জয়পুরহাটে পোল্ট্রির সম্ভাবনা বাড়ছে, দরকার সঠিক মূল্য নির্ধারণ

580
সোনালি পোল্ট্রি
সোনালি পোল্ট্রি
সোনালি পোল্ট্রি

জয়পুরহাট: বেকার যুবকরা পোল্ট্রি শিল্প নতুনভাবে সম্পৃক্ত হওয়ায় বিভিন্ন পড়ায় পাড়ায় স্থানীয়ভাবে এ শিল্পের ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সৃষ্টি হয়েছে হাজার হাজার কর্মসংস্থান।

বেকার যুবকরা শিল্পে জড়িয়ে পড়ায় জয়পুরহাটে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে পোল্ট্রি খামার। গড়ে উঠেছে হ্যাচারি ও ফিড মিল।

জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্র জানায়, জেলার পাঁচ উপজেলায় আড়াই হাজার রেজিস্টার খামারসহ জেলায় ১০ হাজার ৫শটি ছোট-বড় পোল্ট্রি খামার রয়েছে। এর মধ্যে মাংস উৎপাদনের জন্য ১০ হাজার ১৩০টি খামার ও ডিম উৎপাদনের জন্য ৩৭০ টি সোনালি লেয়ার খামার রয়েছে।

জেলায় মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের জন্য রয়েছে ৪৫টি ছোট বড় হ্যাচারি। ছোট বড় হিসেবে একেকটি খামারে ২ হাজার থেকে শুরু করে ৮০ হাজার পর্যন্ত মুরগি পালন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে সোনালি জাতের মুরগি জেলায় সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। একটি খামারে বছরে চার ব্যাচ করে এই মুরগি পালন করা হয়।

এ ছাড়াও বয়লার ৬/৭ ব্যাচ এবং হাইব্রিড লেয়ার (ডিমের জন্য) সারা বছর পালন করা হয়ে থাকে। একটি হাইব্রিড লেয়ার মুরগি বছরে ৩শটির বেশি ডিম দেয়। ডিম দেওয়া শেষ হলে মাংস হিসাবে বিক্রি করা হয় বাজারে।

জেলার প্রায় ১০ লাখ লোকের ৪৪ হাজার মে. টন মাংসের চাহিদার বেশিরভাগ আসে পোল্ট্রি থেকে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ গাড়ি মুরগি দেশের বিভিন্ন জেলায় বিশেষ করে সিলেট ও চট্রগ্রামে সরবরাহ করা হয়।

জেলায় মাংসের চাহিদা ২৪ হাজার ৯৭৭ মেট্রিক টন। বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ৪৩ হাজার ৮৪০ মেট্রিক টন। এতে উদ্বৃত্ত থাকছে ১৮ হাজার ৮৬৩ মেট্রিক টন মাংস। ১০ কোটি ডিমের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ৪০ কোটি ডিম। উদ্বৃত্ত থাকছে ৩০ কোটি ডিম। এ ছাড়াও ৪০ লাখ ৭৮ হাজার বাচ্চা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ৬৭ লাখ ৯৮ হাজার বাচ্চা। এখানেও ২৭ লাখ ২ হাজার উদ্বৃত্ত থাকছে।

এ জেলায় বর্তমানে সোনালি মুরগি প্রতিপালনের জন্য কাজ করছেন ৭ হাজার উদ্যোক্তা। যার মধ্যে পুরুষ ৪ হাজার ৫৫০ জন ও নারী রয়েছেন ২ হাজার ৪৫০ জন।

জয়পুরহাটে পোল্ট্রি শিল্পের শুরুটা মোটেও আশাব্যঞ্জক ছিল না। পোল্ট্রির ডিম কিংবা ব্রয়লার মুরগির মাংস সাধারণ মানুষ খেতেই চাইতো না। পোল্ট্রি মাংস খেতে সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত তা বুঝাতে উদ্যোক্তাদের অতিথি ডেকে রান্না করা মাংস পরিবেশন করা হতো। বেকার যুব সমাজের মধ্যে আশার আলো জ্বালানো এই পোল্ট্রি শিল্প গড়ে ওঠার পেছনে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে জামালগঞ্জ সরকারি হাঁস মুরগি খামার। স্বল্প পুঁজিতে পোল্ট্রি খামার করে লাভবান হওয়া যায় এমন বিষয়টি ছড়িয়ে দিতে তৎকালীন সহকারী পরিচালক শাহ জামাল স্থানীয় বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ তাদের উদ্বুদ্ধ করেন। এভাবেই উত্তরাঞ্চলের ছোট জেলা জয়পুরহাট আজ পোল্ট্রি শিল্পে দেশের শীর্ষস্থান দখল করেছে।

পোল্ট্রিশিল্প গড়ে ওঠার সঙ্গে বৃদ্ধি পায় বাচ্চার চাহিদা। ফলে জয়পুরহাটে বেসরকারি ভাবে স্থাপন করা হয়েছে ৩৯ টি হ্যাচারি (একদিনের বাচ্চা উৎপাদন কারখানা)। এসব হ্যাচারি থেকে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে একদিনের বাচ্চা উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৪ কোটি। মুরগির খাদ্য চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গড়ে উঠেছে ১১টি ফিড মিল। প্রতি মাসে এ ফিড মিলগুলোতে উৎপাদন হয় প্রায় ১৪ হাজার মে. টন খাদ্য। যা জেলার চাহিদা শেষে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে সরবরাহ করা হয় বলে জানান পল্লী ফিডের মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন।

জেলার জামালগঞ্জ এলাকায় বেসরকারিভাবে গড়ে তোলা শেফালী পোল্ট্রি ফার্মের মালিক সাইফুল ইসলাম আলম ৬ তলার ৫টি সেড নির্মাণ করে মুরগি পালন করে লাভবান হয়েছেন বলে জানান। এস এস বি পোল্ট্রি ফার্মের মালিক ইসমাইল হোসেন টুকু, পদ্মা ফিডের মালিক আনু মন্ডল পোল্ট্রি শিল্পে ব্যাপক সফলতার কথা জানান।

জয়পুরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি ও কিষাণ পোল্ট্রি হ্যাচারি অ্যান্ড ফিড প্রা. লিমিটেডের মালিক জিয়াউল হক জিয়া জানান, পোল্ট্রি শিল্পে প্রতিষ্ঠিত জয়পুরহাট জেলায় ছোট-বড় প্রায় দশ হাজার খামার, ৩৯টি হ্যাচারি শিল্প এবং ১১টি ফিড মিল গড়ে ওঠেছে। পোল্ট্রি শিল্পকে ঘিরে জেলার গ্রামে-গঞ্জে গড়ে ওঠেছে খাদ্য ও ওষুদের দোকান। এতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর জেলায় ৭ হাজার বেকার যুবকদের পোল্ট্রি বিষয়ক প্রশিক্ষণ এবং ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে। জয়পুরহাটের পোল্ট্রি শিল্পে সরাসরি আড়াই থেকে তিন লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে নারী রয়েছেন ৬০ হাজার। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রায় ৫/৬ লাখ মানুষের জীবন জীবিকা এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল।

জয়পুরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুস সালাম সোনার জানান, বেকার যুবকরা পোল্ট্রি শিল্পে জড়িয়ে পড়ায় এ শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। তবে জেলার পোল্ট্রি খামারিদের জন্য মার্কেট সম্প্রসারণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এছাড়াও মিট প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপন করা দরকার। এতে খামারিরা ন্যায্য মূল্য পাবে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন

নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএস