জাম্বুরা খেতে কার না ভাল লাগে। তবে পাহাড়ের উৎপাদিত জাম্বুরাই মানসম্মত ও সুস্বাদু। তাই দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ছে এই জাম্বুরার কদর। ভিটামিন-সি সম্বৃদ্ধ জাম্বুরা পাহাড়ের চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরে জায়গা করে নিয়েছে। চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় খাগড়াছড়িতে জাম্বুরার বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে কৃষকের মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি।
জেলার মাটিরাঙ্গা, গুইমারা, দীঘিনালা ও মানিকছড়িতে জাম্বুরার উৎপাদন বেড়েছে। চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে জাম্বুরা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বাণিজ্যিক চাষে আর্থিক স্বচ্ছলতা আসবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাইকারী ব্যবসায়ীরা খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলার স্থানীয় বাজার থেকে জাম্বুরা সংগ্রহ করছেন। এছাড়া অনেকেই অগ্রিম টাকা দিয়ে বাগানিদের কাছ থেকে জাম্বুরা কিনে নেন।
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা ও গুইমারা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি বস্তাভর্তি জাম্বুরা বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। জাম্বুরাকে ঘিরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর কষাকষি চলছে। আগে যেখানে স্থানীয় বাজারে প্রতিটি জাম্বুরা ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হতো; সেখানে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫-৭ টাকায়। তবে বড় সাইজের জাম্বুরা ৮-১০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।
মো. শামছুদ্দিন আহমেদ জানান, অন্যান্য বছর উৎপাদন কম হলেও দাম ভালো ছিল। গত বছর প্রতিটি জাম্বুরা আকারভেদে ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হতো। চলতি বছর জাম্বুরার উৎপাদন বেশি, দাম অনেকটা কম। জাম্বুরার দাম ৫-৭ টাকায় নেমে এসেছে। ফলে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জাম্বুরা ব্যবসায়ী বিকাশ ত্রিপুরা ও মো. নুরুল আলম জানান, বাজারের পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রামে গিয়েও গাছ থেকে জাম্বুরা সংগ্রহ করেন। যা বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। গত বছর গ্রাম থেকে জাম্বুরা ১০-১২ টাকায় সংগ্রহ করা হতো। এ বছর একই আকারের জাম্বুরা বাজারে ৭-৮ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
নোয়াখালী থেকে আসা পাইকারী ব্যবসায়ী আলী আহাম্মদ বলেন, পাহাড়ের জাম্বুরায় ক্ষতিকর কেমিক্যাল না থাকায় নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় এর কদর বেশি। তবে স্থানীয় বাজারে জাম্বুরার দাম কম হলেও পরিবহন খরচ বেশি। মাটিরাঙ্গা বাজারের টোল আদায়কারী মো. আলী আশরাফ জানান, মাটিরাঙ্গা বাজার থেকে প্রতি সপ্তাহে ৫-৭ ট্রাক জাম্বুরা সমতলের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চারা রোপণের পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে জাম্বুরার ফলন পাওয়া যায়। প্রতিটি গাছের গড় আয়ু ৩০-৫০ বছর। ফলন পাওয়া যায় দীর্ঘদিন। পাহাড়ি অঞ্চলের টিলাগুলোতে এর ফলন ভালো হয়।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা হর্টিকালচার সেন্টারের তত্ত্বাবধায়ক কান্তি ত্রিপুরা জানান, ফলন ভালো হলে একটি গাছে ৪০০-৫০০টি পর্যন্ত ফল হয়। ফাল্গুন মাসে গাছে মুকুল আসে। ভাদ্র থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত ফলন তোলা হয়।
জাম্বুরার উপকারিতা সম্পর্কে ডা. পরাগ দে বলেন, ‘জাম্বুরা ঠান্ডা, সর্দি-জ্বর, ডায়াবেটিস, মুখের ঘা ও পাকস্থলীসহ বিভিন্ন রোগের জন্য উপকারী। এ ফল রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর এবং পেটের নানা রকম হজমজনিত সমস্যার জন্যও উপকারী। জাম্বুরা ক্যান্সার প্রতিরোধেও বেশ কার্যকর।’
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ