বর্তমানে পোলট্রি শিল্প বেশ লাভজনক একটা ব্যবসা। গ্রাম থেকে শুরু করে শহরের কেন্দ্রস্থল কোথাও থেমে নেই এই ব্যবসা। বাড়ির ছাদেও গড়ে উঠছে এ শিল্প। যা থেকে পূরণ হচ্ছে দেশের পুষ্টি, বিশেষ করে আমিষের চাহিদা। পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে বেকারত্বের এক বিরাট অংশ। আসুন জেনে নেই কিভাবে লিটার পদ্ধতিতে মুরগি পালন করতে হয়-
লিটার-ডিপ লিটারের ঘর :
ঘরটি হতে হবে বেশ খোলামেলা। ঘর অবশ্যই পূর্ব-পশ্চিম দিক লম্বালম্বি করে তৈরি করতে হবে; যেন সূর্যের কিরণ সরাসরি মুরগির ঘরে প্রবেশ করতে না পারে। পাশাপাশি বাতাস ঘরের এক পাশ দিয়ে ঢুকে অপর পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। ঘরে মেঝে পাকা হলে ভালো হয়। পরিমিত আলো বাতাস পাওয়ার জন্য ২ থেকে ২.৫ ফুট পাকা দেয়াল কিংবা বাঁশ দিয়ে বেড়া তৈরির করে এর ওপর ২.৫ থেকে ৩ ফুট বাঁশের চটি দিয়ে জালের মতো বেড়া দিতে হবে। মেঝেতে প্রতিটি ব্রয়লারের জন্য জায়গা প্রয়োজন শীতকালে ১ বর্গফুট গ্রীষ্মে দেড় বর্গফুট এবং লেয়ারের জন্য উভয় ঋতুতে ২ বর্গফুট করে। তবে মুরগির বয়স ও আকার ভেদে জায়গার পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। ঘরে মুরগি দেয়ার ৩ থেকে ৪ দিন আগে লিটার সাজাতে হয়। ঘর শুকিয়ে লিটারের জন্য ২ ইঞ্চি এবং ডিপ লিটার হলে ৬ ইঞ্চি পুরু করে উপকরণগেুলো বিছাতে হবে।
খাদ্য সরবরাহ :
স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য মুরগিকে দৈনিক দুইবার বিশুদ্ধ পানিসহ পুষ্টিকর খাবার দেয়া প্রয়োজন। প্রতি ২৫টি মুরগির ক্ষেত্রে একটি করে গোলাকার খাবার পাত্র এবং ৫০টি মুরগির জন্য একটি গোলাকার পানির পাত্র দরকার। ডিম পাড়া মুরগির বেলায় যে পরিমাণ খাবার প্রযোজ্য তা হচ্ছে ১৬ শতাংশ আমিষ, ৮ শতাংশ আঁশ, ৭ শতাংশ ঝিনুক চূর্ণ, ২ হাজার ৮০০ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি ও পরিমাণমতো ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার।
আলো-তাপ ব্যবস্থাপনা : মুরগি পালনে কৃত্রিম আলো গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চার জন্য ৪ থেকে ৫ মাস পর্যন্ত তাপের ব্যবস্থা করতে হয়। তাপের পরিমাণ বাচ্চার বয়সের ওপর নির্ভর করে। বয়স যতো বাড়বে তাপের পরিমাণ ততো কমবে। ডিমপাড়া মুরগির জন্য ঘরে দৈনিক ১৬ ঘণ্টা করে আলো প্রয়োজন। আলো এমন করে ঝুলাতে নেই যেন বাতাসে দোলে। কারণ এতে মুরগি ভয় পেতে পারে। হলুদ কিংবা লাল আলোতে ডিম উৎপাদন বেশি হয়। ঘরে কখনই উজ্জ্বল আলো দেয়া যাবে না। এতে পরস্পরের মধ্যে ঠোকাঠুকির অভ্যাস জন্মাতে পারে।
পরিচর্যা :
মুরগির ঘরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা বাধ্যতামূলক। সেই সাথে সব সরঞ্জাম রাখতে হবে জীবাণুমুক্ত। লিটারকে শুকনো রাখতে প্রতিদিন একবার করে উপরের মলমূত্র নড়াচড়া করতে হবে। ডিপ লিটারে সপ্তাহে একবার কাঠ দিয়ে খুঁচিয়ে উল্টেপাল্টে দিলে বর্জ্যগুলো মিশে যাবে। মাঝে মধ্যে চুন ব্যবহার করলে ভালো হয়। লিটার যাতে স্যাঁতসেঁতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা বাঞ্ছনীয়।
রোগবালাই প্রতিরোধ :
মোরগ-মুরগি রোগাক্রান্ত হলে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব। তাই প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া উত্তম। নির্দিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া ঘরে প্রবেশ করা ঠিক নয়। যারা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত তারাই কেবল জীবাণুমুক্ত হয়ে মুরগির ঘরে প্রবেশ করবে। রোগ-জীবাণু ছড়ায় এমন প্রাণী বিশেষ করে কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, ইঁদুর এরা যেন খামারে ঢুকতে না পারে সেদিক অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। সেই সাথে রোগ হওয়ার আগেই নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে। প্রতিদিন পর্যবেক্ষণের সময় কোনো মুরগি যদি অসুস্থ হয়ে যায় তাহলে দেরি না করে প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মুরগি মারা গেলে অবশ্যই মাটিতে পুঁতে ফেলা কিংবা আগুনে পুড়িয়ে ফেলা উচিত। অসুস্থ মুরগিকে দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে হবে।
পালন সুবিধা :
লিটারে মুরগি পালনে সুবিধা অনেক। মুরগির পায়খানার সঙ্গে মিশ্রিত মূত্র লিটারে শুষে নেয়। ফলে ঘর থাকে শুকনো এবং দুর্গন্ধমুক্ত। এতে মুরগি আরাম অনুভব করে। শীতকালে শীত থেকে রক্ষা করে এবং গ্রীষ্মেও পায় স্বস্তি। এছাড়া মাছির উপদ্রব কম হয়। খাঁচায় পালন পদ্ধতিতে তারের সঙ্গে অনবরত ঘর্ষণের ফলে মুরগির পায়ের নিচে ফুলে যায় এবং পরে ক্ষত সৃষ্টি করে। কিন্তু লিটার পদ্ধতিতে এ রকম হওয়ার আশঙ্কা নেই। ডিপ লিটার প্রতিদিন পরিষ্কারের প্রয়োজন হয় না। লিটার প্রক্রিয়াজাত করে হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর খাদ্য তৈরি করা যায়। অকেজো ডিপ লিটার দিয়ে জমির জৈবসার এবং মাছের খাদ্য তৈরি হয়। মুরগির ঘরের মধ্যে লিটার ব্যবহার করলে এক ধরনের পোকা, ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হয়। লিটারের কার্যকারিতায় এসব মারা যায় এবং পুনরায় জন্মে। এভাবে লিটারে আমিষের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। মুরগি পা দিয়ে লিটার আঁচড়ায়, উল্টেপাল্টে গোসল করে এবং লিটারে জন্মানো খাদ্য কুঁড়িয়ে খায়। এতে মুরগির স্বাস্থ্য থাকে ভালো। আবদ্ধ অবস্থায় মুরগি পালনে লিটার পদ্ধতি শ্রেয়। এতে একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ পড়ে কম, অন্যদিকে এসব উপকরণ পাওয়া যায় হাতের কাছে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৮জানু২০২০