জৈবসার ব্যবহারে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়, এতে ফলন বাড়ে। আজ এর নানা দিক তুলে ধরা হলো
উপকারী প্রাকৃতিক ক্ষুদ্র প্রাণীদের একটি কেঁচো।
মাটির জন্য খুবই উপকারী এটি। চাষাবাদের কাজে বেশ উপকারে আসে। ওপরের মাটি নিচে এবং নিচের মাটি ওপরে নেওয়া এর অন্যতম একটি কাজ। এ কাজের কল্যাণে মাটিতে জৈবসার উৎপাদন কিছুটা সহজ হয়। কেঁচোর জৈবসার উৎপন্নের জন্য অবর্জনারও প্রয়োজন পড়ে।জৈবসার প্রস্তুতের জন্য প্রথমে একটি গর্ত তৈরি করতে হবে। এরপর পরিমাণমতো ঘাস, আমপাতা ও গরু-ছাগল বা হাঁস-মুরগির খামারের ফেলে দেওয়া অংশবিশেষ একত্র করে গর্তে ফেলতে হবে। তার আগে গর্তের তলদেশসহ চারপাশ পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে নিতে হবে। এতে গর্তের কেঁচো পিট থেকে বাইরে বের হতে পারবে না। পলিথিন বিছানোর পর সেখানে ১৫ সেন্টিমিটার পুরু বেড বানাতে হবে। এ বেড তৈরির জন্য ভালো মাটি ও গোবর সমপরিমাণে মেশাতে হবে। এ মিশ্রণ কেঁচোর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
জৈবসার তৈরিতে সাধারণত দু’ধরনের কেঁচো ব্যবহৃত হয়। এপিজিক ও এন্ডোজিক কেঁচো। এপিজিক জাত লাল রঙের। এরা মাটির ওপরের স্তরে থাকে। এরা অবশ্য সার উৎপাদন করতে পারে না। তবে মাটির ভৌত ও জৈব গুণাবলির উন্নতি সাধন করে। এন্ডোজিক কেঁচো সাধারণত মাটির নিচে থাকে। এরা জৈবসার তৈরিতে বেশ উপযোগী।এখন গর্তের কথায় আসা যাক। জৈবসার তৈরির জন্য যে গর্ত করা হয়, তাতে আবর্জনা দিয়ে ভরিয়ে নিতে হবে। ভরে গেলে এতে হাজারখানেক কেঁচো ছেড়ে দিতে হবে। পরে গর্তের উপরিভাগ পাটের তৈরি ভেজা চট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। সারের গুণগত মান বজায় রাখার জন্য যেখানে গর্ত করা হবে, সেখানে ছায়ার ব্যবস্থা করা জরুরি।কেঁচোর জৈবসার তৈরিতে খুব কম সময় লাগে। গবেষণায় দেখা গেছে, কেঁচো জৈবসারে এক দশকি ৫৭ শতাংশ নাইট্রোজেন, এক দশমিক ২৬ শতাংশ ফসফরাস, দুই দশমিক ৬০ শতাংশ পটাশ, শূন্য দশমিক ৭৪ শতাংশ সালফার, শূন্য দশমিক ৬৬ শতাংশ ম্যাগনেশিয়াম ও শূন্য দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ বোরন রয়েছে। তাই কেঁচোর তৈরি জৈবসার অন্যান্য জৈবসারের চেয়ে সাত থেকে ১০ গুণ পুষ্টি বেশি থাকে। খেয়াল রাখতে হবে, যে গর্তে কেঁচো রাখা হয়েছে, সেই গর্তের আশেপাশে যেন পিঁপড়া, তেলাপোকা, মুরগি, ইঁদুর প্রভৃতি প্রাণী যেতে না পারে। কারণ এরা কেঁচোর বড় শত্রু। কেঁচো দেখলেই তারা খেয়ে ফেলবে, এতে জৈবসার তৈরিতে বিঘ্ন হবে।
মিলবে অনেক সুবিধা
মাটির প্রাণ জৈবসার। অল্প জমিতে অধিক ফলন পাওয়ার জন্য অবশ্যই মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হবে। আর মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখার পূর্বশর্তই হলো জমিতে জৈবসার ব্যবহার করা।
১. উদ্ভিদের পরিপূর্ণ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন উর্বর জমি। এ উর্বরতা শক্তি ধরে রাখে জৈবসার।
২. জৈবসার গাছের খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখান থেকে উদ্ভিদ তার প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারে# জৈব পদার্থ মাটিতে ব্যাকটেরিয়া তথা অণুজীবের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং গাছের পুষ্টি উপাদান গ্রহণের উপযুক্ত মাটি তৈরিতে সহায়তা করে।
৩. জৈবসারের প্রভাবে উদ্ভিদ নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার ও ক্যালসিয়াম বেশি পারিমাণে পেয়ে থাকে।
৪. রাসায়নিক সারের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে জৈবসার। তাছাড়া পানির ধারণক্ষমতাও বাড়ায়। ফলে গাছ সহজে মাটি থেকে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারে।
৫. বেলে ও দোআঁশ মাটিতে পানি ও সারের অপচয় হ্রাস পায়। এটেল মাটি ঝুরঝুরা করতে সাহায্য করে# জৈবসার গাছের বৃদ্ধিকারক হরমোন সরবরাহ করে। ফলে গাছ দ্রুত বাড়ে।
৬. গরমকালে মাটির তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। শীতকালে গরম রাখতে সাহায্য করে। অর্থাৎ মাটির উত্তাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৭. জমিতে কীটনাশক ওষুধ ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে কোনো বিষক্রিয়া হলে জৈবসার ওই বিষক্রিয়া কমাতে বেশ সাহায্য করে।
৮. জমিতে গাছের অণুখাদ্য উপাদানের উৎস হিসেবে জৈবসারের ভূমিকা রয়েছে। কেননা, জমিতে যদি জৈব পদার্থের পরিমাণ কমে যায়, তাহলে গাছের গৌণ পুষ্টি উপাদানের অভাব দেখা দেয়। তাই এ সারের ভূমিকা অনস্বীকার্যমাটির অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব নিয়ন্ত্রণ করে জৈবসার।