দইগোটা / লটকনগোটা / লিপস্টিক ফল / রঙগোটা /
জাফরান ফল / সিন্দুরি ফল
ইংরেজি নাম: Lipstick tree, Annatto, Arnatto, Achiote
বৈজ্ঞানিক নাম: Bixa orellana
পরিবার: Bixaceae
আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরণের প্রসাধন সামগ্রীর ওপর লেখা থাকে “ন্যাচারাল প্রোডাক্ট” বা “অল ন্যাচারাল” কিন্তু আসলেই কি তা প্রাকৃতিক বা অর্গ্যানিক। বাস্তবে তার বেশিরভাগই কেমিক্যাল বা রাসায়নিক মুক্ত নয়। দই গোটা বা লটকার বীজের ত্বক থেকে যে রঙ তৈরি হয় তা অর্গ্যানিক। এটা তৈলজাত বা জলজাতও হতে পারে যা বিভিন্ন ধরনের কাজে লাগে।
আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশের আদি বাসিন্দারা এটা দিয়ে শুধু ঠোঁট নয় শরীরও রঙ করে। আর প্রাকৃতিক পরিবেশে এই রঙের কারণে তাদের শরীরে মশা-মাছিও বসে না অথচ এর কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।অনেক দেশে এর রঞ্জক শরীর, বিশেষ করে ঠোট রং করার কাজে ব্যবহার করা হয়, তাই এর ডাকনাম হচ্ছে- লিপস্টিক গাছ।
বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এর রঞ্জক মিস্টি দইয়ের রং করতে ব্যবহৃত হয়। এজন্যে আঞ্চলিকভাবে এই গাছকে দই-গোটা গাছ বলা হয়। কলম্বিয়ার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে লোকজন এটাকে ঔষধি কাজে এবং সাধারণ সংক্রমণে ব্যবহার করে থাকে। বিশেষ করে মাইক্রোবিয়াল দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণের চিকিৎসায় কলম্বিয়াতে এটা ব্যবহৃত হয়।
দই গোটা গাছের একটা সুপক্ক ফলের মধ্যে প্রায় ৪০/৫০ টি বীজ থাকে। এর থেকে একটা বীজ বৃদ্ধাঙ্গুলী ও তর্জনীর আগা দ্বারা ধরে এক ফোটা পানি দিয়ে ভিজিয়ে ঠোঁটে ঘসলেই ঠোঁট খুব সুন্দর লাল রঙে রঙিন হয়ে উঠে। দই গোটা বা লটকা দিয়ে ঠোঁট রং করলে তা দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হয়, দিনে দুবারের বেশি না লাগালেও চলে। এর ভেতরে থাকে মোম জাতীয় পদার্থ যে কারণে রং ছড়িয়ে যায় না। রংটা হয় গ্লসি এবং ম্যাট-এর মাঝামাঝি।
লিপস্টিক ছাড়াও নেইল-গ্লস, সু-পলিশ, ফ্লোর-পলিশ-এ এই প্রাকৃতিক রঙের কিছু ব্যবহার আছে। এক সময় এর কাঠকে ‘অরণি’ বা আগুন জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করতো নেটিভরা। বেত, কাঠ বা বাঁশের তৈরি ফার্নিচার রঙ করার জন্যে রংটি খুব উপযোগী। চুলের তেল এবং সাবান তৈরিতেও একে ব্যবহার করা যায়। ঔষধ হিসাবে আমাশয়, রক্তপাত, গনোরিয়া, জ্বর, সাইনাস, এজমা, আগুনে পোড়া ইত্যাদিতে এর ব্যবহার আছে।
খাবারের স্বাদ-গন্ধ বাড়ানোর জন্য আমরা যেমন ধরনের মশলা ব্যবহার করি তেমনি খাদ্যবস্তু রং ও মৃদু সুগন্ধি করার কাজে এর ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। পনীর ও গরুর দুধ রং করা হয় এই লটকা বীজ থেকে প্রাপ্য বিক্সিন দিয়ে যার গন্ধটা হয় ভিন্ন। এ ছাড়া বাটার, কাস্টার্ড, কেক, সিরিয়াল, সসেজ, ড্রিঙ্কেও এই রং ব্যবহার হয়। ফুড-কালার হিসাবে পৃথিবীতে বহুল ব্যবহৃত ক্যারামেল-এর পরেই বিক্সিনের অবস্থান।
তথ্য সংগ্রহ : জনাব যাযেদ ফরিদ এর লেখা প্রবন্ধ থেকে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৭এপ্রিল২০