মরিচ আমাদের দেশে পারিবারিক সামাজিক কার্যক্রমের একটি আবশ্যকীয় অংশ। খাওয়া রুচি স্বাদ ইতিহাস ঐতিহ্য এ সব মিলিয়ে মরিচের আবশ্যকীয়তা অনন্য তুলনাহীন। বাংলাদেশীদের তরকারি রান্না, ঝাল মুড়ি, ভত্তায় মরিচ থাকবে না এটা কল্পনাও করা যায় না। তাছাড়া পান্তাভাত আর কাচা মরিচ চিরদিনের ঐতিহ্যের গ্রামীণ সাধারণ মানুষের খাওয়ার এক সমন্বিত প্রচলিত আইটেম। আমাদের দেশে মরিচ সাধারণত পাকার পর শুকিয়ে মচমচে করে ঢেঁকিতে বা মেশিনে গুঁড়া করে তরকারি রান্না ভত্তার সাথে খাওয়া হয়। কাঁচা অবস্থা কাঁচা মরিচ খাওয়া হয়।
বিভিন্ন জাতের উপজাতের মরিচ আছে দেশে। এখানে যে মরিচের বিশ্লেষণ দেবো তাহলো বিশেষ ঐতিহ্যবাহী মরিচ। এর আছে বিভিন্ন নাম। নাগা মরিচ, বোম্বাই মরিচ, কামরাঙা মরিচ, ভুত মরিচ, রাজা মরিচ, নাগাহরি, সাপের বিষ মরিচসহ আরো কত নাম। তবে প্রধান নাম নাগা মরিচই। এ নামেই বিশ্ব মাতোয়ারা।
দেশে মোটামুটি সব এলাকায় এ মরিচের গাছ দেখা যায়। অনেকে পারিবারিকভাবে সখ করে ২/১টি গাছ লাগান। তবে বাণিজ্যিক বা লাভ জনকভাবে নাগা মরিচের চাষ হয় বৃহত্তর সিলেটে। সিলেটে সাতকড়ার মতো নাগা মরিচও বেশ উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় এবং আবশ্যকীয় একটি উপকরণ।
সবচেয়ে বড় কথা নাগা মরিচ লিখে ইন্টারনেটে চার্জ করলে অনেকগুলো সাইট পাওয়া যাবে। আরো বেশি গর্বের কথা যেখানে নাগা মরিচের কথা লিখা আছে সেখানে বাংলাদেশ শব্দটি আছে। কেননা বাংলাদেশের নাগা মরিচ লন্ডন আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্য হয়ে এখন সারা বিশ্বের সম্পদ হয়ে গেছে। এর পুরো সুনাম সম্মান সিলেটি মানুষদের।
কেননা তারা এটিকে গ্লোবালাইজেশনে এককভাবে সহায়তা করেছে। নাগা মরিচের পেটেন্ট নিয়ে নিজেদের কাজ করার এখনই আসল সময়। তানা হলে আবার কে কখন আমাদের নাগা মরিচের আসল মালিক হয়ে যাবে।
পুষ্টিমূল্য:
শুকনো মরিচে আমিষ, প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘সি’ থাকে।
ভেষজ গুণঃ
নিয়মিতভাবে কাঁচা মরিচ খেলে মুখে ‘ঘা’ হয় না।
ব্যবহারঃ
রান্না-বান্না ও মুখরোচক খাবার তৈরি ছাড়াও মরিচ বিভিন্ন ধরনের আচার তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয়। অনেকে মরিচের আচারও করে থাকেন।
উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ
প্রচুর আলো-বাতাস এবং পানি, সেচ ও নিকাশের ব্যবস্থা আছে এমন দো-আঁশ মাটি মরিচ চাষের জন্য উপযোগী।
জাত পরিচিতিঃ
ঝাল ও মিষ্টি এ ধরনের মরিচ দেখা যায়। ঝাল মরিচের মধ্যে বগুড়া, চাঁদপুরী, ফরিদপুরী উল্লেখযোগ্য। এছাড়া কামরাংগা, আকালী ও কালো মরিচ খুব ঝাল।
চারা তৈরিঃ
জমি ভালভাবে চাষ ও ও মই দিয়ে ও আগাছা বাছাই করে ৩Í১ মিটার আকারের বীজতলা করে সেখানে বীজ বপন করা হয়। শীতকালের জন্য ভাদ্র-আশ্বিণ মাসে ও বর্ষা মৌসুমের জন্য ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বীজতলায় বীজ বপন করা হয়। চারা ১০ সে.মি. উঁচু হলে রোপণের উপযোগী হয়।
চারা রোপণঃ
আগাছা পরিষ্কার করে ৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্তুতির পর চারা রোপণ করা হয়। চারা রোপণে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০-৭০ সে.মি. ও চারা থেকে চারার দূরত্ব ৩০-৪০ সে.মি. রাখা হয়। চারা বিকেলে লাগাতে হবে এবং ২-৩ দিন সকাল বিকাল পানি দিতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
মরিচের জমিতে প্রতি হেক্টরে গোবর ১০ টন, ইউরিয়া ২৫০ কেজি, টিএসপি ২০০ কেজি এবং এমওপি সার ১৫০ কেজি প্রয়োগ করা হয়। জমি তৈরির সময় সমুদয় গোবর, টিএসপি ও ৫০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা হয়। চারা রোপণের ২৫ দিন পর ৮৪ কেজি ইউরিয়া ও ৩৪ কেজি এমওপি সার প্রথম উপরি প্রয়োগ করা হয়। লাগানোর ৫০ দিন পর ২য় ও ৭০ দিন পর তৃতীয় কিস্তির উপরি সার প্রয়োগ করা হয়। ২য় ও ৩য় কিস্তির প্রতিবারে ৮৩ কেজি ইউরিয়া ও ৩৩ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা হয়।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ
জমিতে রসের অভাব হলে সেচ দিতে হবে ও পানি নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আগাছা দেখা দিলে তা পরিষ্কার করতে হবে এবং উপরি সার প্রয়োগের সময় কোদাল দিয়ে কুপিয়ে আলগা করে দিতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
ফুল আসার পর ১৫-২০ দিনের মধ্যে কাঁচা মরিচ তোলা হয়। তবে মরিচের রং লাল হলে তুলে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন কাঁচা ১০-১১ টন ও শুকনো ১.৫-২.০ টন।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৭এপ্রিল২০