ঝালকাঠি জেলার নবগ্রাম, গাভারামচন্দ্রপুর, পোনাবালিয়া, বাসন্ডা ও কীর্তিপাশা ইউনিয়নের ৩৬ গ্রামে কাঁদিতে সবজি চাষ করে সবুজ বিপ্লব ঘটিয়েছেন নারীরা। প্রায় ৪ হাজার নারী এ মৌসুমী কৃষি কাজে স্বচ্ছলতা অর্জন করেন। এ বছরও তারা সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে স্বচ্ছলতার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে এসব সবজিকে বলা হয় লতা কৃষি। নারীদের এ পরিশ্রমে সহায়তা করছেন পুরুষরাও।
শীতকালীন সবজি চাষের পাশাপাশি বছরের ১২ মাস উৎপাদিত মৌসুমী সবজি বিক্রি করে জীবন চলে শতশত চাষির। তবে কিছু সড়ক চলাচলের অনুপোযোগী এবং বাঁশের সাঁকো থাকায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন তারা। উৎপাদিত সবজি সরাসরি সড়কপথে নিয়ে যেতে না পারায় বাধ্য হয়ে বাড়িতে বসেই পাইকারদের কাছে কম মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিওর সুদের জালে জড়িয়ে পড়ায় চাষিরা ব্যাংক ঋণ নিতে পারছেন না।
শীতকালীন সবজি লাউ, কুমড়া, জালি, মুলা, শালগম, ফুলকপি, বরবটি, করলা, শিম, আলু, বোম্বাই মরিচ, কচু, পালং ও লালশাকসহ অনেক সবজি এসব গ্রামে চাষ হয়। বিষমুক্ত এসব সবজি চাষ করে লাভবান হওয়ায় ধান আবাদ অনেকটা ছেড়েই দিয়েছেন চাষিরা। কাঁদিতে সবজির পাশাপাশি আখ, আমড়া, পেপে ও পেয়ারার চাষ করেও লাভবান হচ্ছেন তারা।
এ ব্যাপারে নবগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিণ কাফুরকাঠি গ্রামের চাষি দম্পতি রণজিৎ ও সন্ধ্যা রানি বলেন, ‘আমাদের নিজেদের জমি না থাকায় অন্যের জমিতে ফসল ফলাই। বিনিময়ে মালিকের কাছ থেকে পাওয়া পারিশ্রমিক দিয়েই চলছে সংসার।’
তবে কৃষকদের অভিযোগ, চাষিদের জন্য সরকারি বরাদ্দ কৃষি সামগ্রী ও উপকরণ থেকেও বঞ্চিত তারা। এলাকাভিত্তিক চেয়ারম্যান ও মেম্বরদের নেক নজরে থাকা কিছু ব্যক্তিই এসব সুবিধা পেয়ে থাকে।
চাষি সুধীর চন্দ্র বড়াল বলেন, ‘বাৎসরিক লিজ নিয়ে জমিতে সবজি চাষ করছি। এনজিও থেকে সুদে টাকা এনে এ কাজ করায় মুনাফার বেশির ভাগই তারা হাতিয়ে নিয়ে যায়। সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ন্যায্যমূল্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি।’
ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ফজলুল হক মিয়া বলেন, ‘জেলার ৩৬ গ্রামের প্রায় ৪ হাজার নারী এ কৃষি কাজে প্রতিবছর সফল হয়ে থাকেন। তাই এ বছরও তারা সফল হবেন বলে সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। কৃষি বিভাগ থেকে তাদের পরামর্শ এবং সহযোগিতা করা হয়।’