জিপসাম ব্যবহারে বাগান নষ্ট, সার প্রয়োগে সবধান

2639

জিপসাম

ফসলের উৎপাদন ভালো হবে তাই মানুষ জমিতে সার প্রয়োগ করে। তবে এর রাসায়নিক উপাদানগুলো রয়ে যায় ফসলে বা ফলে। যার কারণে খাদ্য গ্রহনের মাধ্যমে তা মানবদেহে ছডিয়ে পড়ে।এতে মানবদেহের বিভিন্নরকম ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।

টাঙ্গাইলের মধুপুরে আদিবাসী গারো কৃষক জয় নকরেকের জমিতে জিপসাম সার প্রয়োগের ফলে কলা ও আনারস বাগান নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। জিপসাম সার প্রয়োগের কয়েক দিনের মধ্যে বাগানের গাছ নিস্তেজ হয়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে। গাছের শেকড় ও ফলে পচন ধরেছে। এতে ওই কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের বাড়ি উপজেলার অরণখোলা ইউনিয়নের আমলিতলা গ্রামে।

কৃষক হরেন্দ্র নকরেকের পুত্র জয় নকরেক মধুপুর বনাঞ্চলের ধলিবাইদ এলাকায় আট বিঘা জমির (প্রতি বিঘা সাত হাজার টাকায় লিজ নেওয়া) সাত বিঘায় কলা এবং এক বিঘায় আনারস চাষ করেন। কলাগাছ পরিপকস্ফ হয়ে গাছে থোর ও কলা ধরতে শুরু করেছে। কলা আরও পরিপুষ্ট হওয়ার জন্য জয় নকরেক বাজার থেকে দুই বস্তা ইউরিয়া, দুই বস্তা টিএসপি, দুই বস্তা পটাশ ক্রয় করেন। এর সঙ্গে স্থানীয় ঘুঘুর বাজারের আ. হামিদের মেসার্স সিরাজ স্টোর থেকে পাঁচ বস্তা রহিমআফরোজ অ্যাগ্রো লিমিটেড কোম্পানির তারা জিপসাম লেখাযুক্ত জিপসাম সার ক্রয় করেন।

পরে তিনি বাগানে নিয়ে গিয়ে দেখেন মুখ খোলা সেলাইবিহীন বস্তার মধ্যে অন্য একটি নামসিলহীন সাদা বস্তার মধ্যে জিপসাম সার ভরা। সব সারের সঙ্গে এ সার মিশিয়ে প্রয়োগ করার কয়েকদিন পর থেকে কলা ও আনারস বাগানের গাছ ধীরে ধীরে সতেজতা হারিয়ে বিবর্ণ হতে থাকে। আস্তে-আস্তে কলাগাছের শেকড় পচে পাতা মরে যাচ্ছে। কলা বেঁকে যাচ্ছে। কলার ছড়িতে অনেক কলা পচে গেছে। আনারস বাগানে গাছের মেইজ নষ্ট হয়ে পচন ধরতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় জয় নকরেক হতাশ হয়ে পড়েন। ধারদেনা করে এ পর্যন্ত তার দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে তিনি জানান। জয় নকরেরের ধারণা, মুখ খোলা বস্তার জিপসাম সারের কারণে এমনটা হতে পারে।

আমলিতলা গ্রামের সুবিমল মাঝি বলেন, গত বছর জয় নকরেক আট বিঘা জমি আমার কাছ থেকে কলা ও আনারস আবাদের জন্য লিজ নিয়েছে। সম্প্রতি ঘুঘুর বাজারের আ. হামিদের দোকান থেকে পাঁচ বস্তা জিপসাম সারের মধ্যে একটি বস্তা মুখ খোলা অবস্থায় কিনে এনে অন্যান্য সারের সঙ্গে মিশিয়ে বাগানে প্রয়োগের ফলে বাগান নষ্ট হয়ে গেছে। আমি বাগানে গিয়ে দেখেছি থোরগুলো চিকন হয়ে এঁকেবেঁকে বের হচ্ছে। এ বাগানে তার অনেক ক্ষতি হয়েছে।

একই গ্রামের চিত্তরঞ্জন মাঝি ও আ. খালেক বলেন, আমরা বাগানে গিয়েছিলাম। বাগানের সিংহভাগ গাছ, কলা, থোর নষ্ট হয়ে গেছে। আনারসের গোড়ায় পচন ধরেছে। ওই গাছে আর আনারস ধরার সম্ভাবনা নেই। তাদের ধারণা, খোলা বস্তার সারের কারণে এ অবস্থা হতে পারে।

কৃষক জয় নকরেক বলেন, সার কেনার সময় অন্যান্য সারের সঙ্গে রহিমআফরোজ কোম্পানির পাঁচ বস্তা তারা জিপসামের মধ্যে একটি বস্তার মুখের সেলাই খোলা ছিল। এ খোলা বস্তা নিতে না চাইলে দোকানদার আ. হামিদ বলেছিলেন, এতে কোনো সমস্যা হবে না। এ কথা শুনে সার বাগানে নিয়ে প্রয়োগ করার কয়েক দিনের মধ্যে বাগানের কলা ও আনারসের গাছ নষ্ট হতে শুরু করে। দিন দিন বাগানের অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে।

সার ব্যবসায়ী মেসার্স সিরাজ স্টোরের স্বত্বাধিকারী আ. হামিদ জানান, দশ বস্তা জিপসাম সার রক্তিপাড়ার ডিলার আলমগীরের কাছ থেকে তিনি এনেছেন। এর মধ্যে দুটি বস্তা সেলাই খোলা অবস্থায় ছিল, সেই দুটি বস্তা জয় নকরেক ও ভূটিয়ার কৃষক আলম নিয়ে বাগানে দিয়েছেন। খোলা বস্তার সারের কারণে এমনটি হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। তিনি তার ডিলারকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহামুদুল হাসান বলেন, অভিযোগ পেয়ে আমার অফিসের একজন প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলাম, তিনি বাগান দেখে এসেছেন। আমি অথবা আমার প্রতিনিধি আবারও সরেজমিন যাব। তিনি জানান, কয়েক ধরনের সার একত্রে মিশিয়ে বাগানে প্রয়োগ করেছেন। কোন কারণে বাগান নষ্ট হয়েছে, তা সঠিকভাবে জানতে কয়েকদিন লাগবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ