বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে জলাবদ্ধতাকে জয় করেছেন যশোরের মণিরামপুরের ভবদহ এলাকার কৃষক আলী আকবর। এলাকার আবু সাঈকে সঙ্গে নিয়ে ৩৫ শতক পতিত জমিতে এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে তিনি এলাকায় নজির স্থাপন করেছেন। জলাবদ্ধ এলাকার মানুষের কাছে তারা এখন প্রেরণার উৎস।
বস্তা পদ্ধতির চাষের শুরুতে ৩০ কেজি মাটির সঙ্গে পরিমাণ মতো জৈবসার, খৈল ও রাসায়নিক সারের মিশ্রণ বস্তায় ভরে প্রায় তিন ফুট উঁচু করা হয়। কয়েক দিন পর তাতে লাউ, উচ্ছে, করলা, ঝিঙে, পুঁইশাক, মরিচ, আদা, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, রসুন, পিঁয়াজ ও পেঁপেসহ বিভিন্ন প্রকার সবজির বীজ বপন অথবা চারা রোপণ করা হয়। আর এই পদ্ধতিকে বলা হয় বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মণিরামপুরে ভবদহপাড়ের চাষিদের স্বাবলম্বী করতে ‘সুশীলন’ নামে একটি এনজিওর মনোহরপুর ইউনিয়নের পরিমল বিশ্বাস, আলতাফ হোসেন, ভবতোষ মণ্ডল, দেবপ্রসাদ, আনন্দ সরকার, আবদুর রহিম, আলী আকবর ও আবু সাঈদ- এই দশ চাষিকে বস্তা পদ্ধতিতে চাষাবাদের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
এদের মধ্যে আলী আকবর ও আবু সাঈদ দুইজনে ৩৫ শতক পতিত জমি লিজ নিয়ে প্রায় ছয় মাস আগে শুরু করেন এই পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি চাষ। সরেজমিনে মনোহরপুরের খাকুন্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক আলী আকবর ও আবু সাঈদ প্রায় ৩৫ শতক পতিত জমি লিজ নিয়ে এই পদ্ধতিতে দেড়শ’ বস্তা বসিয়ে বিভিন্ন প্রকার সবজি লাগিয়েছেন।
বস্তায় লাগানো লাউ গাছে বড় বড় লাউ ঝুলছে। শুধু লাউ নয় পাশাপাশি তারা উচ্ছে, করোলা ও ঝিঙের চাষ করেছেন। চাষি আলী আকবর জানান, শুধু লাউ, উচ্ছে, করালা ও ঝিঙে নয়, মাটি ও গবর সার মিশিয়ে তৈরি করা বস্তায় পুঁইশাক, মরিচ, আদা, বরবটি, মিষ্টিকুমড়া, রসুন, পিঁয়াজ ও পেঁপের চাষও করা যাবে।
তিনি আরো বলেন, ‘শখের বসে আমি এই নতুন পদ্ধতির চাষ করছি না। ভবদহপাড়ের জলাবদ্ধতায় টিকে থাকার তাগিদে এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছি।’ তিনি জানান, এই ক্ষেত থেকে তিন মাসে ৭০ হাজার টাকার বেশি আয় করেছেন।
এনজিও সুশীলনের জেলা সুপারভাইজার তাপসকুমার দাস জানান, এটি একটি নতুন প্রযুক্তি। মণিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের দশ চাষিকে পাইলট প্রকল্পের আওতায় ঢাকায় নিয়ে তিন দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে এই পদ্ধতিতে চাষ শেখানো হয়েছে। ওই দশ চাষির সবাই কম-বেশি সবজি চাষ করছেন।
তিনি জানান, এই পদ্ধতির মূল লক্ষ্য জলাবদ্ধতাকে জয় করা। জলাবদ্ধ এলাকায় মানুষ যেহেতু অনেকটা অস্বাভাবিক জীবনযাপন করে, তাই তাদের টিকিয়ে রাখাই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয়কুমার বলেন, ‘চাষিদের বস্তা পদ্ধতির এই চাষকাজ আমরাও তদারকি করছি। জলাবদ্ধতাকে হার মানিয়ে একটি পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে এই চাষ পদ্ধতি মানুষের মধ্যে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। ফলে আমরাও জলাবদ্ধ এলাকার চাষিদের এই পদ্ধতিতে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করছি।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৮জুন২০