পাঁচ বছর আগের কথা মনে পড়লেও গা হিম হয়ে যায় গৃহবধূ আকলিমা খাতুনের। অভাব ছিল তার নিত্যসঙ্গী। তিন ছেলে-মেয়ের ভরণ-পোষণ আর লেখাপড়ার খরচ বহন করতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হতো তার। মানুষের কাছে হাত পেতে সংসার চালাতে হতো। এখন আর কারোর কাছে হাত পাততে হয় না তার। ছাগল পালনে বদলে গেছে তার জীবন চিত্র। তিনটি ছাগল দিয়ে তার ফার্মের যাত্রা শুরু হলেও এখন তার খোয়াড়ে আছে ৩৩টি বিভিন্ন প্রজাতির ছাগল। শুধু আকলিমা নয়, তার মতো অনেক স্বামী পরিত্যক্তা বিধবা ও শিক্ষিত যুবক ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছে। বিশেষ করে ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল পালন করছেন তারা।
গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের হিসেব মতে, উপজেলায় ৬ হাজার ৫১৩টি ছাগলের খামার আছে। এছাড়া প্রায় প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে ছাগল। অনেকেই নিজের ব্যক্তিগত খরচ মেটানোর জন্য ছাগল পালন করে। খামারগুলোতে বেশ কয়েকটি জাতের ছাগল রয়েছে। তার মধ্যে ব্লাকে বেঙ্গল জাতের ছাগল বেশি। এছাড়া রয়েছে বারবারি, ব্রম্মা ও রাম ছাগল।
অল্প পুঁজি ও স্বল্প জায়গায় ছাগল পালন সম্ভব হওয়ায় ছাগল পালন বেশ লাভজনক বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তা ও খামারিরা।
গাংনী উপজেলার কামারখালী গ্রামের উদ্যমী যুবক আব্দুল কাদের জানান, তার খামারে আটটি ব্লাক বেঙ্গল ও ৬টি রাম ছাগল রয়েছে। ৪টি ছাগি রয়েছে আর রয়েছে একটি পাঁঠা। মাত্র দু’বছরে মোট দেড় লাখ টাকা খরচ করে ইতোমধ্যে ৪০ হাজার টাকার ছাগল বিক্রি করেছেন। বছরে প্রতিটি ছাগি দুটি করে বাচ্চা দেয়। আবার কোনোটি তিনটি বাচ্চাও দিয়ে থাকে। ছাগলের জন্য ভুট্টা ও ভুসি কিনতে হয়। তাছাড়া উম্মুক্ত চারণ ভূমি না থাকলেও রাস্তায় ছাগল চরাতে হয়। এতে খরচ অনেকটা কম হয়। অন্যদিকে
ছাগল কাঁচা ঘাস খেয়ে সবল ও সুস্থ থাকে। তাছাড়া পাঠার প্রজনন করিয়েও অনেক টাকা আয় হয়।
গাংনী বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব বাড়িতে ছাগল রয়েছে। কয়েকজন খামারি জানালেন, বিশ্বের ভেতরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছাগলের পাঁচটি জাতকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের জাত অন্যতম। এ জাতের ছাগলের মাংস সুস^াদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু কিছু খামারিরা মাংসের চাহিদা পূরণ ও অধিক মুনাফার আশায় অন্যান্য জাতের ছাগল পালন করছেন। বেশ কয়েকজন খামারি উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগে অভিযোগ ছুড়ে দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, রোগবালাই দেখা দিলে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কাছ থেকে তেমন কোনো পরামর্শ ও ওষুধ পান না। ভিজিট দিয়েও দেখা মেলে না কর্তা বাবুদের। ফলে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী ও হাতুড়ে ডাক্তারদের শরণাপন্ন হতে হয়। এতে করে অনেক সময় ছাগলের প্রাণহানি ঘটে।
কঞ্জনগর গ্রামের শান্তি খাতুন জানান, তার স্বামী পেশায় একজন গ্রাম্য চিকিৎসক। সংসারের কাজের পাশাপাশি তিনি ছাগল পালন করেন। বর্তমানে দুটি ছাগি আর চারটি খাসি রয়েছে। আসছে কোরবানির ঈদে খাসিগুলো হাটে তুলবেন। একেকটি খাসি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হবে বলে আশা করছেন। তিনি আরও জানান, ছাগল পালনে তার তেমন কোনো খরচ নেই । গাছের পাতা সেই সঙ্গে কিছু ভুসি খাওয়ানো হয়। একেকটি ছাগলের পিছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হলেও অন্তত ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা মুনাফা থাকে।
গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আলাউদ্দীন জানান, অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে ছাগল পালন। অনেক বেকার যুবক খামার করে ছাগল পালন করছেন। এতে বেকারত্ব দূর হচ্ছে। গাংনী উপজেলায় এক লাখ ৫ হাজার ছাগল রয়েছে। ছাগল পালনে খামারি ও গৃহস্থদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়। জনবল স্বল্পতার জন্য অনেক সময় সেবা দানে বিঘœ সৃষ্টি হয় তার পরও স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে চিকিৎসা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ওষুধ না পাওয়ার ব্যাপারে তিনি জানান, অনেক সময় ওষুধ সরবরাহ থাকে না তখন সমস্যা হয়। তবে এখন ওষুধ আছে কোনো সমস্যা নেই।