জনপ্রিয় ভেষজ উদ্ভিদ ঘৃতকুমারী

1132

ঘৃতকুমারী

ঘৃতকুমারী জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উদ্ভিদ। আদিনিবাস উত্তর আফ্রিকা। তবে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে জন্মাতে দেখা যায়। আমাদের দেশে রয়েছে এর ব্যাপক বিস্তৃতি। প্রায় সর্বত্রই কমবেশি জন্মে। চিরহরিৎ রসালো বীরুৎ ও বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ।

গাছ বেশ কতক বছর বাঁচে। এর গাছের আকার দেখতে অনেকটা আনারস গাছের মতো। পাতার রং সবুজ, বেশ পুরু ও নরম, দু’ধারের কিনারায় করাতের মতো কাঁটা থাকে এবং ভেতরে লালার মতো পিচ্ছিল শাঁস থাকে। গাছের গোড়া থেকে ঊর্ধ্বমুখী বেশ অনেকগুলো পাতা একের পর এক বের হয়। গাছের উচ্চতা গড়ে ৬০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে লম্বা ডাঁটায় এর ফুল ফোটে। ফুলের ডাঁটা লম্বায় প্রায় ৯০ সেন্টিমিটার। ফুল রঙে হলুদ, দেখতে নলাকার।

রৌদ্রোজ্জ্বল সুনিষ্কাশিত উঁচু থেকে মাঝারি উঁচু ভূমি ঘৃতকুমারীর জন্য উপযুক্ত। দো-আঁশ থেকে বেলে দো-আঁশ মাটি ও অল্প বালি মিশ্রিত মাটিতে ঘৃতকুমারী ভালো জন্মে। তবে বেলে দো-আঁশ মাটি উত্তম। পানি জমার সম্ভাবনা আছে এমন নিচু জমি ও যেখানে রোদ পড়ে না এমন জমি ঘৃতকুমারী চাষের জন্য অনুপোযোগী। প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে। সরাসরি মাটি ও টবে চাষ উপযোগী উদ্ভিদ ঘৃতকুমারী। জমিতে রোপণের বেলায় বেড পদ্ধতি অনুসরণ করেতে হবে। এর বংশ বিস্তারের জন্য রুট সাকার বা মোথা ও গাছের গোড়া থেকে গজানো নতুন চারা বা গাছের গোড়ার অংশ কেটে নিয়ে তা রোপণ করতে হবে। বছরের যে কোনো সময় ঘৃতকুমারী গাছ রোপণ করা যায়। তবে শীত ও বর্ষাকালে না লাগানোই উত্তম। সাধারণত অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে চারা লাগানোর উত্তম সময়। চারা রোপণের পর থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় প্রায় ৬ মাস পর গাছের পাতা ব্যবহার উপযোগী হয়। বছরের শীত মৌসুম বাদে অন্য সময়ের প্রায় ১০ মাস গাছ থেকে পাতা সংগ্রহের উত্তম সময়। শীতকালে পাতা সংগ্রহ বন্ধ রাখতে হবে।

জানা যায়, প্রায় দুই হাজার বছর পূর্ব থেকে ঘৃতকুমারী ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। তাইতো আমাদের দেশে শুরু হয়েছে এর বাণিজ্যিক চাষাবাদ। তা ছাড়া ভেষজ বাগান, বাসাবাড়ির বাগান ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাগানে ঘৃতকুমারীর উপস্থিতি লক্ষণীয়। এর পাতা আড়াআড়িভাবে কাটলে ভেতর থেকে জেলির মতো থকথকে সাদা স্বচ্ছ পদার্থ বের হয় এবং তা কিছুক্ষণ রেখে দিলে জমে যায়।

ঘৃতকুমারীর পাতা থেকে পাওয়া এ পদার্থটিই ভেষজ গুণসম্পন্ন। ঘৃতকুমারীর ব্যবহার ও ভেষজ গুণাগুণের মধ্যে রয়েছে- প্রসাধন ও ভেষজ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার এবং শরীরের নানা রোগ ব্যাধি দূর করতে এ গাছ ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। এটি জন্ডিস রোগের মহৌষধ, সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়, শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য শরবতে ব্যবহার, ময়েশ্চারাইজিং লোশন তৈরিতে ব্যবহার, যকৃতের ক্রিয়া বৃদ্ধি করে, পুড়ে যাওয়া স্থানে লাগালে আরাম পাওয়া যায় ও ফোসকা পড়ে না।

তাছাড়া এর জেলি মাথায় লাগালে মাথা ঠান্ডা রাখে ও মাথা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। শরীরের শক্তি বৃদ্ধি ও ওজন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। চামড়ার মেছতা দূর করতে সহায়ক, একজিমা ও চুলকানি দূর করতে কাজ করে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/জাকির