কবুতর পালন বেশ লাভজনক। শান্তির প্রতীকও বিবেচনা করা হয়। আজকের আয়োজন পাখিটির বিভিন্ন দিক নিয়ে
কবুতর গৃহপালিত পাখি। একে শান্তির প্রতীক হিসেবেও ধরা হয়। প্রায় সব মানুষই কবুতর ভালোবাসে। তাই বাড়িতে পালন করে অনেকে বিভিন্ন চাহিদা মিটিয়ে থাকেন। কেউ শখের বশে, কেউবা মাংসের চাহিদা পূরণে কবুতর লালন-পালন করেন। এর মাংস বেশ সুস্বাদু। তাই এর প্রতি আগ্রহও রয়েছে অনেকের। এসব চাহিদার কারণে বাড়ছে কবুতর পালন। এজন্য কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়। তবেই সফলতা আসে।
কবুতর মূলত তিন পদ্ধতিতে পালন করা যায়:
মুক্ত পদ্ধতি
কবুতরের ঘর আবাসস্থলের ২০০ থেকে ৩০০ ফুট দূরে দক্ষিণমুখী হতে হবে। মাটি থেকে এদের ঘরের উচ্চতা আট থেকে ১০ ফুট হবে। খোপ সাধারণত দুই থেকে তিনতলা বিশিষ্ট করা হয়। এমন খোপের আয়তন প্রতিজোড়া ছোট আকারের কবুতরের জন্য ৩০ সেন্টিমিটার ও বড় আকারের কবুতরের জন্য ৫০ সেন্টিমিটার হলে ভালো। ফলে কবুতর ইচ্ছেমতো চলাচলের সুযোগ পায়।
খাঁচা পদ্ধতি
অনেক শৌখিন ব্যক্তি খাঁচায় বিভিন্ন ধরনের নজরকাড়া কবুতর পুষে থাকেন। তাদের পালন করা কবুতর যে কত সুন্দর হতে পারে, তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এসব খাঁচার আকার কেমন হবে তা নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের কবুতর পালতে চাচ্ছেন, তার ওপর। শুধু গিরিবাজ পালতে চাইলে ছোট বা মাঝারি আকারের খাঁচা হলেই চলে। সৌখিন কবুতর পালতে চান? তাহলে সাধারণের থেকে একটু বড় হতে হবে খাঁচা।
ঘরের ভেতরে উম্মুক্ত পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে আনেক কবুতর একসঙ্গে পালন করা যায়। একটি খামারের জন্য ৩০ থেকে ৪০ জোড়া কবুতর আদর্শ। এমন ঘরের মাপ হবে ৯ী৮ দশমিক পাঁচ ফুট। অল্প খরচে সহজে ঘর তৈরি ও স্থানান্তর করার জন্য কাঠ, টিন, বাঁশ, খড় প্রভৃতি উপকরণ কাজে লাগান। ঘরের মধ্যে কবুতরের ডিম দেওয়ার জায়গা তৈরি করে দিতে হয়। অনেক সময় নরম ও শুকনো খড়কুটো রেখে দিলে তারা ঠোঁটে করে নিয়েই নিজেরাই বাসা তৈরি করে নেয়।
সাধারণ বাসস্থান
উচ্চ বাসস্থান কবুতর পালনের জন্য খুব দরকার। কেননা, উঁচু স্থানে কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর ও অন্যান্য ক্ষতিকারক শিকারি থেকে বাঁচানো যায়। তাছাড়া এতে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থাও পাওয়া যায়। সতর্ক থাকতে হবে বৃষ্টির পানি যাতে সেখানে না পৌঁছায়। তাই প্রতিরোধের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কবুতরের ঘর তৈরির জন্য পাতলা কাঠ বা টিন অথবা বাঁশ প্রয়োজন। প্রতিটি কবুতরের জন্য ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা, উঁচু ও প্রশস্ত জায়গার প্রয়োজন। প্রতিটি ঘর এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে সেখানে তিনটি কবুতর থাকতে পারে। ঘরে ১০ী১০ সেন্টিমিটার পরিমাপের দরজা থাকতে হবে। সব সময় ঘর পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখতে হবে। কাছাকাছি শুকনো খড় রাখুন। তারা নিজেরাই খড় দিয়ে নিজেদের মতো করে বিছানা করে নেবে। বাইরে পাতলা কাঠ পেতে রাখতে হবে, যাতে সেখানে খাবার ও পানি রাখা যায়। এখান থেকে এরা পান করবে ও পানির পাত্র থেকে গোসল করতে পারবে। সব সময় পরিষ্কার পানি পরিবেশনের চেষ্টা করতে হবে।
খাবার
কবুতর সাধারণত গম, ভুট্টা, ধান, চাল, সরষে প্রভৃতি খেয়ে থাকে। এসব খাবার ঘরের সামনে রেখে দিলে নিজেই খেয়ে নেবে। তাদের ভালো স্বাস্থ্যের জন্য সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। শখ করে পালন করা কবুতরকে এর বাইরে অন্যান্য খাবার দিতে হবে। উপরোক্ত খাবার ছাড়াও চীনাবাদাম, সূর্যমূখীর বীজ, কুসুম ফুলের বীজ সবুজ মটর প্রভৃতি বাড়তি খাবার দিতে হয়। শিশু কবুতরের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত স্নেহজাতীয় পদার্থের সঙ্গে শামুকের খোলস, চুনাপাথর, হাড়ের গুঁড়ো, লবণ, শুষ্ক মিশ্রণ প্রভৃতি খেতে দিতে হবে। সবুজ সবজি ছোট করে কেটে সামনে দিতে হবে। দিনে কমপক্ষে দুবার খাবার দিতে হবে। খাবার পাত্র ভরে না দিয়ে যতটুকু খাবে, ততটুকুই দেওয়া উচিত। বেশি দিলে খাবার নষ্ট করবে। গরমের সময় কবুতর বেশি পানি পান করে। তাই দিনে তিন থেকে চারবার পানি দিতে হবে। কবুতর উড়তে চাইলে অবশ্যই উড়তে দিতে হবে। তাহলে ছোট পোকামাকড় ধরে খাওয়ার সুযোগ পাবে। কবুতরকে সপ্তাহে একদিন এক বেলা উপবাসে রাখা উচিত। এতে এদের সঞ্চিত খাদ্য হজম হয়।
যত্ন
কবুতরের বাসা বা খোঁপের সামনে কোনো পাত্রে পানি রেখে দিলে তারা নিজেরাই গোসল সেরে ফেলে। কিন্তু মাসে দুদিন আপনার গোসল করিয়ে দিতে হবে। এতে অনাকাক্সিক্ষত রোগবালাই থেকে নিরাপদে থাকবে। মাঝেমধ্যে নিমপাতা সেদ্ধ করা পানি দিয়ে গোসল করালে কোনো পোকা বা উকুন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। পানিতে শ্যাম্পু মিশিয়েও গোসল করাতে পারেন। আঘাতপ্রাপ্ত কবুতরকে কুসুম পানি দিয়ে গোসল করালে আরাম পাবে। রোদে গোসল করানোই উত্তম।