পৃথিবীর বয়স আসলে কত? বিজ্ঞানীদের মতে, ৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী গঠিত হয়েছিল। পৃথিবী হলো মানুষসহ কোটি কোটি প্রজাতির আবাসস্থল। পৃথিবীই একমাত্র মহাজাগতিক স্থান যেখানে প্রাণের অস্তিত্বের কথা বিদিত। তবে বর্তমানে জনসংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধি, বনভূমি হ্রাস, দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিবিধ কারণে চির চেনা বসবাসযোগ্য পৃথিবী নামক এই গ্রহটি তার প্রাণ ধারণের ক্ষমতা ক্রমেই হারাতে বসেছে। ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক আবহাওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।
ক্রমেই উষ্ণতা বাড়ছে, বিগত ২০১৬ সাল ছিল ইতিহাসের উষ্ণতম বছর। ২০১৭তেও একই চিত্র দেখেছি। কিন্তু ২০১৮তে এসেই হাড়কাঁপানো শীতের কবলে পড়েছে বাংলাদেশ। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। সারা ঋতু জুড়েই গ্রীষ্মের প্রভাব ছিল। শীতকালে শীত এসেছে, তবে দেরিতে। এই বছর শীতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রেকর্ডভাঙা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই ঋতুর এই হেরফের হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। প্রবল শৈত্যপ্রবাহে জনজীবনে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে— এই আশঙ্কা জলবায়ু বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান ওয়াচ এর ২০১০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতির বিচারে শীর্ষ ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে প্রথমেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ।
বৈশ্বিক আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তনের প্রভাব সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ইতিমধ্যে লক্ষণীয় হয়ে ওঠেছে। বিশ্বজুড়ে কোথাও হচ্ছে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়, আবার কোথাও গলছে বরফ। শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর অনিয়ন্ত্রিত কার্যক্রমের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা আরও বেড়েছে। আর এর কুফল ভোগ করতে হচ্ছে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে। তবুও প্রকৃতির উপর মানুষের হাত নেই বলে দেশে দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখযোগ্য। সামপ্রতিক বাংলাদেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২.৬ ডিগ্রি রেকর্ড হয়েছে তেঁতুলিয়াতে।
প্রচণ্ড শীতে মৃত্যুর সংবাদও পেয়েছি। এর আগে ২০১৫ সালে শীতকালে তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। ঘন ঘন বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশকে। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে এই প্রভাব পড়েছে এবং ক্রমেই তা দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। ঘন ঘন ভূমিকম্প, ঝড়, বজ্রপাত, বন্যার মতো দুর্যোগ সংঘটিত হচ্ছে। উন্নত দেশের বিলাসী জীবনযাপন এবং অতিমাত্রায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন বৈশ্বিক জলবায়ুতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশ্বনন্দিত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস ইতিমধ্যে বলেই ফেলেছেন, ৫০০ বছর এই পৃথিবী টিকে থাকবে কি-না সন্দেহ আছে।
জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রধান কারণ হয়ত আমরা নিজেরাই। ক্রমাগতভাবে বিশ্ব জনসংখ্যা বাড়ছে। সাথে আবাসন ও মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণে হিমশিম খেতে হচ্ছে ভৌগোলিক, সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে। বন উজাড় করে, নদ-নদী, খাল-বিল ভরাট করে তৈরি করা হচ্ছে দালানকোঠা। অধিক জনসংখ্যার চাপে বাংলাদেশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, কমে যাচ্ছে সুপেয় পানির পরিমাণ। বর্তমানে দেশে নদ-নদীর সংখ্যা কমে গিয়েছে। সামপ্রতিক এক জরিপে জানা গেছে, দেশের প্রায় ১০০ নদ-নদী অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে।
আর দেশে এমন অনেক নদী আছে যেগুলোকে আর নদী বলা যাবে না! তার মধ্যে বুড়িগঙ্গা একটি। জলবায়ু পরিবর্তন হোক অথবা মানবসৃষ্ট কারণে হোক সারা বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও বিরাট হুমকির মুখে পড়েছে। প্রাকৃতিক নিয়মের ওপর মানুষের হাত নেই। তবুও জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল সম্পর্কে গণসচেতনতা ও পূর্ব প্রস্তুতি ক্ষয়ক্ষতি কমাবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ