ঝিনাইদহে জমছে কোরবানির পশুহাট, মেডিসিনে মোটাতাজা করার অভিযোগ

310

গরু

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ থেকে: প্রতি বছরের মতো এবারও ঝিনাইদহে পবিত্র ঈদ-উল আজহাকে সামনে রেখে জমে উঠেছে জেলাজুড়ে পশুহাট, বেপারিরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ট্রাকভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছে গরু। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ঝিনাইদহ সদরের পশুহাট, বারবাজার, গান্না, সাধুহাটির বোড়াই নতুন গরুর হাট, শৈলকুপা বাজারে কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেই সাথে সাধারণ ক্রেতাদের ও ভিড় করতে দেখা যাচ্ছে।

কোরবানির ঈদের গরু ও ছাগল কেনাবেচা শুরু হয়েছে। আবার খামারগুলোতে চলছে পশু মোটাতাজাকরণের কাজ। দেশি ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করছেন তারা। অনেক খামারি কোরবানি ঈদে গরু বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা লাভ করার আশা করছেন। মোটাতাজা করার বিষয়ে খামারি বাদে ও গ্রাম এলাকায় অনেকে বাড়তি লাভের আশায় একের অধিক গরু ও ছাগল পালন করে থাকে। তারা বিভিন্ন মেডিসিন খাইয়ে মোটাতাজা করছেন ক্রেতাদের কাছ থেকে ভাল দাম পাবার জন্য।

একেকটি বড় খামারে ৫০ থেকে ১০০টি গরু এবং ছোট খামারে ৫ থেকে ২০টি গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই এসব খামার থেকে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে।

জেলার এসব খামার গুলোতে স্থানীয় জাতের পাশাপাশি মোটাতাজা করা হচ্ছে নেপালি, হরিয়ানা, সিন্ধি, শাহীওয়াল জাতের গরু। মহিদুল ইসলাম খামারি জানায়, গত বছর ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় এক একটি গরু কিনে চার থেকে ছয় মাস লালন পালন করে দুটি দেড় লাখ বিক্রি করেছিলেন। মোটাতাজা করে অনেক ভাল দামে বিক্রি করতে পেরেছিল। এসব গরু মোটাতাজা করতে কোন ওষুধ বা ইঞ্জেকশন দেয়া হয় না।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, খামারগুলোতে নজরদারি রাখা হচ্ছে যাতে করে কেমিক্যালের মাধ্যমে কোরবানির পশু মোটাতাজা করা না হয়।

খামারিদের দাবি, দেশে পর্যাপ্ত পরিমানে কোরবানির পশু রয়েছে। কোরবানি উপলক্ষে ভারত বা অন্য কোন দেশ থেকে যদি পশু আমদানি করা হয় তাহলে হুমকির মুখে পড়বে দেশীয় খামারীরা। এ বছরও সমপরিমাণ কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। চাহিদার অনুপাতে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু মজুদ রয়েছে খামারিদের কাছে। কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা গবাদী পশুগুলোকে ঘাস, খড়, খৈল, ভুষিসহ দেশীয় খাবারের মাধ্যমে হৃষ্টপুষ্ট করা হচ্ছে। অনেকে খামার না করেও নিজ বাড়িতে ২/৪টা গরু লালন পালন করে থাকে এবং বিভিন্ন মোটাতাজা করার ট্যাবলেট খাওয়ায়। এসব ট্যাবলেট খাওয়ালে গরু ফুলে থাকে দেখলে মনে হয় অনেক মাংস হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্রয়ের সময় যে টার্গেট নিয়ে কোরবানি দেওয়া হয় সে পরিমাণ মাংস হয় না।

অবশ্য এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। অনেকে বেশি দাম পাওয়ার আশায় স্থানীয়ভাবে দলগতভাবে ট্রাকে করে গরু নিয়ে ঢাকার গাবতলী বা চট্টগ্রাম নিয়ে বিক্রি করে থাকে। আবার বাইরে থেকে অনেক বেপারি কালীগঞ্জ ও সদরের সাধুহাটির বোড়াই নতুন গরুর হাট এবং গান্না বাজার থেকে তাদের পছন্দমত গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এরা এখন গরু কিনে নিয়ে ঢাকা বা চট্টগ্রাম এলাকায় মজুত করে রেখে বেশি দামে বিক্রি করবে এমন টার্গেট তাদের রয়েছে। বড় বড় বেপারিরা ট্রাক ভর্তি করে গরু নিয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে সাধুহাটি এলাকার চেয়ারম্যান কাজী নাজির উদ্দিন নাজির সাংবাদিকদের জানান, বোড়াই নতুন গরুর হাটে মোটামুটি ঈদের বেচাকেনা বেশ জমতে শুরু করেছে।

ওই এলাকার খামারীরা জানান, কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসবে ততই ঝিনাইদহ এলাকার পশুর হাটগুলোতে গরু কেনাবেচা জমে উঠতে শুরু করবে। তাই গরু মোটাতাজা করতে খামারীদের ব্যস্ত সময় পাড় করতে হচ্ছে। খামারীরা তাদের গরু বিক্রি করতে শুরু করেছে। আবার কেউ কোরবানি ঈদ সামনে করে বিক্রি করবে বেশি দামের আশায়।

কালীগঞ্জের মল্লিকপুর গ্রামের তানভির হাছান ও শ্রীরামপুর গ্রামের ফরিদ উদ্দিন গরু মোটাতাজা করার ফার্ম করে অনেকটা স্বাবলম্বী হয়েছেন। এরা দেশীয় ছোট গরু কিনে বিভিন্ন পদ্ধতি মোটাতাজা করে থাকে।

ক্রেতারা বলছে, এ বছর গরুর দাম এখনই অনেক বেশি। সামনে আর ও বেশি হবে এমন আশঙ্কা করছে। অন্যদিকে গরু মোটাতাজা করার নিষিদ্ধ ওষুধ প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ওষুধের ফার্মেসি থেকে শুরু করে হাট-বাজারে। সহজলভ্য হওয়ার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন অসাধুরা।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওষুধ খাওয়ানো গরুর মাংস খেলে মানুষের শরীরে নানা ধরনের রোগ হয়। এতে কিডনির সমস্যাসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ধরনের ওষুধ খেয়ে গরুগুলো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে মোটাতাজার বিপরীতে অনেক গরুর মৃত্যু হচ্ছে। এতে লাভের তুলনায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনেক খামারি। অনেকে বাংলাদেশি ভিটামিন খাওয়ায়ে মোটাতাজা করছে। আবার কেউ ভারতীয় ওষুধ দিয়ে মোটাতাজা করছে।

এদিকে কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার এলাকায় মাঝদিয়া গ্রামের ঘোষপাড়ায় অনেকেই ৮ থেকে ১০টি গরু মোটাতাজা করছে। তারা এবার কোরবানি ঈদে বিক্রি করবে এমন আশা রয়েছে। কিছু খামারির ধারণা পশু মোটাতাজা করতে সহায়ক হয়। তবে তারা এটির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জানেন না। আবার অনেক খামারি জেনেই এ পন্থা অবলম্বন করছেন। যাতে পশু মোটাতাজা হলে কিছু বাড়তি টাকা পান।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন