আমাদের দেশে আনারস সাধারণত তাজা পাকা ফল হিসেবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু পৃথিবীতে উৎপাদিত আনারসের বেশিরভাগই প্রক্রিয়াজাত করা হয়ে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে আনারসের ফল অ্যালকোহল ও সাইট্রিক এসিড তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। আনারস-এর রসে ব্রোমিলিন নামক এক প্রকার জারক রস থাকে বলে আনারস পরিপাক কাজে সহায়ক।
জাত: পৃথিবীতে আনারসের অনেক জাত থাকলেও বাংলাদেশে হানি কুইন, জায়েন্ট কিউ ও ঘোড়াশাল এই তিন জাতের আনারস চাষ হয়ে থাকে।
চাষ পদ্ধতি : পাহাড়ের ঢালে আনারস চাষ করার জন্য এমন জমি নির্বাচন করতে হবে, যেখানে পাহাড়ের ঢাল খুব বেশি খাড়া নয়, এছাড়া বেশি ঢালু জমিতে পরিচর্যা করা অসুবিধা ও ভূমিধস এর সম্ভাবনা থাকে।
জমি তৈরি: পাহাড়ের ঢালে আনারসের চাষ করার জন্য কোনক্রমেই জমি চাষ দিয়ে বা কোদাল দিয়ে কুপিয়ে আলগা করা উচিত নয়। এতে ভূমিক্ষয়ের মাধ্যমে উর্বর মাটি ধুয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শুধু পাহাড়ের জঙ্গল বা আগাছা মাটির স্তরে কেটে পরিষ্কার করে জমি চারা রোপণের উপযোগী করে তুলতে হবে।
চারা নির্বাচন ও তৈরি: আনারস গাছে সাধারণত পাঁচ ধরনের চারা উৎপন্ন হয়ে থাকে – পার্শ চারা, বোঁটার চারা, মুকুট চারা, গোড়ার চারা বা ট্যাম্প। সব ধরনের চারাই রোপণ করা যায়, তবে পার্শ্ব চারা ও গোড়ার চারাই উত্তম।
রোপণ পদ্দতি: পাহাড়ের ঢালে আনারস চাষের জন্য কন্টুর পদ্ধতি বা সমউচ্চতা বরাবর ঢালের বিপরীতে আড়াআড়ি ভাবে জোড়া সারি করে চারা রোপণ করা হয়ে থাকে। কখনো ঢাল বরাবর সারিতে চারা রোপণ করা উচিত নয়। এতে ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পায়। পাহাড়ের ঢালে জোড়া সারিতে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪০ সে: মি: ও চারা থেকে চারার দূরত্ব ২০-২৫ সে: মি: দেয়া উচিত। এতে হেক্টরপ্রতি ৫০ হাজার বা কানি প্রতি (৪০ শতাংশ) ৮ হাজার চারা প্রয়োজন। নির্ধারিত স্থানে চারা রোপণের পর গোড়া ভালোভাবে চেপে দেয়া উচিত।
পরিচর্যা :
আগাছা দমন : পাহাড়ের ঢালে আগাছা বেশি হয় বলে আগাছা বেড়ে উঠার আগেই দমন করা উচিত। জোড়া সারির মাঝখানে আস্তরণ দিয়ে আগাছা দমন করা সহজ হয়। এছাড়া আস্তরণ ব্যবহার করলে আরো যে উপকার পাওয়া যায় তা হলো-
১। মাটির ক্ষয় কম হয়।
২। শুকনো মৌসুমে মাটিতে আর্দ্রতা সংরক্ষণ হয়।
৩। পচে জৈব সার যুক্ত হয় ফলে উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।
সার প্রয়োগ : চারা রোপণের দুই মাস পর গাছ প্রতি ইউরিয়া ও টিএসপি সার ১০ গ্রাম করে গাছের গোড়া থেকে ১৫ সে: মি: দূরে ডিবলিং পদ্ধতিতে/পেগিং পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে হবে। একই ভাবে গাছের বয়স যখন ৭-৮ মাস হবে তখন আর এক বার একই মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হয়।
আনারস গাছে ফুল ধরা নিয়ন্ত্রণ : বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সাধারণত চারা রোপণের ১৫-১৬ মাস পর আনারস গাছে ফুল আসে ও ফুল আসার ৪-৫ মাস পর ফল পাকে। সাধারণত জুন-জুলাই মাস আনারসের ফল পাকার সময়। অমৌসুমে ফল পাওয়ার জন্য হরমোন প্রয়োগ করে ফুল-ফল ধরা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ইথ্রেল বা ক্যালসিয়াম কার্বাইড প্রধানত হরমোন হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ৫০০ পি পি এম ঘনত্বের দ্রবণ গাছপ্রতি ৫০ মি: লি: পরিমাণ গাছের বয়স ৮-১১ মাস বা ৩০-৪০টি পাতা হলে গাছের মাথায় চুঈীর মধ্যে ঢেলে দিতে হবে। বৃষ্টির সময় হরমোন প্রয়োগ না করাই ভালো।
ফার্মসএন্ডফার্মার/৩০এপ্রিল২০