জেনে নিন প্রোটিনের উপকার

670

protin

প্রোটিন যে অনেক প্রয়োজনীয় তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। নিচে প্রোটিন গ্রহণের বিশেষ কয়েকটি উপকার সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো –
মাংশ পেশির সঠিক গড়নের জন্য:
উঠতি বয়সে শরীর গঠনের জন্য বাড়তি প্রোটিনের প্রয়োজন হয়। এছাড়া যারা শরীর গঠন করতে চান, তাঁদেরও বাড়তি প্রোটিন গ্রহন করতে হবে। মাংশপেশির গঠন সুদূঢ় করার পাশাপাশি টেন্ডন, লিগামেন্ট ও শরীরের অন্যান্য টিস্যুকেও শক্তিশালী করে প্রোটিন। যদি খাবারের মধ্যে যথেষ্ট অ্যামাইনো এসিড শরীর না পায়, তাহলে মাংশপেশি শুকিয়ে আসে। যারা ব্যায়াম করেন, তাদের জন্য নিয়মিত বাড়তি প্রোটিন গ্রহন করা দরকার।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে:
বহু গবেষণায় দেখা গেছে, কার্বোহাইড্রেট কমিয়ে প্রোটিনের ওপর নির্ভরশীল হলে ওজন কমে স্বাভাবিক হয়। বিশেষ করে শরীরে আগে থেকে জমে থাকা চর্বির পরিমাণ অনেক কমে আসে। এর কারণ প্রোটিন খেলে অতিভোজনপ্রবনতা কমে। সহজে ক্ষুধা লাগে না বলে যখন-তখন ফাস্টফুড খাওয়ার প্রবণতা কমে আসে। তবে কেউ যদি বাড়তি ওজন কমাতে চান , তাহলে তার শুধু প্রোটিন না খেয়ে সঙ্গে শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামও করা উচিত। তাহলে শরীরের ওজনও কমবে, শরীর সুগঠিত হবে। প্রোটিন খেলে শরীরে থার্মোজেনেসিস হয়। এতে হজম করতেই শরীরকে বাড়তি শক্তি ব্যয় করতে হয়। ফলে শরীরে সহজে চর্বি বা ফ্যাট জমে না।
রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে:
কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, প্রোটিন-সব মেটাবলিজমের জন্যই ইনসুলিন হরমোন প্রয়োজন হয়। কিন্তু কার্বোহাইড্রেট মেটাবলিজমের জন্য বেশি ইনসুলিন লাগে। ফলে অগ্ন্যাশয়কে বেশি কাজ করতে হয়। তাই প্রোটিন খেলে রক্তে চিনির মাত্রা খুব বেশি বাড়তে পারে না। এতে খাওয়ার পরপর খাদ্য থেকে চিনি তৈরি হতে পারে না বলে বেশি চিনি রক্তে মিশতেও পারে না। তাই কার্বোহাইড্রেট যেখানে রক্তে চিনির মাত্রা ওঠাতে-নামাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, সেখানে প্রোটিন চিনির মাত্রা স্থিতি অবস্থায় রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত প্রোটিন খেলে টাইপ টু ডায়াবেটিস কম হয়।

 

মেজাজ ঠিক রাখতে:
প্রোটিন থেকে পাওয়া বিশেষ কিছু অ্যামাইনো এসিড শরীরের বিভিন্ন ধরনের হরমোন লেভেলের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে। ফলে বিষন্নতা, উদ্বিগ্নতাসহ যেসব রোগে হঠাৎ হঠাৎ মেজাজ পরিবর্তনের ঘটনা দেখা যায়, প্রোটিন গ্রহণ করলে তা কমে আসে। প্রোটিনের কারণে স্নায়ুর নিউরোট্রান্সমিটারের কার্যকারিতা ঠিক থাকে, ডোপামিন ও সেরোটোনিনের মতো হরমোনের সিনথেসিস বাড়ে। জানেন তো, ডোপামিন ও সেরোটোনিন মেজাজ ফুরফুরে রাখতে সহায়তা করে। ব্যায়াম করলেও কিন্তু শরীরে এই হরমোন নিঃসরণ বাড়ে, তখনো মেজাজ ভালো হয়।
মস্তিষ্কের সঠিক গঠন ও শেখার ক্ষমতা বাড়াতে:
প্রোটিন শুধু হরমোন নিঃসরণে নয়, এনজাইম তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখে। মস্তিষ্কের সঠিক গঠন ও কার্যকারিতার জন্য অ্যামাইনো এসিড সবচেয়ে জরুরি, যা আসে প্রোটিন থেকে। সঠিক মাত্রায় সব ধরনের অ্যামাইনো এসিডের ঘাটতি হলে মনোযোগের ঘাটতি দেখা যায়। নতুন কিছু মনে রাখা কঠিন হয়। তাই শিশু কিশোরসহ যারা লেখাপড়া ও গবেষণায় যুক্ত, তাদের অবশ্যই নিয়মিত প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে।
হাড় মজবুত করতে:
প্রোটিন যে হাড় মজবুত করে তা অনেক গবেষণায় দেখা গেছে। হাড়ের সঠিক গঠনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম আর ম্যাগনেসিয়াম, তা এই প্রোটিন থেকেই আসে। যখন কোনো কারনে হাড় ভাঙ্গে বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তখন বাড়তি প্রোটিন গ্রহণ করতে হয় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে। অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয়রোগ প্রতিরোধেও প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করে।
হার্ট ভালো রাখতে:
অনেকের ধারণা বেশি প্রোটিন খেলে হার্টের অসুখ বেশি হয়। অথচ বাস্তবে ঘটে উল্টোটা। নিয়মিত প্রোটিন খেলে হার্টের রোগ কম হয়। এমনকি যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের রক্তচাপ কমাতেও প্রোটিন কাজ করে। যদি কার্বোহাইড্রেটের পরিবর্তে প্রোটিন গ্রহণ করা হয়, তাহলে এলডিএল বা ক্ষতিকর কোলেস্টেরেলর মাত্রা কমে আসে। তবে প্রোটিন গ্রহনের সময় কিছুটা সতর্ক থাকতে হবে। প্রোটিনের সাথে থাকা চর্বি অবশ্যই বাদ দিতে হবে।
বয়সীভাব কমাতে:
প্রোটিন গ্রহণ করলে শরীরে গ্লুটাথিয়ন সিনথেসিস বাড়ে। এতে শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর পদার্থ সহজে ধ্বংস হয়।এ কারণে সহজে বয়সের ছাপ পড়ে না। গ্লুটাথিয়ন কমে গেলে বয়সজনিত অসুখ যেমন-আলঝেইমার, পারকিনসন্স, লিভারের অসুখ, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, সিকল সেল অ্যানিমিয়া, ক্যান্সার, ভাইরাস ইনফেকশনের প্রবণতা বাড়ে।