যে কোনো মিষ্টি খাবারে মধ্যে স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী হলো কিসমিস। আঙুর ফলের শুকনা রূপই মূলত কিসমিস । তাই কিসমিসকে বলা হয় শুকনো ফলের রাজা।
সোনালী-বাদামী রংয়ের চুপসানো ভাঁজ হওয়া ফলটি সবাই কমবেশি পছন্দ করেন।
বাজার থেকে কিনে আনা কিসমিস কতোটা স্বাস্থ্যকর সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। তাই ঘরেই খুব সহজে তৈরি করে নিন কিসমিস। জেনে নিন পদ্ধতি-
উপকরণ: আঙ্গুর বড় লম্বা আকৃতির ১ কেজি, পানি পর্যাপ্ত পরিমাণ।
প্রনালী: চুলোয় প্যান বসিয়ে পানি ফুটিয়ে নিন। এবার আঙ্গুরগুলো পানিতে দিয়ে সেদ্ধ করুন। আঙ্গুরগুলো পানির ওপরে উঠে আসলে এবং একপাশে ফেটে গেলে বুঝতে হবে আঙ্গুর সেদ্ধ হয়ে গেছে। নামিয়ে পানি ঝড়িয়ে রাখুন।
একটি ঝাঁঝরিতে সুতি কাপড় দিয়ে তার ওপর আঙ্গুরগুলো বিছিয়ে রোদে দিন। টানা ২ থেকে ৩ দিন রোদে দিন। শুকিয়ে গেলেই তৈরি হয়ে যাবে স্বাস্থ্যকর কিসমিস। কাঁচের বোয়ামে সংরক্ষণ করুন।
কিসমিসের উপকারিতা
প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসে রয়েছে- ২৯৯ কিলোক্যালরি শক্তি, কার্বোহাইড্রেট ৭৯.১৮ গ্রাম, প্রোটিন ৩.০৭ গ্রাম, ফ্যাট ০.৪৬ গ্রাম, খাদ্যআঁশ ৩.০৭ গ্রাম, ফোলেট ৫ মাইক্রোগ্রাম, নিয়াসিন ০.৭৬৬ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৭৪৯ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১.৮৮ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ২৯৯ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১০১ মিলিগ্রাম।
কিসমিস রক্তে শর্করার মাত্রায় ঝামেলা তৈরি করে না। এটি খেলে শরীরে রক্ত দ্রুত বৃদ্ধি পায়, পিত্ত ও বায়ুর সমস্যা দূর হয়। এটি হৃদপিণ্ডের জন্যও অনেক উপকারি। এবার বিস্তারিতভাবে জেনে নেই কিসমিসের উপকারিতা সম্পর্কে-
দ্রুত দেহে শক্তি যোগায়
দেহে শক্তি সরবরাহ করতে কিসমিসের অবদান অনেক বেশি। কিসমিসে রয়েছে চিনি, গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ, যা তাৎক্ষণিকভাবে দেহে এনার্জি সরবরাহ করে থাকে। তাই দুর্বলতা দূরীকরণে কিসমিসের কোন জুড়ি নেই।
রক্তশূন্যতা দূর করে
কিসমিসে আছে প্রচুর পরিমাণে লৌহ উপাদান। যা রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। রক্তশূন্যতার কারণে অবসাদ, শারীরিক দুর্বলতা বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যতে পারে এমনকি, বিষণ্ণতাও দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে কিসমিস যথেষ্ট উপকারী।
হজমে সাহায্য করে
কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা দেহের পরিপাকক্রিয়া দ্রুত হতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।
হাড়ের সুরক্ষা দেয়
এই শুকনো ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। যা হাড় মজবুত করতে বেশ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস হাড়ের ক্ষয় এবং বাতের ব্যথা থেকে দূরে রাখবে। তাছাড়া কিসমিসে আছে প্রচুর পরিমাণ বোরন, যা অস্টিওপরোসিস রোগের প্রতিরোধক।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
কিসমিসে থাকা পটাশিয়াম রক্তের চাপ কমাতে সাহায্য করে। শরীরে থাকা উচ্চমাত্রার সোডিয়াম, রক্তচাপ বাড়ার প্রধান কারণ। কিসমিস শরীরের সোডিয়াম মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
চোখের জন্য উপকারি
কিসমিস চোখের জন্য যথেষ্ট উপকারি। এতে আছে প্রচুর পরিমাণ এন্টি-অক্সিডেন্ট, যা অন্ধত্ব প্রতিরোধ করে। তাছাড়া কিসমিস খেলে সহজে শরীরে বয়সের ছাপ পড়ে না। দৃষ্টি শক্তি হ্রাস ও চোখে ছানি পড়া থেকে দূরে রাখে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে করে
খাবারে প্রচুর পরিমাণ আঁশ থাকলে কোলোরেক্টারাল ক্যান্সার ঝুঁকি কমে যায়। এক টেবিল চামচ কিসমিসে ১ গ্রাম পরিমাণ আঁশ থাকে। কিসমিসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের কোষগুলোকে ফ্রি র্যাডিক্যাল ড্যামেজের হাত থেকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সারের কোষ উৎপন্ন হওয়ায় বাধা প্রদান করে।
এসিডিটি কমাতে সহায়তা করে
রক্তে অধিক মাত্রায় এসিডিটি (অম্লতা) বা টক্সিসিটি (বিষ উপাদান) থাকলে তাকে বলা হয় এসিডোসিস। এসিডোসিসের (রক্তে অম্লাধিক্য) কারণে বাত, চর্মরোগ, হৃদরোগ ও ক্যান্সার হতে পারে। কিসমিস রক্তের এসিডিটি কমায়।
কোলেস্ট্রোরেল হ্রাস করে
কিসমিসে কোন কোলেস্ট্রোরেল থাকে না এমনকি এতে আছে এন্টি-কোলোস্ট্রোরেল উপাদান। যা রক্তের খারাপ কোলোস্ট্রোরেলকে হ্রাস করতে সাহায্য করে। এছাড়া কিসমিসের দ্রবণীয় ফাইবার, যা লিভার থেকে কোলোস্ট্রোরেল দূর করতে সাহায্য করে।
ইনফেকশনের ঝুঁকি কমায়
কিসমিসের মধ্যে রয়েছে পলিফেনলস এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফেমেটরি উপাদান। যা কাঁটা-ছেড়া বা ক্ষত হতে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি অধিকাংশে কমিয়ে দেয়।
ওজন বাড়াতে সাহায্য করে
কিসমিসে প্রচুর ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ থাকে। তাই এটি ওজন বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যদি সঠিক নিয়মে ওজন বাড়াতে চান তবে আজই কিসমিস খেতে পারেন।
এছাড়া কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। যা দাঁত মজবুত করতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এতে রয়েছে প্রচুর আয়রন যা মানুষের অনিদ্রার সমস্যা দূর করতে সহায়ক। কিসমিসে থাকা বোরন মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারি, এই শুকনো ফলটি খেলে কাজে মনোযোগ বাড়ে। তাই খাদ্য তালিকায় আজই কিসমিস যোগ করুন।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৭এপ্রিল২০