দেশীয় মৌসুমী বিভিন্ন ফল অন্যান্য ফলের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি নিরাপদ হওয়ায় এর চাহিদা বরাবরই বেশি থাকে। তাই কৃষকরা মৌসুমী বিভিন্ন জাতের ফল চাষে ঝুঁকছেন। এতে দেশে মৌসুমী ফলের চাষ দিন দিন বাড়ছে। শেরপুরের নকলা উপজেলার মাটি যেকোন মৌসুমী ফল চাষের জন্য উপযোগী। তাই এখানকার কৃষকরা মৌসুমী ফল চাষে ঝুঁকছেন এবং সফল হচ্ছেন। এর ধারাবাহকিতায় নকলায় এবার জলপাইয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে।
এখানকার জলপাই বেশ বড়, সুন্দর ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাসহ রাজধানী ঢাকাতেও এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। জলপাই চাষ ও ব্যবসাতে লাভ বেশি হওয়ায় অনেকে এই ফলের চাষ ও ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছেন। দিন দিন এই ফলের চাষ ও ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে নকলার জলপাই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবার করা হচ্ছে।
মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী নকলা পৌরসভাধীন বাজারদী এলাকার গোপাল চন্দ্র দাশ, ইশিবপুরের সুহেল মিয়া, তাড়াকান্দির সুলতান মিয়া, কুর্শাবাদাগৈড় এলাকার লিটন মিয়া, জালালপুর এলাকার শ্রী রতন চন্দ্র তিলক দাস, আব্দুল মিয়া, কব্দুল আলী, তারা মিয়া ও মস্তু মিয়া; চরকৈয়া এলাকার বাবুল মিয়া, আব্দুল আলী ও শহিদুল; কায়দা গ্রামের আবুল মিয়া, সাহাপাড়া এলাকার রুপচাঁন, ধনাকুশা এলাকার আসাদুলসহ
মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী সুলতান মিয়া জানায়, তাদের মূলধন কম থাকায়, তারা ৩ জনে মিলে যৌথভাবে ব্যবসা করেন। এবছর তারা প্রত্যেকে ১০ হাজার টাকা করে মোট ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন। এরমধ্যে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে অন্তত ২৮ টি গাছের জলপাই চুক্তিতে কিনেছেন। এইসব গাছের জলপাই গাছ থেকে পেড়ে ঢাকা সহ বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছাতে আরও ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হবে বলে তিনি জানান। তবে মৌসুম শেষে এই ৩০ হাজার টাকার জলপাইয়ের একমাসের ব্যবসাতে তাদের ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে তিনি আশা করছেন।
বাজারদী এলাকার অন্য এক ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র দাশ জানান, মৌসুমী ফলের ব্যবসাতে সময় কম ব্যয় হয়। মৌসুমের শুরুতে এলাকা ঘুরে গাছসহ ফল কিনে রাখেন, পরে ফল পরিপক্ক হলে দিন তারিখ ঠিক করে নিজেসহ প্রয়োজনীয় শ্রমিক দিয়ে গাছের ফল পেড়ে বাজারে বিক্রি করেন এবং রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা শহরে পাইকারি বিক্রি করেন। কুর্শাবাদাগৈড় এলাকার ব্যবসায়ী লিটন মিয়া জানায়, মৌসুমী ফলের ব্যবসার আয় দিয়েই তারা জীবন জীবীকা নির্বাহ করেন। তিনি বলেন- আমি একযুগ ধরে এই ব্যবসা করে সংসার ও সন্তানের শিক্ষা খরচ চালিয়ে আসছি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাশ জানান, নকলার মাটি জলপাইসহ যেকোন মৌসুমী ফল চাষের জন্য উপযোগী। উপজেলায় অগণিত ফলদায়ী জলপাই গাছ আছে। এসব গাছের জলপাই বেশ বড়, সুন্দর ও সুস্বাদু; তাই দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখানে উৎপাদিত জলপাইয়ের বেশ চাহিদা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, যে কেউ জলপাই চাষ করে আত্ম কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারেন। ফল চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কৃষকদের কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ সেবা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলেও কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাশ জানান।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/৬জানু২০২০