনি যদি সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় পালন করতে চান তবে আপনাকে মিনিমাম ২০ বর্গফুট জাইগা সরবরাহ করতে হবে। খামারের জায়গা উঁচু হতে হবে, যেন বৃষ্টির পানি না জমে থাকে। এবং তা প্রধান সড়ক হতে দূরে কিন্তু যোগাযোগ ব্যবসস্থা ভাল তাকতে হবে। খামারের পরিবেশ খোলামেলা হতে হবে। খামারের মাটি কাকাড় ও বালি মিশ্রিত হলে বাল হয়। কামার থেকে পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ভাল হতে হবে।
শেডের ধরণ
প্রচুর আলো এবং বাতাস চলাচল করে, নির্জন, পানি জমে না এমন স্থানে শেড নির্মাণ করা উচিৎ। শেডটিতে একটি কাঠ বা বাঁশের মাচা থাকতে হবে, মাচা এমন একটি ব্যবস্থা যাতে নীচের অংশটি সহজেই পরিষ্কার করা যায় এবং প্রানী ভালো থাকে। শেডটি দক্ষিণ দিকে মুখ করে থাকলে এটি আরও ভাল হয়। এছাড়াও, আপনি ইউটিউবে প্রচুর ভাল ভিডিও দেখতে পান এতে কিছু ধারণা পাবেন।
ছাগলের খাদ্য
ঘাস ও দানাদার খাবার
খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা তার দেহের আকার / ওজনের উপর নির্ভর করে। যাইহোক প্রতিটির বাড়ন্ত জন্য গড়ে দৈনিক 2-3 কেজি কাঁচা ঘাস এবং 150-250 গ্রাম দানাদার খাদ্য এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন। কাঁচা ঘাসের ৪০ ভাগ শুকনো খড় দেওয়া যাবে। খড়, কাঁচা ঘাস ও দানাদার খাদ্য মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
ঘাস চাষ
ছাগল এর জন্য পারা ঘাস, জার্মান ঘাস, নেয়পিয়ার ঘাস ইত্যাদী চাষ করতে পারেন। এ ছাড়া ডাল জাতীয় কিছু লিগুম যেমন- ছোলা, মসুরি, খেসারি ইত্যাদি এদের জন্য অনেক জরুরী। তবে পরিমান মত না দিলে আবার পেট ফাঁপা বা বদ হজম হয়ে যেতে পারে। দুরবা ঘাস,আলফালফা হে ও ডাল বা লিগুম জাতীয় ঘাসে পুষ্টিগুণ অনেক বেশি থাকে।
দানাদার খাবার সরবরাহ
গমের ভুষি, সয়াবিন মিল, কলাই এর ভুষি, মুগ বা মসুর ডালের এর ভুষি, চাউলের কুঁড়া, ভুট্টা ভাঙ্গা ,ছোলার ভুষি, চালের খুদ ইত্যাদী ও পরিমান মতো লবন ও ভিটামিন মিনারেল মিলিয়ে খাদ্য তৈরী করতে হবে। বাজার এ এখন বেশ কিছু কোম্পানির ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়। দানাদার খাদ্য তৈরির সময় অবশ্যই খাদ্যের দাম ও গুণগত মান বিবেচনায় রাখতে হবে।
ছগিলের রোগ-বালাই ও ঔষধ
রোগ সমুহ
কৃমি এবং ঠান্ডা লাগা ছাগল সবচেয়ে বড় শত্রু। এছারাও ছাগলের বেশ কয়েকটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ রয়েছে। নিউমোনিয়া, অ্যানথ্রাক্স, রেজার ডিজিজ, পক্স, পিপিআর, টিটেনাস ও পেট ফুলে যাওয়া ইত্যাদী রোগ। এছাড়াও ভিটামিন ও মিনারেলের অভাবজনীত রোগ দেখা যায়। পিপিআর ও তড়কা সবচেয়ে মারাত্বক এবং ভাইরাস জনিত রোগ।
পি পি আর ভ্যাকসিন
পিপিআর ভ্যাকসিনটি সাধারণত দুই মাস বয়সের ছোট ছাগলকে দেওয়া হয়। তবে দুই মাস বয়সে একবার দেওয়া হলে ছয় মাস বয়সে আবার এই টিকা দিতে হয়। তিন মাস বয়সে দেওয়া হলে মাসের সময় আর এই ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। বছরে দুবার পিপিআর ভ্যাকসিন আপনাকে উদ্বেগমুক্ত রাখতে পারে। কাঁধের চামড়ার নিচে এক মিলি পিপিআর ভ্যাকসিন ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে।
কৃমির ঔষধ
বাজারে এখন অনেক ব্র্যান্ডের কৃমির ওষুধ পাওয়া যায়, প্রত্যেকে আলাদা আলাদাভাবে কাজ করে। যেহেতু আমি চিকিৎসক নই তাই সরাসরি কোন ব্র্যান্ডের নাম রাখা ঠিক হবে না। কৃমিনাশক ঔষধ শেবনের পূর্বে ওজন ও অবস্থা বোঝা উচিৎ। অভিজ্ঞ পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। আমাদের দেশে এখন অনেকগুলি নিরাপদ ওষুধ পাওয়া যায়, সেগুলি ব্যবহার করা যায়।
লালন পালন পদ্ধতি
সকালে ঘর থেকে বের করে শেডের আশেপাশে চরতে দিতে হবে। এতে ব্যায়াম হবে ও শরীরে সূর্য কিরণ লাগানোর পর্যাপ্ত সুযোগ হবে।
ঘর থেকে বের করার পর ঘর ভাল করে ধুয়ে বা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
ঘর থেকে বের করার সময় কোন ছাগল অসুস্থ আছে কিনা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কোন ছাগলের মধ্যে অসুস্ততার লক্ষণ দেখা দিলে তাকে সাথে সাথে সকলের থেকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সংখ্যায় বেশি হলে তাঁদের চিহ্নিত করার জন্য ট্যাগ নাম্বার লাগাতে হবে।
নিয়মিত সুষম দানাদার খাদ্য ও কাঁচা ঘাস সরবরাহ করতে হবে।
নিয়মিত ব্রাশ দিয়ে দেহ পরিষ্কার করে দিতে হবে। এতে দেহের ময়লা বের হয়ে যাবে ও রক্ত সঞ্চলন বৃদ্ধি পাবে।
খামারের সকল সদস্য কে একসাথে ও নিয়মিত কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে এবং নিয়মিত প্রতিশধক টিকা বা ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে।
ইউএমএস খাওয়ালে খাদ্য খরচ কম পরে।